Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উত্তরাধিকার বিধান ইসলামই সেরা

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

কেস স্টাডি : প্রৌঢ় গিয়াসুদ্দীন (ছদ্মনাম)। ঢাকায় থাকেন। ঢাকায় বাড়ির মালিক। পরিণত বয়সে স্ত্রীর নামে নিজের বাড়িটি লিখে দিয়েছেন। স্ত্রীর প্রতি অধিক ভালোবাসার কারণে অন্য ওয়ারিসদের (সন্তানদের) না দিয়ে স্ত্রীকে বাড়িটি লিখে দিয়েছেন। তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করেছে। কিন্তু এরই মধ্যে ঘটে গেছে উল্টো ঘটনা। স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামী তালাক দিয়েছে বলে দাবি করে বিচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বামী বেচারা পেরেশান। সে তার যুবক ছেলেকে সাক্ষী হিসেবে এনে হাজির করে বলছে, তালাক হওয়ার মতো কিছুই তিনি বলেননি এবং করেনওনি। তার স্ত্রীর নাকি মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওই লোকের ছেলেও একই রকম কথা বলছে। অর্থাৎ যে স্ত্রীর নামে তিনি বাড়ি লিখে দিয়েছেন, সেই স্ত্রীই এবার তার সংসার ভেঙে ফেলতে উদ্যোগ নিয়েছেন।
কেস স্টাডি : পশ্চিমা সমাজে বাস করেন এক বাংলাদেশি মুসলিম দম্পতি। সেখানে দম্পতির স্ত্রীর বিচরণ অত্যন্ত অবাধ। তার দিনরাত, চলাফেরা ও বন্ধু-বান্ধবের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। কোনো জবাবদিহিতা ও কৈফিয়ত নেয়ারও সুযোগ নেই। স্বামী বেচারা যে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করবেন সেই উপায়ও নেই। কারণ ওই দেশের আইন হচ্ছে, স্বামী স্ত্রীকে ডিভোর্স দিলে তার সমুদয় সম্পত্তির অর্ধেক স্ত্রীকে দিয়ে দিতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক আইন।
শোনা গেছে, কোনো কোনো পরিবারে এখন উল্টো ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। সেখানে কোনো ছুতো কিংবা ছিদ্র ধরেই স্ত্রীর উদ্যোগে ডিভোর্সের মামলা করা হচ্ছে। এবং এভাবেই সংসার ভেঙে দেয়া হচ্ছে। সংসার ভাঙার ফল হিসেবে ডিভোর্সপ্রাপ্ত স্ত্রী একসঙ্গে স্বামীর অর্জিত সম্পত্তির অর্ধেকের মালিক হয়ে যাচ্ছে। পরে সে স্বাধীন জীবন যাপন করছে। অথবা অন্য কোনো পছন্দের মানুষের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে।
এখানে কয়েকটি কেস স্টাডি উল্লেখ করা হলো। এগুলো সবই ইফরাত-তাফরিত কিংবা শরিয়তের মীরাসনীতি অনুসরণের পরিবর্তে বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ির পন্থা অনুসরণের উদাহরণ। আর এ কারণেই বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয়ের পথ তৈরি হয়েছে। মীরাসের ব্যাপারে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক জোরালো ও দৃঢ়। অনেক বিশ্লেষিত ও সুষম। কুরআনে কারিমে কোনো বিধি-বিধানের আলোচনা এলে সাধারণত দেখা যায়, সেখানে কিছু জরুরি মূল নীতির উল্লেখ থাকে। তাফসির বা বিশ্লেষণ থাকে না। কিন্তু ফারায়েজের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে কুরআনের বর্ণনাভঙ্গি অন্যরকম। সেখানে শুধু ফারায়েযের মূল নীতি কিংবা ইজমালি মাসয়ালা উল্লেখ করে সমাপ্ত করা হয়নি, বরং খুঁটিনাটি প্রতিটি প্রসঙ্গসহ অত্যন্ত বিশ্লেষণের সঙ্গে ফারায়েজের মাসয়ালা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রশ্ন হতে পারে, এর পেছনে কী হেকমত রয়েছে? এর উত্তরে যে কথাটি বলা যায় তা হচ্ছে, একটি পরিবারে সাধারণত যেসকল বিষয়ে দ্ব›দ্ব-কলহ সৃষ্টি হয় অনেক ক্ষেত্রেই তার মূলে থাকে ধন-সম্পদ; পিতা-মাতা কর্তৃক সন্তানদেরকে সম্পদ প্রদানে বৈষম্য অথবা উত্তরাধিকার বণ্টনে অনিয়ম। এগুলো ঝগড়া-বিবাদ ও অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এজন্যই মীরাসের আলোচনায় বিশ্লেষণের সঙ্গে অনেকগুলো আয়াত বর্ণিত হয়েছে। অন্য বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে সাধারণত এমনটি দেখা যায় না।
পবিত্র কুরআনের সূরা নিসায় মীরাসের বিধি-বিধানের আয়াতগুলো বর্ণনার মাঝখানে একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, তোমাদের পিতা ও সন্তানদের মধ্যে তোমাদের জন্য কে বেশি উপকারী তা তোমরা অবগত নও। নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর বিধান; আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। ৪ : ১১
সম্পদ থাকলে মানুষ চিন্তা করে, কে তার উপকারে বেশি আসবে? কখনো ভাবে, ছেলে। কখনো ভাবে, মেয়ে। কখনো ভাবে, তার স্ত্রী তার বেশি উপকার করবে। কখনো অন্য কারো ব্যাপারে চিন্তা করে। পরবর্তীতে এই চিন্তার ভিত্তিতেই সে তার সম্পদ বণ্টন করার চেষ্টা করে। তার এসব চিন্তাই মূলত মীরাস নীতির বিপরীত। আল্লাহ তায়ালা এসব চিন্তা রদ করেছেন এই আয়াতে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, কে উপকারে আসবে সেটা তুমি জানো না। তুমি ভবিষ্যৎদ্রষ্টা নও। মীরাস ওই দৃষ্টিকোণ থেকে ধার্য হয়নি। আল্লাহ তায়ালা তাঁর হেকমত ও প্রজ্ঞা দিয়ে এ ক্ষেত্রে যেভাবে উপযোগী মনে করেছেন সেভাবে সম্পদ স্থানান্তরের বিধান দান করেছেন। কে কার কতটুকু উপকারে আসবে- এই চিন্তার ওপরে মীরাসের ভিত্তি রাখা হয়নি। মূলত এই আয়াতের মর্মের প্রতি যদি সব মুসলমান মনোযোগ দিতেন তাহলে মীরাসের ক্ষেত্রে নিজেদের তৈরি করা প্রান্তিকতা ও বাড়াবাড়ি থেকে অনেকেই বেঁচে যেতেন।



 

Show all comments
  • এরশাদ ৯ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:৩৫ এএম says : 0
    ইসলামের প্রতিটি বিধানই সেরা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন