Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জোরদার হচ্ছে তিতলি

ভারতের দিকেই গতিমুখ, পরিবর্তন হলে খুলনায় : উপকূলবাসী আতঙ্কে

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে এক ঘূর্ণিঝড়। নাম ‘তিতলি’। উর্দু শব্দটির বাংলা অর্থ ‘প্রজাপতি’। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এটি আরও ঘনীভ‚ত হয়ে জোরদার হচ্ছিল। তিতলির গতিমুখ দক্ষিণ-পূর্ব ভারত উপকূলের দিকেই। তবে মাঝপথে যদি গতিপথ পরিবর্তন হয় তাহলে ভারত এবং খুলনা উপক‚লের দিকেও ধাবিত হতে পারে। ভারতের উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গসহ উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ে জানমালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যাপক সতর্কতা ও প্রস্তুতি অব্যাহত রয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিতলি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়লে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য বিপদ আপদের শঙ্কা উৎকণ্ঠা মাথায় নিয়ে লাখো উপকূলবাসী রয়েছেন অজানা আতঙ্কে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, তিতলির সক্রিয় প্রভাবে আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এখনই তিতলির গতিবেগ ও শক্তির মাত্রা কতটা কী হবে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। এর প্রভাবে আগামী দু’তিন দিনে ঢাকাসহ সারাদেশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপক‚লীয় অঞ্চলে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে বর্ষাকালীন অবস্থা তৈরি হয়। কিন্তু দেশের অন্যত্র বৃষ্টিপাত হয়নি, যদিও তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় দীর্ঘদিন ভ্যাপসা গরমের কারণে মানুষের ভোগান্তি কমেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্র খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, মংলাসহ চারটি সমুদ্রবন্দরে সতর্ক সঙ্কেত বহাল রাখা হয়েছে। পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড় তিতলির সর্বশেষ অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৯শ’ ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা বন্দরের ৮৮০ কিমি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে। বাংলাদেশ এবং ভারতের আবহাওয়া বিভাগ ও আন্তর্জাতিক আবহাওয়া নেটওয়ার্ক সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত ও শক্তি সঞ্চয় করে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ প্রতিঘণ্টায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সর্বশেষ গতি-প্রকৃতি অনুযায়ী বঙ্গোসাগরের বুকে ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ দম নিচ্ছে, আরো জোরালো হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গতকাল ভোররাতে ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। পরের ধাপে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। নামকরণ করা হয়েছে ‘তিতলি’। মানে ‘প্রজাপতি’। নামটি প্রস্তাব করে পাকিস্তান। ঘূর্ণিঝড়ের একেকটি নতুন নাম দেয়া হয়। নামগুলো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার আগেই নাম ঠিকঠাক করা থাকে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর উপসাগর তীরের দেশগুলোর প্যানেলে একেকটি সদস্য দেশ একেকটি নাম প্রস্তাব করে। সেই নামগুলো থেকে এবারের ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ভারত, মিয়ানমারসহ প্যানেলের অন্তর্ভূক্ত বিভিন্ন দেশের প্রস্তাব অনুসারে সিডর, আইলা, নার্গিস, মহাসেন, রোয়ানু, মোরা, দেয়ী ইত্যাদি নাম রাখা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দেয়ী ছিল ক্ষণস্থায়ী ও দুর্বল এবং এটি ভারতের দিকে কেটে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের মতো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগকে চিনে রাখা, উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে সহায়ক হিসেবেই রেকর্ডভূক্ত রাখা হয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম। যা অতীতে ছিলনা। এ মুহূর্তে আরব সাগরে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় বিরাজ করছে। এর নাম ‘লুবান’। ঘূর্ণিঝড়টি ওমানের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।
এদিকে গতকাল রাতে সর্বশেষ আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে জানা গেছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় তিতলি সামান্য পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৮০ কিমি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৭০ কিমি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর এবং ঘনীভূত হতে পারে।
এর প্রভাবে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমূদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। আগামী ২ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ