Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বছরজুড়েই আমের স্বাদ মেটাচ্ছে ‘আমতা’

রেজাউল করিম রাজু : | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আমের মৌসুুম শেষ হয়েছে। তাই বলে বছরজুড়েই আমের স্বাদ। হ্যাঁ আম রসিকদের সেই রসনা মেটাচ্ছে আমতা বা আমসত্ত্ব। বিভিন্ন স্বাদের কাঁচা-পাকা আমতা এখন হাটে, বাজারে। ‘আমতা নিবেন গো আমতা’ বলে ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাকও কম নয়।
রাজশাহী অঞ্চলে আমসত্ত্ব স্থানীয়ভাবে ‘আমতা’ নামে পরিচিত। আর স্বাদের কথা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় এসেছে। আমসত্ব দুধে ফেলি, তাতে কদলী দলি, সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে। হাপুস হুপুস শব্দ চারিদিক নিঃস্তব্ধ, পিঁপড়া কাঁদিয়া যায় পাতে। শুধু আম নয় আম থেকে তৈরি কেবল আমসত্ত্ব আস্বাদনের জন্য যে আয়োজনের কথা বর্ণনা করেছেন তাতে বোঝা যায় বাঙালির খাদ্য তালিকায় আমের অবস্থান কোথায় রয়েছে।
যে আমসত্ব নিয়ে এত কথা তা কী করে সহজেই করা যায় সেটি জেনে নেয়া যাক। কাঁচা-পাকা দুই ধরনের আমে আমসত্ত্ব করা যায়। আমসত্ব পাকা আম দিয়ে ভাল হয়। একেবারে পাকা আমের রস ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। যাতে আঁশ না থাকে। এরপর সামান্য গরম করে সেই রস একটি গোলাকার প্লেটে, কুলা বা ডালা কিংবা বড় গামলার পেছনের অংশে সরিষার তেল অল্প পরিমানে মাখিয়ে তার উপর আমের রসের প্রলেপ দিন। এরপর তা কড়া রোদে শুকাতে দিতে হবে।
শুকিয়ে গেলে আবার হাল্কা তেলের প্রলেপ দিয়ে ফের আমের রসের প্রলেপ দিয়ে রোদে শুকাতে হবে। এভাবে ইচ্ছেমত চার পাঁচটি প্রলেপ দিয়ে রোদে শুকিয়ে নিলেই আমসত্ত্ব হয়ে যাবে। যত বেশি রোদের তাপ লাগানো যাবে ততই ভাল। তবে খেয়াল রাখতে হবে শুকানোর সময় আমসত্বে যেন ধুলোবালি ও মাছি না লাগে, না বসে। আম টক হলে স্বাদমত চিনি মেশানো যায়। ইচ্ছেমত আদার রসসহ স্বাদ মশল্লাও ব্যবহার করে অনেকেই।
আমতার পরতও নির্ভর করে তৈরি কারকের ইচ্ছের উপর। শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ সাইট্রিক এসিড ব্যবহার করে আমতা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। বহু বছর আগে থেকে খুব পাকা আম দিয়ে এ অঞ্চলে আমতা তৈরি শুরু হয়। দিনে দিনে এর কদর বাড়ায় আমসত্ত¡ তৈরিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। এখন ভালমত আম চটকে ব্লেন্ডারে দিয়ে পাতলা পেস্ট করার পর তা কড়াইয়ে জ্বাল দেয়া হচ্ছে।
এরপর পাত্রে ঢেলে ওভেনে ১৮০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় বেক করে শুকিয়ে নেয়া হচ্ছে। এভাবে ইচ্ছেমত প্রলেপ দেয়া যায়। বিভিন্ন আকারে তৈরি হচ্ছে আমসত্ত্ব। সংরক্ষণ করা হচ্ছে ফ্রিজে। তবে গ্রামে গ্রামে এখনো সেই বড় বড় রুটির আকারের আমসত্ব বেশি তৈরি হয়। এই আমসত্ত্ব তৈরি করে বাড়তি আয় হয়। পরিবারের সবাই মিলে এটি করা যায়। বিশেষ করে স্কুল কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা এসব তৈরি করে আয়ের একটা পথ খুঁজে পেয়েছে।
এবার রমজানের সময় আম পাকতে থাকে। সে সময় ক্রেতা কম ছিল। আবার প্রচন্ড গরমে একসাথে বিপুল পরিমাণ আম পেকে যায়। অনেক পাকা আম ঝরে যায়। এসব পাকা আম দেশের অন্য কোথাও পাঠানো সম্ভব হয়নি। ফলে সুযোগ নেয় বিভিন্ন জুস তৈরির কোম্পানিগুলো। তারা কমদামে সব আম কিনেছে। আর পড়ে যাওয়া আম নিয়ে ঘরে ঘরে বউ-মেয়েরা বানিয়েছে আমতা।
এবার আমতা তৈরি হয়েছে অনেক। আমসত্ত্ব ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে আমতা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছে। আমসত্ব বা আমতায় লগেছে আধুনিকতার মোড়ক। এক কেজি হতে ২৫০ গ্রামের বিভিন্ন প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে আমসত্ব বা আমতা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যবসায়ীরা অনলাইনের মাধ্যমে এর প্রচার ও বিপণন শুরু করেছে। মনে ইচ্ছে জাগলে আপনি আজই যোগাযোগ করতে পারেন। শুধুই কি আমসত্ত্ব বা আমতা।
ঘরে তৈরি আমের রকমারি আচার কম রসনা মেটাচ্ছে না। কুটির শিল্পের মত বানানো হচ্ছে আমের আচার, আর কাঁচা আম কুচি করে রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় আমচুর। ডালের সাথে আমের আমচুর খেয়ে আপনি মনের অজান্তে বলে উঠতে পারেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভাষায় ‘হাঁ জ্বি মামু, ডাইলে হামচুর দিয়াছ নাকি’। রাজশাহী অঞ্চলের ম্যাঙ্গো ম্যান খ্যাত আনোয়ারুল ইসলাম ফ্রুট ব্যাগিং আমের পাশপাশি ঘরে বানানো রকমারি আচার দিয়ে বাজিমাত করেছেন। এখন নানাভাবে বছরজুড়ে আমের স্বাদ নিতে পারেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আম

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ