Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঐক্যফ্রন্টের জনসভা উন্মুখ চট্টগ্রামবাসী

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:২৮ পিএম

ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে আগামীকাল (শনিবার) জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মহাসমাবেশে যোগ দিতে উন্মুুখ চট্টগ্রামবাসী। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় নেতারা কী নির্দেশনা দেন, তা নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। ভয়-আতঙ্ক ছড়িয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মনোবল ভাঙতে প্রশাসনের নানা তৎপরতার মধ্যেও সর্বত্রই ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার এই কর্মসূচি সফলে একাট্টা ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। মহাসমাবেশের বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এখনও মিলেনি প্রশাসনের অনুমতি। শেষ সময়ে হলেও সরকার অনুমতি দিতে বাধ্য হবে-এমন প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে সবাই।
মহানগর থেকে জেলা সদর উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও চলছে নানা প্রস্তুতি। সকল বাধা বিপত্তি ঠেলে মহাসমাবেশ সর্বাত্মক সফলে এককাতারে বিএনপিসহ শরিক দলের নেতাকর্মীরা। বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তি তথা ‘ডানপন্থিদের’ দুর্জয় ঘাঁটি হিসাবেই দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত। বিগত দিনে যেকোন আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রগামী ছিলো চট্টগ্রাম। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আশা করছেন আগামীকালের জনসভায় মানুষের ঢল নামবে। এই অঞ্চলের মানুষ এই মহাসমাবেশে যোগদিতে এখন উন্মুখ হয়ে আছে। জাতীয় নেতাদের নির্দেশনা আর কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রস্তুত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আন্দোলন সংগ্রামের ঐতিহ্যের নগরী বীর চট্টলা আরও একটি ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার অপেক্ষায়। জনসভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা ড. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সেক্রেটারি চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ছাড়াও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতারা জনসভায় বক্তব্য রাখবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জনসভা সফল করতে বন্দরনগরীসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় প্রস্তুতি সভা, গণসংযোগ অব্যাহত রয়েছে। কর্মসূচিকে ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতারা ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছেছেন। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারাও আজকের মধ্যে চট্টগ্রাম পৌঁছে যাবেন বলে জানিয়েছেন মহানগরীর নেতারা।
একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে এ বিভাগীয় জনসভার কর্মসূচি দেয় নবগঠিত ঐক্যফ্রন্ট। সিলেটে বুধবার প্রথম জনসভায় ব্যাপক সাফল্যের পর চট্টগ্রামের এ মহাসমাবেশকে ঘিরে আশাবাদী ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, লালদীঘি ময়দানের মহাসমাবেশ সফল করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশে বাকস্বাধীনতা নেই, গণতন্ত্র নেই, ভোটের অধিকার নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। দুঃশাসনে অতিষ্ঠ জনতা শ্বাসরুদ্ধকর এ অবস্থার পরিবর্তন চায়। পরিবর্তনের প্রত্যাশা নিয়ে কাল তারা লালদীঘি ময়দান নয় শুধু চট্টগ্রামের রাজপথে নেমে আসবে। জনতার অভূতপূর্ব মহাসম্মেলন হবে ঐক্যফ্রন্টের জনসভায়। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। চলমান আন্দোলনেও চট্টগ্রাম ইতিহাস গড়বে। জাতীয় নেতারা যে নির্দেশনা দেবেন তা বাস্তবায়নে জানবাজি রেখে বিএনপি এবং শরিক দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে।
এক সপ্তাহ আগে জনসভা অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে কোন অনুমতি দেয়নি। গতকাল এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবর রহমানের সাথে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করেন। সাক্ষাত শেষে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শুক্রবার সকালের মধ্যেই অনুমতির বিষয়ে আমাদের জানিয়ে দেবেন বলে পুলিশ কমিশনার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, জনসভার অনুমতি পাব এ ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী। লালদীঘি ময়দানের জনসভাকে ঘিরে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জনতার বাধভাঙ্গা ঢল নামবে লালদীঘি ময়দানে। আশা করি সরকার আর জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াবে না।
মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথে লালদীঘি ময়দানে জনসভা মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করা হবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার আমাদের বেকায়দায় ফেলতে অনুমতি দেয়া নিয়ে টালবাহানা করছে। তবে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি ঐক্যফ্রন্টের রয়েছে। তিনি আশাবাদী অনুমতি পাওয়া মাত্রই লালদীঘি ময়দান জনসভার জন্য প্রস্তুত করা হবে। জনসভাকে ঘিরে ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি আতঙ্ক ছড়াতে প্রশাসনের তৎপরতা থেমে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতকালও নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার ও হয়রানির মধ্যেও বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা জনসভা সফলে মাঠে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
বিএনপি নেতারা জানান, গত কয়েকদিনে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শামীম ও মহানগর বিএনপির সেক্রেটারী আবুল হাশেম বক্করসহ ৩৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত রোববার নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনসহ ১৫০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরমধ্যে ডা. শাদাতসহ ২৪ নেতা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। পুলিশ প্রতিরাতেই বিএনপি নেতাদের বাসাবাড়িতে অভিযান পরিচালনা করছে। এদিকে আজ বিকেল ৩টায় নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে সর্বশেষ প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা ঐক্যফ্রন্টের নেতারা যোগ দেবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ