Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সিলেটে ছাত্রদল নেতা শিমু হত্যায় ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:১৭ পিএম

সিলেট নগরীতে নিজ বলয়ের দ্বন্দ্বে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসনাত শিমু খুনের ঘটনায় চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। চার্জশিটে ১০ আসামি নাম উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনের নামই মামলার এজাহারে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদের মধ্যে ৪ জন আসামী কারাগারে আটক রয়েছে। প্রধান আসামী নাবিল রাজা চৌধুরীসহ অন্যরা পলাতক।

তদন্তকালে নতুন করে মামলায় আসামীর জড়িত থাকার প্রমাণ পায় পুলিশ। তাই তার নামও যুক্ত করা হয়েছে চার্জশিটে। ওই আসামী হচ্ছেন মো. জহুরুল হক ওরফে শিবলী সাদিককে (২১)। তিনি সুবিদবাজারের সি ব্লকে মিতালী ১০/৩ নম্বর বাসার মাওলানা আশরাফুল হকের ছেলে। এরা ছাড়া মামলার এজাহার মতে অজ্ঞাত পরিচয় আর কোন আসামীর জড়িত থাকার প্রমাণ পায়নি পুলিশ। এমনটিই দাবি করা হয়েছে চার্জশিটে।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে দেয়া চার্জশিটে নাম উল্লেখ থাকা আসামীরা হচ্ছেন নাবিল রাজা চৌধুরী, কাজী মেরাজ, জাহেদ ওরফে জায়েদ, মিজানুর রহমান সুজন, ইমাদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, দেওয়ান আরাফাত জাকির, মো. সালাহ উদ্দিন ভূঁইয়া তুষার, রুমন মিয়া, নাহিয়ান আহমদ রিপন ও মো. জহুরুল হক ওরফে শিবলী সাদিক। এরা সবাই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ রায় চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন, নিহত আবুল হাসনাত শিমু বিএনপির বদরুজ্জামান সেলিম গ্রুপের একজন কর্মী ছিল। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নাবিল রাজা চৌধুরীসহ অন্য আসামীদের সাথে শিমুর পূর্ব বিরোধ ছিল।

তিনি বলেন, এরই জেরে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় কোর্টপয়েন্টে কালেক্টরেট মসজিদের সামনে পাকা রাস্তায় শিমুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন কাজী মেরাজ। তিনি শিমুর দুই হাত ধরে রাখেন। আর নাবিল রাজা তাকে ছুরিকাঘাত করে। এসময় অন্য আসামীরাও শিমুকে লাঠিসোটা দিয়ে মারাত্মকভাবে মারধোর করে। পরে তাকে মেডিকেল নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার দু’দিন পর শিমু মরদেহ দাফনের পর কোতোয়ালি মডেল থানায় ৯ জনের নামোল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জনকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মামলার বাদী নিহত শিমুর মামা তারেক লস্কর।

এরপর এ ঘটনায় মামলার পূর্বের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বেনু চন্দ্র দেব আসামী রুমন মিয়াকে আম্বরখানা থেকে গ্রেফতার করেন। অন্য আসামীদের মধ্যে কাজী মেরাজ, ইমাদ উদ্দিন, দেওয়ান আরাফাত জাকি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠান। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এজাহারভুক্ত আসামীদের মধ্যে মদন মোহন কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী মেরাজ, ইমাদ উদ্দিন ও দেওয়ান জাকি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি আম্বরখানা এলাকা থেকে সুনামগঞ্জ জেলার আসামপুর এলাকার ফয়ছল আহমদের ছেলে রোমান আহমদ (২৮) কে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তারা ৪ জনই কারাগারে আছেন।

হত্যাকান্ডের পর ৩ জানুয়ারি বুধবার রাতে শিমু হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা (নং-০৭(০১)১৮) দায়ের করেন শিমুর মামা তারেক আহমদ লস্কর। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় মহানগর ছাত্রদল নেতা নাবিল রাজা চৌধুরী উরফে নাবিন চৌধুরীকে। ২ নম্বর আসামী করা হয় মদন মোহন কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী মেরাজকে। এছাড়াও আসামী তালিকাতে নাম ছিল ছাত্রদল কর্মী মিজানুর রহমান সুজন, জাহেদ আহমদ, জাকি, ইমাদ উদ্দিন, নাহিয়ান রিপন, তুষারসহ কয়েকজনের। অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরো ৬/৭ জনের নাম রাখা হয়।

এদিকে মামলার বাদি শিমুর মামা তারেক লস্কর চার্জশিট প্রদান করায় পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি দ্রুত প্রধান আসামী নাবিল রাজাসহ অন্যদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের দাবি তার।

কে এই নাবিল রাজা:
সিলেটের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাবে-ইন-রাজা চৌধুরী ওরফে নাবিল রাজা সুনামগঞ্জ জেলা সদরের হরিনাপাটি গ্রামের ফরহাদ রাজা চৌধুরীর ছেলে। বর্তমানে তিনি সিলেটের জালালাবাদ আবাসিক এলাকার ৪৫নং শেখ মঞ্জিলের বাসিন্দা।

২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব-৯। এছাড়াও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ২০ আগস্ট নাবিলকে ধরে পুলিশে দেয়। পরে সে জামিনে বের হয়ে এখন পলাতক রয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, ক্যাডার নাবিলের বিরুদ্ধে এয়ারপোর্ট ও কোতোয়ালি থানায় বেশক’টি মামলা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি নগরীর কোর্টপয়েন্টে প্রকাশ্য দিবালোকে নিজ দলের সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন ছাত্রদল নেতা আবুল হাসনাত শিমু। পরের দিন দুই দফা জানাজার শেষে বাদ এশা শিমুর মরদেহ হযরত শাহজালাল (র.) দরগাহ গোরস্থানে সমাহিত করা হয়।



 

Show all comments
  • রিমন ১৫ জুলাই, ২০২১, ১:৫৪ এএম says : 0
    এই জানোয়ারকে ক্রসফায়ার এ দেয়া দরকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ