Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্টেডিয়াম গ্যালারির নিচে মুক্তিযোদ্ধার ঠিকানা!

সাতক্ষীরা থেকে আক্তারুজ্জামান বাচ্চু | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

অসহায় এক মুক্তিযোদ্ধার ঠিকানা সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম গ্যালারির নিচে পথের ধারে। দীর্ঘ ৩০ বছর সেখানে বস্তা দিয়ে ঘেরা ঘরের মধ্যে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। নাম আব্দুল হামিদ সানা। বয়স ৬২ বছর। বাবার নাম-মৃত হারেস সানা। এক সময়ে গ্রামের বাড়ির ঠিকানা ছিল জেলার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের নাংলায়। পাকিস্তান আমলে গ্রামের নাংলা স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

অসুস্থ্য আব্দুল হামিদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ১৯৭১ সালে মেজর জলিলের নেতৃত্বে খান সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। ভারতের বিহারে গেরিলা ট্রেনিং নিয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম না থাকায় সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে তিনি বঞ্চিত। তিনি জানান, আশাশুনির নাংলা গ্রামে তাদের ঘরবাড়িসহ প্রায় ২০ বিঘা জমি ছিল। শরিকের একটি অংশ সেই জমি নিয়ে নেয়ায় তিনি আজ নিঃস্ব। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের দুই তিন বছর পর বাবা হারেসকে খুলনায় রেললাইনে ফেলে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বড় ভাইকে ভাতের সাথে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলে ওই একই চক্র। বড় বোন তিনিও মারা গেছেন। আপনজন বলতে জীবিত রয়েছেন তার অসুস্থ্য স্ত্রী মোমেনা খাতুন। মোমেনার বয়স যখন সাত বছর তখন বিয়ে হয় তার সাথে। এরপর থেকেই জীবন সাথী হিসেবে তার সাথেই রয়েছেন মোমেনা।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ সানা জানান, সারা দিন লোকজনের কাছে হাত পেতে তার অসুস্থ্য স্ত্রী যা পায়, তা দিয়েই কোনোরকমে তাদের সংসার চলে। জমি জায়গা, বাস স্থান সব কিছু হারিয়ে তিনি আজ নিঃস্ব, অসহায়। পথের ধারে স্টেডিয়ামের গ্যালারির নিচে দীর্ঘ ৩০ বছর রয়েছেন তারা।
সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের পুরনো বস্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছোট্ট একটি অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান। তার মধ্যেই রান্না, খাওয়া-দাওয়া ও ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা। মাথার উপরে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম। তাও আবার ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে গ্যালারির কিছু অংশ ভেঙে মারাত্মক র্দুঘটনা ঘটতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ ও তার স্ত্রী মোমেনা খাতুন দুজনই অসুস্থ্য। শীর্ণ শরীর নিয়ে কোনোরকমে তারা মাথা গুঁজে আছেন সেখানে।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদের স্ত্রী মোমেনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছোট বেলায় স্বামীর কাছে এসেছি। আপন বলতে স্বামী ছাড়া আমার আর কেউ নেই। অসুস্থ্য স্বামীকে নিয়ে বছরের পর বছর পড়ে আছি এই স্টেডিয়ামের নিচে রাস্তার ধারে। লোকজনের দয়ায় কোনোরকমে দুমোঠা খেয়ে আল্লা বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি বলেন, বর্ষাকালে ও খুব শীতে আমাদের কষ্টটা আরো বেড়ে যায়। বর্তমানে আমার স্বামী অনেক অসুস্থ্য। পক্ষঘাত হয়েছে। চলতে পারে না। ওষুধ কিনতে পারি না। আমি লোকজনের কাছে চেয়ে যা দুটো পয়সা পাই, তা দিয়ে ভালোভাবে দু’বেলা খাবারই জোটে না। তার ওপর ওষুধ কিনব কী করে? তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নাকি অনেকের ঘরবাড়ি, টাকা পয়সা দেয়, তা বাবা আমাদের তো সে কিছু দেয় না। সে যদি আমাদের একটু আশ্রয়ের ব্যবস্থা করত, টাকা পয়সা দিত, তাহলে খুব উপকার হতো। এই বুড়ো বয়সে আর এখানে পড়ে থাকতে মন চায় না।



 

Show all comments
  • Bashir ১৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১:২৯ এএম says : 0
    Government please help them
    Total Reply(0) Reply
  • mostafizur rahman ১৫ অক্টোবর, ২০১৮, ৬:৩২ পিএম says : 0
    Dear Journalist I am a freedom Fighter during time of 1971. I participated in Muktijoddha battle sector Number 7(seven) under the command of captain Iqbal (sector Commander) I had been training in Dahgram (Called sitmohol of Bangladesh) Muktijoddha camp,near Dhapra ,North indian border) under Professor Yousuf Ali ( Camp in Charged).He was a prominent member, selected in parliament of Pakistan from Awomi leege part in 1970, Pakistan election. He has passed way .We received a Certificate or document from the camp.I was finished my study as a Pharmacist in Bangladesh .I worked in Saudi Arabia and migrated to Canada.But I lost my muktijoddha certificate, applied and asked to My district, Nilphamari Muktijoddha Branch office for my certificate .They told me to bring all the document but I did not have that.The government should tare care of this case personally and seriously and respect them and recognize them as freedom fighter. Thank you Mostafizur Rahman Canada
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুক্তিযোদ্ধা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ