Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস আজ

৫ জনে ভুগছে ১ তরুণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বিশ্বে প্রতি ৫ জনে একজন তরুণ মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। ৮৩ শতাংশ তরুণ মনে করে বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য এবং উত্যক্ততা তাদের আত্ম-মর্যাদার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এছাড়া ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ আত্মহত্যা। সম্প্রতি ডাব্লিএইচও’র এক জরীপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপি ‘ফাস্ট ইমার্জিং ডিজিজ’ হিসেবে আখ্যায়িত রোগটি মোকাবেলায় এখনই সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার (১০ অক্টোবর) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিএইচও) ঘোষিত ‘ইয়াং পিপুল এ্যান্ড মেন্টাল হেলথ ইন এ চ্যালেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড’ (অর্থাৎ পরিবর্তনশীল বিশ্বে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য) প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে মানসিক রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। মানোরোগ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ফেসবুকসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের ৯০ ভাগই ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণ। যাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে সাইবার বুলিং (ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষতি) এর ঝুঁকি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বয়ানের প্রভাবে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তি সবখানেই পরিবর্তন হচ্ছে। যার ছোয়ায় তরুণরা বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। আর প্রযুক্তিতে মগ্ন থাকার এই প্রবণতা এক ধরনের আসক্তিতে পরিণত হচ্ছে।
এদিকে, কম্পিউটার ও স্মার্টফোনে তরুণদের গেমিংয়ের নেশাকে কয়েকটি দেশের প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথমবারের মত এটিকে মানসনিক রোগ হিসাবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। যা আন্তর্জাতিক এ সংস্থার ১১তম ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজ’ (আইসিডি) তে গেমিং-ডিজঅর্ডার হিসেবে উল্লেখ্য করা হবে।
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহম্মেদ হেলাল বলেন, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রযুক্তির মাত্রাতিরক্ত আসক্তির কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে ডাব্লিউএইচও এ বছর চারটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে এক নম্বর হল সাইবার বুলিং অর্থাৎ ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাউকে বিরক্ত, ক্ষতিগ্রস্ত, ট্রমাটাইজ করা, কারো কোন খারাপ ছবি প্রকাশ বা ব্যাঙ্গবিদ্রুরুপ করা। কারণ সাইবার বুলিংয়ের মাধ্যমে টিএনএজ পর্নগ্রাফি, শিশুদের প্রতি ভাইয়োলেন্স (সহিংসতা) বা অ্যাবইউজ বেশি হচ্ছে। এতে করে তাদের বিকাশ বাধাগ্রস্থ্য হচ্ছে। দ্বিতীয় গুরুত্ব হল তরুণদের ট্রমা বা মানসিক ও শারীরিক আঘাত। তৃতীয় হল অন্যান্য জেনারেল মেন্টাল ইলনেস বা সাধারণ অসুস্থতা (ডিপ্রেশন, বিষন্নতা, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ইত্যাদি)। চতুর্থ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তরুণদের আত্যাহত্যার প্রতি। কারণ বর্তমানে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ সুইসাইড।
এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিটের এক যৌথ গবেষণায়ও দেখা গেছে, এই মূহুর্তে দেশে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের মধ্যে মানসিক রোগের প্রকোপ ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। আর ১৮ বছরের নিচে শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রমক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের আর্থিক সহায়তায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউিটের পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ত্বত্ত্বাবধানে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেশের সাতটি বিভাগের ১২টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ২ হাজার ১৫৮ জন মানসিক রোগীর উপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়। জরিপে দেখা যায় গুরুতর মানসিক রোগীদের মধ্যে বিভিন্ন শারীরিক রোগের হার শতকরা ৪২ ভাগ। ১৮ বছরের নিচে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার রোগীদের বিভিন্ন শারীরিক রোগের হার ৩২ শতাংশ এবং মাদকাসক্ত রোগীদের ২১ ভাগ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
তবে চিকিৎসা সংশিষ্টরা অভিযোগ করছেন দিন দিন রোগটির প্রকোপ বাড়লেও চিকিৎসার জন্য দেশে মাত্র দুটি বিষেশায়িত হাসপাতাল আছে। সবমিলে দেশে প্রায় দুই কোটি মানসিক রোগাক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় সরকারি পর্যায়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালসহ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৮১৩টি শয্যা রয়েছে। আর স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের দশমিক ৪৪ শতাংশ মানসিক রোগ চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
রোগটির চিকিৎসা শিক্ষা দিতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে মাত্র ৫, রাজশাহী মেডিকেল ১ জন প্রফেসর থাকলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ডে পূর্ণ প্রফেসরের পদ নাই। সব মিলে দেশে সরকারী ১০ থেকে ১৫ জন প্রফেসরসহ ২৫০ জনের মত চিকিৎসক আছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কার মো. জামাল হোসেন বলেন, ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রিস্ট, সাইকোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কার এবং অকুপেশনাল থেরাপিস্টসহ সব মিলে ২৫০ জন সাইকিয়াট্রিক কাজ করছে। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে সাইকিয়াট্রিস্ট সোশ্যাল ওয়ার্কার আছে মাত্র ৩ জন। তাই চিকিৎসা ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ জনবল সংকট রয়েছে। ইউনিয়ন হেলথ সেন্টারে কোনো ওষুধ সরবরাহও নাই। এ জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও সহায়ক জনবল তৈরি উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
এদিকে, এ বছর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০১৮ উপলক্ষে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট হাসপাতালের উদ্যোগে আজ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা এবং ১১ তারিখে কর্মশালার আয়াজন করেছে। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টের (বিএপি) উদ্যোগে সাইকেল শোভাযাত্রা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিবিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে ৩ দিন ব্যাপি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রর্দশনী, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দিবস আজ

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২১ নভেম্বর, ২০২২
১০ নভেম্বর, ২০২২
৪ নভেম্বর, ২০২২
৫ অক্টোবর, ২০২২
৩ অক্টোবর, ২০২২
২৩ জুন, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ