Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেয়ে ভারতেই আমাদের মেরে ফেলুন’

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

নয়াদিল্লীর কালিন্দি কুঞ্জ এলাকার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ছোট্ট মুদির দোকানে বসে আছেন জাফর আলম। এক পুলিশ কর্মকর্তা শরণার্থী ক্যাম্পে এসে আলমকে ছয় পৃষ্ঠার একটি ফর্ম পূরণ করতে বলেন। আলম সেটা করতে অস্বীকার করেন। পুলিশ তাকে সতর্ক করে দিয়ে বলে, “আজ তুমি আমাদেরকে সহায়তা না করলে, কাল আমাদের সহায়তা তুমি পাবে না”।
পুলিশ এরপর ক্যাম্পের অন্যান্য জায়গা ঘুরে অন্যান্য লোকদের খুঁজতে থাকে। কিন্তু বেশি লোকদের পায়নি পুলিশ, কারণ তারা সবাই তখন কাজে চলে গিয়েছিল। ৩০ মিনিটের মধ্যেই এলাকা ছেড়ে যায় ওই পুলিশ কিন্তু আলমকে বলে যায়, আবার সে আসবে।
আলম বলেন, “এক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই সে ক্যাম্পে আসছে এবং এই ফর্মগুলো পূরণের জন্য চাপ দিচ্ছে”। ২৭ বছর বয়সী রোহিঙ্গা আলম ২০১২ সাল থেকে ভারতে বসবাস করে আসছে।
“আমরা তাদেরকে অনেকবার বলেছি যে আমরা এই ফর্মগুলো পূরণ করবো না এবং তাদেরকে কোন বায়োমেট্রিক তথ্য দিবো না। ভারত সরকার এ তথ্যগুলো মিয়ানমার দূতাবাসের কাছে দেবে এবং তাদেরকে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে”।
ভারত সরকার বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে বলেছে, সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চিহ্নিত করতে, তাদের বায়োমেট্রিক তথ্য নিতে এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কাছে সে ব্যাপারে রিপোর্ট করতে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং স¤প্রতি বলেন, “বিভিন্ন রাজ্যের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে, তাদের বায়োমেট্রিক তথ্য নিয়ে সেগুলো কেন্দে” পাঠাতে হবে তাদের। এর কূটনৈতিক চ্যানেলে মিয়ানমারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেবে ভারত সরকার”।
২০১২ সালে মোহাম্মদ জালাল, মকবুল খান, জালাল উদ্দীন, মোহাম্মদ ইউনূস, সাব্বির আহমেদ, রহিম উদ্দীন এবং মোহাম্মদ সালামসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ৪ অক্টোবর তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। তাদেরকে ভারতে থাকতে দেয়ার জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তার আবেদন খারিজ করে দেয়। এর পরপরই তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। ৩০ বছর বয়সী নূর কাশিম তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে কালিন্দি কুঞ্জ শরণার্থী ক্যাম্পে বাস করছেন।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “ভারত সরকারের এটা বোঝা উচিত যে কেন আমরা এখানে এসেছি। কোন পরিস্থিতিতে আমাদের এখানে আসতে হয়েছে”।
কাশিম একটি সিমেন্ট কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে এবং মাসে ৯৫ ডলার পায়। ২০১২ সাল থেকে সে এই ক্যাম্পে বাস করে আসছে। তার মা, দুই ভাই এবং দুই বোন রয়েছে বাংলাদেশে। কাশিম দাবি করেন, গত বছর রাখাইনে সহিংসতার সময় সেনাবাহিনী তার চাচাতো বোনকে হত্যা করেছে।
কাশিম বলেন, “২০১২ সাল থেকে আমি আমার পরিবারের সদস্যদের দেখিনি। আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই এবং তাদের সাথে বাস করতে চাই। কিন্তু আমাদের কোন উপায় নেই। আমরা সব কিছু ছেড়ে এসেছি। আমাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা, জমি, গবাদি পশু। সব ছেড়ে এসে এখানে আমরা দাসের জীবন যাপন করছি”।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানকে অনেক আন্তর্জাতিক নেতা গণহত্যার সাথে তুলনা করেছেন। নিজেদের দেশে রোহিঙ্গাদের কোন মৌলিক অধিকার নেই, এমনকি তারা সেখানে নাগরিকত্বও পর্যন্ত পায়নি। সেখানে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানোর প্রমাণ দিয়েছে ভুক্তভোগী এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো। রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, তাদের শিশুদের আগুনে নিক্ষেপ, পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া এবং হাজার হাজার মানুষকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ রয়েছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে।
কাশিম বলেন, “যখনই খুশি ভারত আমাদেরকে ফেরত পাঠাতে পারে কারণ এটা আমাদের দেশ নয়। কিন্তু (ভারতীয় কর্মকর্তাদের) অন্তত মিয়ানমারের পরিস্থিতি একবার দেখে আসা উচিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের ফেরত পাঠানোর চেয়ে এখানে আমাদের সবাইকে হত্যা করে ফেলাটা বরং ভালো। কারণ সেখানে আমাদের হত্যাই করা হবে”। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ