Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৪ জন নিহতের পর কাশ্মিরে ব্যাপক বিক্ষোভ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

গতকাল বুধবার ভোরে নিরাপত্তা বাহিনী কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে চারজন নিহত হওয়ার জেরে ভারত শাসিত কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ভোরে ফাতেহ কাদাল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিন বিদ্রোহী ও এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়। অবশ্য নিরপেক্ষ গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে এক বেসামরিক ব্যক্তি রয়েছেন। এই ঘটনার পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শ্রীনগরের স্কুল ও কলেজগুলো। শ্রীনগরের রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছে শত শত আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য। কাশ্মির উপত্যকা জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট।
কাশ্মির পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিকে শ্রীনগরের ফাতেহ কাদাল এলাকা ঘিরে ফেলে তল্লাশি চালানো শুরু হয়। ওই অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে পরিণত হয়। বন্দুকযুদ্ধে তিন সন্ত্রাসী নিহত ও এক পুলিশ কর্মকর্তা শহীদ হয়েছেন’। রাজ্যের পুলিশ প্রধান দিলবাহ সিং বলেছেন, এসব বিদ্রোহীরা সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তইয়্যেবার সদস্য।
কাশ্মির পুলিশের এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেছেন, বাড়ির মালিক আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে বলেছিলেন ভেতরে কোনও ‘সন্ত্রাসী’ নেই। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ভেতরে ঢুকলে তীব্র গুলির মুখে পড়ে। আর পুলিশ সদস্য নিহত হয়। তারপর পুলিশের গুলিতে দুই সন্ত্রাসী নিহত হয়। আর নিহত তৃতীয়জন তাদের সঙ্গে থাকা বাড়ির মালিকের ছেলে। তার পরিবার বের হয়ে আসলেও সে বের হয়ে আসেনি। সেকারণেও সেও তাদের সদস্য’।
তবে পুলিশের এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন ফাতেহ কাদেল এলাকার বাসিন্দারা। নিহত তৃতীয় ব্যক্তিকে তারা ৩০ বছর বয়সী বেসামরিক ব্যক্তি রইস আহমেদ বলে শনাক্ত করেন। তাদের অভিযোগ, রইসকে মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
রইসের ভাবী ৩৩ বছরের জান বলেন, ‘রাত বারোটার দিকে দরজায় টোকা পড়লে আমরা উঠে পড়ি। তারা ছিল পুলিশ। তারা আমার দেবরকে তুলে নিয়ে যায় আর তার ভাগ্যে কী ঘটেছে আমরা তা জানতে পারিনি। শুনেছি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তবে এখনও আমাদের তার লাশও দেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, আমাদের (নারীদের) একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। এমনকি পানিও দেওয়া হয়নি। সকাল পর্যন্ত জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছি’।
স্থানীয় অপর এক বাসিন্দা মাহফুজা জান আল জাজিরাকে বলেন, এক শিশু কন্যার পিতা রইস তার বাবার সঙ্গে দোকানে কাজ করতেন। তিনি বলেন, ‘সে বন্দুকধারী ছিলো না। তারা এখানকার যে কাউকে মেরে ফেলে তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিতে পারে। এভাবে তারা হাজার হাজার মানুষকে মেরে ফেলেছে। আর বিশ্ববাসী এই রক্তপাতের যেন পরোয়া করে না।
কাশ্মির নিয়ে দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধ দীর্ঘদিনের। সেখানকার সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর কেউ কেউ সরাসরি স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত। কেউ কেউ আবার কাশ্মিরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে। ইতিহাস পরিক্রমায় ক্রমেই সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ইসলামিকীকরণ হয়েছে। এখন সেখানকার বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর মধ্যে হিজবুল মুজাহিদীন সবচেয়ে সক্রিয়। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মিরের জাতিমুক্তি আন্দোলনকে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী তৎপরতার থেকে আলাদা করে শনাক্ত করে না। সন্দেহভাজন জঙ্গি নাম দিয়ে বহু বিদ্রোহীর পাশাপাশি বেসামরিকদের হত্যার অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। কাশ্মির প্রশ্নে সমগ্র ভারতীয় স্টাবলিশমেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিতেই সেখানকার সমস্যাকে ‘বিচ্ছিন্নতা আর জঙ্গিবাদের’ সমস্যা আকারে দেখা হয়ে থাকে।
বুধবার ভোরের ঘটনা সম্পর্কে ২৫ বছর বয়সী স্থানীয় তরুণ আতিফ আহমেদ বলেন, যে বাড়িতে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে তা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশের আরও দুটি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
ঘটনার পর ওই অঞ্চলের বাণিজ্যিক এলাকা বন্ধ হয়ে যায়। আরও বহু এলাকায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে।
কাশ্মিরের স্বাধীনতাপন্থী নেতারা বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। ২০১৬ সালের জুলাইতে জনপ্রিয় বিদ্রোহী নেতা বুরহান ওয়ানি নিহতদের পর থেকে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে কাশ্মির। সূত্র : আল-জাজিরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিহত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ