Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র ‘নির্ভয়’ ব্যর্থ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:২০ পিএম | আপডেট : ১২:১৪ এএম, ৩০ অক্টোবর, ২০১৮

ভারতের তৈরি সাবসনিক ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র ‘নির্ভয়’ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি দুর্দান্ত অস্ত্র হতে পারতো। কিন্তু পরীক্ষায় একের পর এক ব্যর্থতা ক্ষেপনাস্ত্রটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখেছে। স্থলভাগে হামলা চালানোর উপযোগি করে এই ক্ষেপনাস্ত্র তৈরির চিন্তা করা হয়। এটি জল, স্থল ও আকাশ থেকে ছোঁড়া যাবে এবং ৩০০ কেজি ভার নিয়ে ০.৬-০.৭ ম্যাচ (৭১৭-৮৩৫ কি.মি. প্রতি ঘন্টা) গতিতে ছুটতে পারবে। কিন্তু এই প্রকল্প যাত্রা শুরুর পর থেকে অনেক পরীক্ষা চলানোর পরও প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়নি।

নির্ভয় কর্মসূচি বাতিল করা হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে এখন। এর সবশেষ পরীক্ষা চালানো হয় ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর। পরীক্ষাটি সফল হয়েছে বলে দাবি করা হলেও তার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। নির্ভয় হলো দুই-ধাপবিশিষ্ট ক্ষেপনাস্ত্র যা ২৪টি বিভিন্ন ধরনের পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনের ক্ষমতা রাখে। এর পাল্লা ১০০০ কিলোমিটার এবং এর ওজন ১৫০০ কেজি। এটি ৬ মিটার লম্বা।

ডিআরডিও’র দাবি অনুযায়ী ১০০০ কিলোমিটার শ্রেণীর ক্রুজ মিসাইল ‘নির্ভয়’ শত্রুর ভূখণ্ডের (পাকিস্তানের) গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম। এটি ০.৭ ম্যাচ গতিতে মাত্র ১০০ মিটার উচ্চতা দিয়ে উড়ে যেতে পারবে। কাগজে লেখা এর বৈশিষ্টগুলো চমৎকার। কিন্তু সবার আগে একে কার্যকর হতে হবে। পরীক্ষার সবগুলো প্যারামিটার সন্তোষজনক হলেই ক্ষেপনাস্ত্রটি ব্যাপক উৎপাদনের জন্য বলা যাবে। এ পর্য়ন্ত নির্ভয়ের পাঁচটি পরীক্ষার মধ্যে দুটিকে ব্যর্থ বলে ঘোষণা দেয়া হয়। একটি পরীক্ষার ফল কখনোই প্রকাশ করা হয়নি। পঞ্চম ও শেষ পরীক্ষা সফল দাবি করা হলেও এর ফল প্রকাশ করা হয়নি।

নির্ভয়ের সমস্যা: পাকিস্তানের ল্যান্ড এ্যাটাক বাবুর মিসাইল প্রতিরোধের চিন্তা থেকে নির্ভয় ধারণা তৈরি হয়। পরীক্ষাকালে একের পর এক ব্যর্থতার সম্মুখিন হয় নির্ভয়। ২০১৩ সালের মার্চ থেকে পরীক্ষা শুরুর পর তিনটি পরীক্ষা ব্যর্থ হয়। বাঙ্গালুরুর এরোনটিক্যাল ডেভলপমেন্ট এস্টাব্লিশমেন্ট এই ক্ষেপনাস্ত্র তৈরি করেছে। ২০১২ সালের অক্টোবরে প্রথম পরীক্ষা চালানোর কথা থাকলেও উৎক্ষেপকে পরিবর্তন আনার কারণে তা স্থগিত করা হয়। সবকটি পরীক্ষা চালানো হয় চন্ডিপুরের ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জে।

প্রথম পরীক্ষাটি চালানো হয় ২০১৩ সালের ১২ মার্চ। সফলভাবে উৎক্ষেপনের পর নির্ধারিত ০.৭ ম্যাচ গতিতে ১৫ মিনিট স্বাভাবিকভাবেই এটি চলতে থাকে। কিন্তু এরপরেই মিসাইল তার ট্রাজেকটরি থেকে অন্য দিকে ঘুরে যায়। ফলে কমান্ড সেন্টার মাঝ পথেই মিসাইলের ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে বাধ্য হয়।

দ্বিতীয় পরীক্ষা চালানো হয় ২০১৪ সালের ১৭ অক্টোবর। এ সময় ক্ষেপনাস্ত্রটি সকল প্যারামিটার পূরণ করে সকল ১৫ ওয়ে-পয়েন্ট সম্পন্ন করে। এক ঘন্টা ১০ মিনিটের মধ্যে ক্ষেপনাস্ত্রটি ১০০০ কিলোমিটারের বেশি পথ ভ্রমণ করে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি জাগুয়ার ফাইটার জেট থেকে ক্ষেপনাস্ত্রের উড্ডয়ন ভিডিও করা হয়।

২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর তৃতীয় পরীক্ষা চালানো হয়। প্রাথমিক সব গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন সফলতার সঙ্গে শেষ করে মিসাইলটি প্রত্যাশিত উচ্চতায়ও পৌছায়। কিন্তু উড্ডয়নের ১১ মিনিটের মাথায় এটি বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। ১০০০ কিলোমিটার পাল্লার মধ্যে মাত্র ১২৮ কিলোমিটার পারি দিতে পেরেছিলো এটি।

২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর চতুর্থ পরীক্ষাটি চালানো হলেও এর ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। জানা যায় মিসাইলটি উৎক্ষেপনের দুই মিনিটের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। ফলে মাঝ আকাশেই এটি ধ্বংস করে ফেলতে হয়। মিসাইলের উপাদানের সঙ্গে জড়িত হার্ডওয়্যার সমস্যাকে এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ি করা হয়। সর্বশেষ গত বছর ৭ নভেম্বর একটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা উৎক্ষেপক থেকে এটি উৎক্ষেপন করা হয়। ডিআরডিও’র এক বিবৃতিতে এই পরীক্ষাকে সফল বলে দাবি করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার বিস্তারিত বিবরণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ