Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঝুঁকিতে লক্ষাধিক মানুষ

জলবাযু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব

মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

আইলার পর অনেকেই এখনও ফিরতে পারেনি জন্মভিটায় এলাকায় নেই কর্মসংস্থান শহরমুখী মানুষ


জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দুর্যোগের ঝুঁকিতে কয়রাসহ সুন্দরন সংলগ্ন উপকুলবর্তী উপজেলা। সাগরবর্তী এলাকাগুলোতে নেমে আসছে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আর এসব দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে এ এলাকার বাসিন্দারা। গত তিন দশকে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্সে একাধিকবার লণ্ডভণ্ড হয়েছে সুন্দরবন। একইসঙ্গে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সব হারিয়ে পথে বসেছে উপকূল ঘিরে বাস করা খুলনার কয়রাসহ পাশ্ববর্তী উপজেলার অনেক মানুষ।

বেসরকারি সংস্থার সূত্র মতে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর সুন্দরবন উপকূলে প্রলংকরী সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল খুলনা,সাতক্ষীরা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে স্মরণকালের সামুদ্রিক ঝড়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরের তান্ডব এবং সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার কারণে ঘটা ভয়াবহ জলোচ্ছাস পাল্টে দিয়েছে গোটা উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্যপট। এর সঙ্গে নদী ভাঙনে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে এসব এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আইলার পর ছোটখাট ঘূর্ণিঝড় খুলনা-সাতক্ষীরার যে ক্ষয়-ক্ষতি তুলনামূলক কম হলেও যা হয়েছে সেটাও বিবেচনার বাইরে রাখার সুযোগ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীণ হাউস প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় একদিকে যেমন সমুদ্রপৃষ্টের তলদেশ উঁচু হচ্ছে, অন্যদিকে সাগরসংশ্লিষ্ট নদ-নদীগুলো নাব্য হারিয়ে গতিপথ পাল্টাচ্ছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাগরের পানি এখন ঢুকছে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। আর এ কারণে ঘটা ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছেন খুলনা ও সাতক্ষীরার উপকূলীয় দাকোপ, কয়রা, শ্যামনগর ও পাইকগাছার কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ। লির্ডাসের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও সরকার ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপকূলীয় এলাকার ব্যাপক ক্ষতির দিকটি বিবেচনায় এনে টেকসই প্রকল্প হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছে।

কয়রা উপজেলার ৩নং কয়রার কৃষক শহীদুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনের কবলে উপজেলার ২টি পোল্ডার এলাকার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে ভাঙন ও দুর্যোগ ঝুঁকি কিছুটা কমতে পারে বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সহসাই মুক্তি মেলার সম্ভাবনা নেই এসব এলাকার মানুষের। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতোমধ্যে তারা ঘের ও ফসলি জমিতে টের পাচ্ছেন। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চোরামুখা গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এলাকার মানুষ উদবাস্তু হতে চলেছে। এলাকায় বর্তমান কোন কর্মসংস্থান নেই। কাজের সন্ধানে এই জনপদের মানুষ শহরমুখে হচ্ছে। আইলার পর অনেক মানুষ বাহিরে চলে গেল্ওে এখনো জন্মভিটায় ফিরে আসতে পারেনি। বেসরকারি সংস্থা লির্ডাসের কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন বলেন, শ্যামনগরও কয়রাসহ এ অঞ্চলে নদী ভাঙনের সময়েও এর তীব্রতা বোঝা যাচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঘেরের পানির তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে চাষকৃত মাছ যারা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, তীব্র তাপদহে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যাচ্ছে। আবার গরমের মধ্যেই বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা হঠাৎ করেই ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাচ্ছে। তাপমাত্রার এই অস্বাভাবিক হ্রাস-বৃদ্ধি ঘেরের মাছের ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তবে কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ কলেজের অধ্যাপক আবম আঃ মালেক বলেন,তাপমাত্রার এমন অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে দেখছেন প্রকৃতির আচরণে বিশাল অসামঞ্জস্যতা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জলবাযু

১৭ অক্টোবর, ২০১৮
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ