Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নগরীর বাইরে স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে রাজধানীতে সায়েদাবাদ, মহাখালি, গাবতলী, ফুলবাড়িয়াসহ চারটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল রয়েছে। এসব বাস টার্মিনালের কারণে রাজধানীতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। রাজধানীর যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য টার্মিনালগুলোকে সরিয়ে নেয়া হবে। এসব আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের পরিবর্তে কেরানীগঞ্জ ঝিলমিল, আবদুল্লাহপুর, আমিনবাজার ও সিমরাইলে চারটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর ফলে রাজধানীতে কোনো আন্তঃজেলা বাস প্রবেশ করতে পারবে না। রাজধানীর বাইরে নির্মিতব্য আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন জেলার যাত্রীদের ছোট পরিবহনে করে রাজধানীতে পৌঁছে দেবে আন্তঃজেলা বাস মালিকরা। রাজধানীর অভ্যন্তরে থাকা সায়েদাবাদ, মহাখালি, গাবতলি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালকে সিটি সার্ভিস বাস টার্মিনালে পরিণত করা হবে। এর সাথে আরও কয়েকটি যুক্ত হয়ে মোট ৭টি সিটি সার্ভিস বাস টার্মিনাল থাকবে। এগুলোর সাথে মিরপুর-১২, মোহাম্মদপুরের বসিলা, সদরঘাটের ফলপট্টি ও বঙ্গবাজারে নতুন চারটি সিটি সার্ভিস বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। সিটি সার্ভিস টার্মিনালে শুধু রাজধানীর ভেতরে চলাচলকারী বাস অবস্থান করবে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এ উদ্যোগ নিয়েছে। রাজধানীর ‘বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা’ পদ্ধতি প্রবর্তনের কার্যক্রম সমন্বয় কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে তারা। উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন শৃঙ্খলা ও যানজট নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে আহŸায়ক করে ১০ সদস্যের এই সমন্বয় কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আমরা মনে করি, রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে এ উদ্যোগ খুবই সময়োপযোগী এবং সাধুবাদযোগ্য।
রাজধানী ঢাকা অনেক আগেই বসবাসের অনুপযোগী শহরে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের করা জরিপে বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্বের বসবাস অনুপযোগী তালিকার শীর্ষে রয়েছে। সংস্থাটি ঢাকাকে অসভ্য নগরী হিসেবেও আখ্যায়িত করেছে। অবশ্য ঢাকা যে বসবাসের অনুপযোগী এবং নগরবাসী ন্যূনতম সেবা থেকে বঞ্চিত তা জরিপ করে বলা লাগে না। প্রতি মুহূর্তেই রাজধানীবাসী তার শিকার হচ্ছেন। এ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে নগরবাসী বিভিন্ন পরামর্শ এবং পরিকল্পনা উপস্থাপন করলেও তাতে কোনো উন্নতি হয়নি। বরং যানজট, পানিবদ্ধতা থেকে শুরু করে রাজধানীর অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ এবং বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকাÐে অচল হয়ে পড়ে। এক যানজটে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, তার হিসাব প্রায় প্রতিনিয়ত পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। মানুষের শারীরিক, আর্থিক ক্ষতিসহ বছরে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতির হিসাব নগরবাসী জানে। এ ক্ষতি নিয়েই বছরের পর বছর ধরে রাজধানী চলছে। ইতোমধ্যে আমার উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। অচিরেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো বলে আশা করা হচ্ছে। অথচ রাজধানী ঢাকার চেহারা দেখলে কারো পক্ষে বোঝার উপায় নেই আমরা উন্নত হচ্ছি। বিশ্বে এমন কোনো রাজধানী দেখা যাবে না যেখানে ঢাকার মতো এমন অরাজকতা বিরাজমান। যে যেভাবে পারছে ঢাকাকে বিশৃঙ্খল করে তুলছে। দখল, দূষণ এবং অপরিকল্পিতভাবে এর সম্প্রসারণ করে চলেছে। তার উপর একটি রাজধানীতে যে পরিমাণ সড়ক থাকার কথা তা ঢাকায় নেই। সাধারণত একটি আদর্শ শহরে শতকরা ২৫ ভাগ চলাচলের সড়ক থাকে। ঢাকায় রয়েছে মাত্র ৭ ভাগ। বিদ্যমান এই সড়ক এবং ফুটপাতও বিভিন্নভাবে দখল করে আরও সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। একটা সময় রাজধানীতে প্রায় ৪৬টি খাল ছিল। খালগুলো রাজধানীর শিরা-উপশিরা হয়ে সজীব রাখত। নৌ যোগাযোগেরও উপযোগী ছিল। এসব খাল ছিল, এখন তা কল্পনাও করা যায় না। দখলের মাধ্যমে সেখানে বড় বড় ইমারত ও সড়ক তৈরি করা হয়েছে। যে কয়টি রয়েছে সেগুলো দখল আর দূষণে নালা-নর্দমায় পরিণত হয়েছে। রাজধানীকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তার সবই করা হয়েছে এবং হচ্ছে। একে সুশৃঙ্খল এবং পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। আশার কথা হচ্ছে, দেরিতে হলেও রাজধানীর ভয়াবহ যানজট থেকে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিচ্ছে। যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ রাজধানীর অভ্যন্তরে থাকা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো। এসব টার্মিনাল একটা সময় নগরীর বাইরে থাকলেও নগর সম্প্রসারণের ফলে তা অভ্যন্তরে চলে এসেছে। ফলে যানজট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। বহু আগেই রাজধানীর অভ্যন্তর থেকে এসব বাস টার্মিনাল বাইরে স্থানান্তর করার কথা বলা হলেও, তা করা হচ্ছিল না। এখন এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা খুবই ইতিবাচক উদ্যোগ। যদি এই বাস টার্মিনালগুলো আগামী দুই বছরের মধ্যে সরিয়ে নগরীর বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ছয় কোম্পানির আওতায় ছয় রঙের বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়, তবে রাজধানীর যানজট যেমন অনেকটাই কমবে, তেমনি গণপরিবহনে শৃঙ্খলাও ফিরে আসবে।
উন্নত বিশ্বের শহরের মতো না হোক, আমরা যদি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো গণপরিবহন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারি, তাহলেও রাজধানী অনেকটা ভারমুক্ত হবে। এসব দেশের দূরপাল্লার বাস টার্মিনাল নগরীর বাইরে স্থাপন করা হয়েছে। মাল্টিস্টোরিড টার্মিনালের মাধ্যমে বাসের জায়গা সংকুলান করা হয়েছে। আমাদেরও এ ধরনের চিন্তা ও পরিকল্পনা করতে হবে। আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নগরীর বাইরে স্থানান্তরের পাশাপাশি সেগুলোকে মাল্টিস্টোরিড করার উদ্যোগ নেয়া দরকার। বিদ্যমান যেটুকু সড়ক রয়েছে, তা যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। রাজধানী থেকে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল বাইরে স্থানান্তর করলেই হবে না, যেসব শিল্পকারখানা রয়েছে সেগুলোকেও বাইরে স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়া জরুরী। এতে রাজধানী অনেকটাই ভারমুক্ত হবে। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বড় বড় বিভাগীয় শহরগুলোকেও এ ধরনের পরিকল্পনার আওতায় আনতে হবে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে উদ্যোগ নিয়েছে তা দ্রæত কার্যকর ও বাস্তবায়ন করবে। রাজধানীকে বসবাস উপযোগী করতে অন্যান্য যেসব সমস্যা রয়েছে তা দূর করতেও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাস


আরও
আরও পড়ুন