Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রানা প্লাজা থেকে শিক্ষণীয় ও বিচারহীনতা

প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. সফিউল আলম প্রধান
বহুল আলোচিত রানা প্লাজা ধসের ঘটনার আজ তিন বছর পূর্তি হলো। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানীর অদূরে সাভারে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। রানা প্লাজা ভবন ধসে নিহত হয় সহ¯্রাধিক শ্রমিক। আহত ও পঙ্গু হয়ে যায় অনেকে। কারও কারও সন্ধান মেলেনি আজও। এ ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্পে শ্রমিকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
তবে কিছু কিছু বিষয় থাকে যার হাজারও খারাপ দিকের মধ্যে দু-একটা ভালো দিক থাকে। যা একটা পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। তেমনি রানা প্লাজা ধসের ঘটনা আমার কাছে মনে হয়েছে এটি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। রানা প্লাজা ধসের পরেই পোশাক কারখানাগুলোতে কর্ম পরিবেশ উন্নয়নের কাজ ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। আইএলও’র সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার কারখানার পরিবেশ উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছে, শ্রমিক অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হয়েছে। কারখানার অবকাঠামোগত সুরক্ষা ও অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপ ও সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে সব কারখানাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। তবেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।
রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনের মতো দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে এটাই হওয়া উচিত সরকারের প্রতিজ্ঞা। এ জন্য কারখানাগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা, কাঠামোগত সুরক্ষা এবং শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো জিএসপি ফিরে পেতেও বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর গত তিন বছরে গার্মেন্ট শিল্পে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, সন্দেহ নেই। তা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক শ্রমমান নিশ্চিতকরণে, বিশেষত শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় এখনো অনেক কিছু করণীয় রয়ে গেছে। কিছু কিছু কারখানায় এখনো নি¤œ মজুরি, যৌন হয়রানি এবং শ্রমিকদের মারধরের ঘটনা ঘটছে। এ জন্য সরকারকে আরো সচেতন হতে হবে।
তবে সবচেয়ে হতাশার ও চরম দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে সাভারের রানা প্লাজা ধসের তিন বছর পূর্ণ হলো, অথচ এই নজিরবিহীন ট্র্যাজেডির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে এখনো বিচার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। দোষীরা শাস্তি পেলে অন্য কারখানার মালিক, সরকারি কর্মকর্তা ও বিদেশি ক্রেতারাও সতর্ক হতেন। রানা প্লাজার ঘটনায় দায়ের করা মামলার ৪১ আসামির মধ্যে ১৮ জন জামিনে আছেন। ১২ জন পলাতক। ভবনের মালিক সোহেল রানাসহ ১১ জন কারাগারে আছেন। জানা গেছে, উপযুক্ত সাক্ষীর অভাবেও নাকি বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
যে সহ¯্রাধিক লোক সেদিন প্রাণ হারিয়েছেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে যারা চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন, তাদের সবার প্রতি এটা বিরাট অবিচার। এমনিতেই বিলম্বিত বিচার ন্যায়বিচার নয়, তদুপরি দীর্ঘ বছরে বিচারকার্য শেষ করতে না পারা মোটেই সহনীয় নয়। সেদিন যেসব শ্রমিক প্রাণ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বলতে চাই, প্রায় গণহত্যার শামিল এই অপরাধের বিচার আর বিলম্বিত হওয়া উচিত নয়।
যে ঘটনায় সহ¯্রাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, তার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ট্র্যাজেডির ব্যাপারে সবাই সতর্ক হয়। রানা প্লাজা ধসের ক্ষতি প্রকৃতপক্ষে অপূরণীয়, এই অপরাধের আইনানুগ প্রতিকারের মাধ্যমে জনমনে এই আস্থা সৃষ্টি করা জরুরি যে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
ষ লেখক : শিক্ষার্থী, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রানা প্লাজা থেকে শিক্ষণীয় ও বিচারহীনতা
আরও পড়ুন