Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পর্যটন নগরী বদলে দিবে জীবনযাত্রা

প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শেখ রেজাউল ইসলাম লিটন পুঠিয়া (রাজশাহী) থেকে : পুঠিয়ার রাজ দরবারে এখন আর রাজা নেই। নেই রাজার রাজ্যও, তবে রাজপরগনা জুড়ে তাদের অনেক স্মৃতি বিজড়িত পূরাকীর্তিসমুহ এখন প্রায় অক্ষত রয়েছে। এছাড়া উপজেলার তাঁরাপুর, নন্দনপুর, শাহবাজপুর ও কাশিমপুর গ্রামে ধনপতিদের অনেক স্মৃতি এখনও দেখতে পাওয়া যায়। রাজপরগনার পুরার্কীতি ও দর্শনীয় স্থানগুলোকে পর্যটন নগরী হিসাবে ঘোষণা করা হলে ক্রমেই বদলে যাবে পুরো উপজেলার চালচিত্র। এতে করে স্থানীয় এলাকাবাসীদের জীবন যাত্রার মান যেমন বাড়বে, তেমনই লাগবে আধুনিকতার ছোঁয়াও।
শিক্ষা নগরী রাজশাহী জেলার প্রবেশদারে পুঠিয়া উপজেলার অবস্থান। যার মোট আয়তন ১৯২.৩৬ বর্গ কিলোমিটার। একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১৮৩টি গ্রাম, ৪২ হাজার ৩শ’১৬টি পরিবারে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮শ’ ৬৪ জন। (১৯৯১ সালের আদম সুমারি অনুযায়ী)। কৃষি জমির পরিমাণ ৩৬ হাজার ৫শ’৬৫ একর। মোট পাকা সড়ক ১৮৫.৭৩ কিলোমিটার ও কাঁচা সড়ক ৩শ’৩৯ কিলোমিটার। রয়েছে ৮৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৮, কলেজ ১৬টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ২টি এবং মাদরাসা ১৭টি। শিক্ষার হার ৪৭.২১। এছাড়া উপজেলার নদ-নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে নারোদ, হোজা, সুন্দরী, পাবলাই, রায়চাঁন, নিশানিশি, মূসাখাঁ, শোকা, সন্ধামনি, বারনাই নদী উল্লেখ যোগ্য। ১৫৫০ সনে পুঠিয়া রাজবংশের গোড়াপত্তোন করেন সাধক বৎসাচার্য্যরে পূত্র পিতম্বর।
ওই রাজবংশ প্রায় চারশত বছর শাসন করেন পুঠিয়া রাজপরগনা। পিতাম্বরের অনুজ নীলাম্বর পুঠিয়া রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নিকট থেকে তৎকালিন নীলাম্বর রাজা উপাধি লাভ করেন। তাঁর জমিদারির এলাকাগুলো ছিল ভারতের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, নদীয়া, মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, বাংলাদেশের উত্তর দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ রাজধানী ঢাকার কিছু অংশ। টাকা পয়সার যুগ তখনও শুরু হয়নি। সে সময় পুঠিয়া রাজবংশ তাদের এলাকাগুলোতে এক আনি, আড়াই আনি, সাড়ে তিন আনি, চারআনি ও পাঁচ আনি নামে পরিচিতি পায়। আর ১৮১৩ খ্রি. ৫টি থানার সমন্বয়ে পুরো রাজ্যর রাজধানী পুঠিয়া গঠিত হয়। ১৮৫৯ খ্রি. পুঠিয়া থানা গঠিত হয়। ১৯৪৯ খ্রি. রাজপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর রাজ পরগনার উত্তর অধিকারীরা স্বপরিবারে ভারত বর্ষে গমন করেন।
এরপর রাজপ্রাসাদ ও জমি গুলো সরকারের নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। পূরাকীর্তি সমৃদ্ধ দর্শনীয় স্থানসমুহ সহস্র বছরের প্রাচীন জনপদ হচ্ছে পুঠিয়া। দিন দিন মন্দিরগুলো দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের নিকট অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। মন্দিরগুলোর পিরামিড, পুরুত্ব, একরতœ, চৌচালা, একবাংলা। পূরাকীর্তি সমৃদ্ধ পাঁচ আনি বড় শিব মন্দির, পাঁচআনি রাজপ্রাসাদ, রানীর ঘাট, গোবিন্দ মন্দির, আহ্নিক মন্দির, রথমন্দির, দোলমন্দির, চারআনি রাজপ্রাসাদ, গোবিন্দ মন্দির, শিব মন্দির, বনদূর্গারদ মন্দির (সাজার মায়ের বাড়ি), কৃঞ্চপুরের শিবমন্দির, গোপাল মন্দির, তারাপুর এলাকায় রাজার হাওয়া খানা। এছাড়াও এর আশে পাশে ছড়িয়ে রয়েছে অনেক মঠসহ ধ্বংসপ্রায় অনেক পূরাকীর্তি সমূহ। রাজশাহী বিভাগীয় শহর থেকে ৩০ কিঃ মিঃ পূর্বে এবং নাটোর শহর থেকে ১৭ কিঃ মিঃ পশ্বিমে পুঠিয়ার অবস্থান। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পার্শ্বে ও পুঠিয়া থানা সড়ক দিয়ে পায়ে হেটে গেলে মাত্র ৮/১০ মিনিট সময় লাগবে পুঠিয়া রাজবাড়ী পৌছাতে। পরিবহন হিসাবে দেশীয় ভ্যান রিক্সায় জনপ্রতি ৫ টাকায় রাজবাড়ীতে যাওয়া যায়। রাজবাড়ীতে প্রবেশের প্রথমে চোখে পড়বে এশিয়ার সব চেয়ে রড় ও ঐতিহাসিক শিবমন্দির। খাওয়া দাওয়ার মোটামুটি ব্যবস্থা থাকলেও রাত্রী যাপনের জন্য আধুনিক কোনো আবাসিক হোটেলের সু-ব্যবস্থা সেখানে নাই। পুঠিয়া পর্যটক নগরী বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও চিত্র শিল্পী নুরুল আমিন মধু ও নাট্যব্যক্তিত্ব কাজী সাঈদ হোসেন দুলাল বলেন, পুঠিয়া রাজপরগনা আমাদের একটি অমূল্য সম্পদ এটা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। এরকম পূরাকীতি সস্বলিত প্রাসাদ দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। রাজবাড়ী এলাকা পর্যটন নগরীতে পরিনত করা হলে এখানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বর্তমানে এখানে দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ঐতিয্যবাহী কারুকাজ সস্বলিত রাজবাড়ী দেখতে আসছেন।
এ ছাড়া রাজপরগনা এলাকা পর্যটক নগরী হিসাবে ঘোষণা করার পর্বে আধুনিক মানের বাসস্থান ও যাতায়াতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে পিছিয়ে পরা এলাকার মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে অনেক লাভবান হবেন। এব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুজ্জামান বলেন, পুঠিয়া রাজবাড়িকে ঘিরে এই এলাকায় উন্নয়নের অপার সম্ভবনা রয়েছে। রাজপরগনা এলাকায় উন্নয়ন কল্পে পতœতত্ত¡ বিভাগ ইতিমধ্যে ৪ কোটি টাকার অধিক ব্যায়ে উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। পরবর্তীতে রাজপরগনা এলাকায় সীমানা বেষ্টনিতে আনা হবে। পরগনায় অবৈধ উচ্ছেদ, সংস্কার ও সংরক্ষনের মাধ্যমে পুঠিয়াকে পর্যটক নগরী হিসাবে ঘোষণা করার প্রক্রিয়াও করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটন নগরী বদলে দিবে জীবনযাত্রা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ