Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শেয়ারবাজারের পতন ঠেকান

| প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

দেশের শেয়ার বাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আবারো বড় ধরনের আতঙ্কের মধ্যে পড়েছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিকল্পিত কারসাজির মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার পর শেয়ার বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি শোনা গেলেও কথিত উদ্যোগগুলো তেমন কোনো ইতিবাচক ফল দেয়নি। এ কারণে গত ৮ বছরেও শেয়ার বাজারে কাঙ্খিত গতি ফিরে আসেনি। সে সময় পুঁজি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যাওয়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি ফেরত পাওয়ার কোনো সুযোগও পায়নি। দেশের শেয়ার বাজারে সম্প্রতি হাজার কোটি টাকার চীনা বিনিয়োগ এসেছে। এই বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে শেয়ার বাজারে একটি ইতিবাচক গতি সঞ্চারিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হলেও আদতে তা হয়নি। এ সপ্তাহে দেশের দুই শেয়ার বাজারে বছরের সব থেকে বড় দরপতনের ঘটনা ঘটেছে। কোনো দৃশ্যগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই মাত্র এক সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ১৯৪.৪৫ পয়েন্ট কমে ৫,২৫১,৯৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে। শতকরা হিসাবে যা সাড়ে তিন শতাংশের বেশী এবং এটি গত প্রায় ২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। দেশে এক ধরনের স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। কোনো রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। দেশের অর্থনীতির জন্য কোনো দু:সংবাদ না থাকলেও শেয়ার বাজারে দরপতন এবং লেনদেন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়া দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও বিনিয়োগে বড় ধরনের অশুভ সংকেত।
দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতির অন্যতম নিয়ামক মানদন্ড হচ্ছে শেয়ার বাজার। শেয়ারবাজারকে ঘিরেই দেশের শিল্পায়ন ও বিনিয়োগে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এ কারণেই শেয়ার বাজারের অনাকাঙ্খিত ঘটনাবলীতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ বা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে কারসাজি করে শেয়ারবাজার থেকে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগকে ঝুকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত করতে একটি প্রভাবশালী চক্র সদা সক্রিয় রয়েছে। গত দুই দশকে দেশের শেয়ার বাজারে দুইবার বড় ধরনের ধসের ঘটনা ঘটে। প্রথমে ১৯৯৬ সালে, অত:পর ২০০৯-১০ সালে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারী ও কারসাজির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে নানা অভিযোগ উঠেছে। বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, মামলা এবং কারো কারো সাজাও হয়েছে। তবে গুরুপাপে লঘুদন্ড অথবা প্রকৃত অপরাধীদের আইন আমলে আনতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো উদ্যোগেই পুঁজি বাজারকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গায় পুণ:প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়নি। একইভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগেও কোনো গতি ফিরে আসেনি। এ জন্য দেশের অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তাহীনতাকে দায়ী করেছেন কেউ কেউ। একদিকে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা, অন্যদিকে দেশের শেয়ার বাজারে মন্দাবস্থা বিরাজমান রয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান দেখিয়ে সরকার যতই উন্নয়নের কথা বলুক, এটা অর্থনীতির জন্য কোনো সুখকর পরিস্থিতি নয়।
শেয়ার বাজারে দরপতন ঠেকিয়ে লেনদেন বাড়াতে গত মঙ্গলবার আইসিবির পক্ষ থেকে বন্ড বিক্রির ২ হাজার কোটি টাকা খুব শীঘ্রই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ছাড়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে এমন একটি সুসংবাদের পরও শেয়ার বাজারে এর তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। দরপতন ও লেনদেনে নেতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। দেশে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি না থাকলেও এবং দেশি-বিদেশি বড় বিনিয়োগের উদ্যোগ নেয়ার পরও শেয়ার বাজারের অব্যাহত দরপতন ও লেনদেন কমে যাওয়ার বাস্তবতাকে এলামির্ং বলে মনে করছেন শেয়ার বাজার সংশ্লিষ্টরা। শেয়ার বাজারে এমন দরপতন এবং লেনদেন কমে যাওয়ার মত কোন কারণ নেই। শেয়ার বাজারে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা। আইসিবি(ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ)’র পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলা হলেও তাতে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে সরকার ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক সমাধান ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার আন্তর্জাতিক ও গণদাবী বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ না থাকায় শেয়ার বাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায়না। শেয়ার বাজার পরিস্থিতির সাথে দেশের লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ জড়িত। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ- পরিস্থিতির সাথে বিনিয়োগ ও সামাজিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শেয়ার বাজার, বিনিয়োগ এবং সামাজিক-রাজনৈতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক সহাবস্থানমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সমঝোতার পাশাপাশি শেয়ার বাজারের দরপতন ঠেকাতে হবে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেয়ারবাজার


আরও
আরও পড়ুন