Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সুসংহত করেই বিজয়ী হতে হবে- ড.কামাল হোসেন

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী আগামীকাল অবস্থান জানাবেন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৩ এএম

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সুসংহত করে জনগণের ক্ষমতা তাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ জাতির বিজয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। গতকাল জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। একই অনুষ্ঠানে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, তার দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করবে কিনা তা ৫ নভেম্বরের মধ্যে জানাবেন। তিনি ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের বিষয়ে তার অবস্থান জানানোর জন্য ড.কামাল হোসেনের কাছে একদিন সময় চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সম্পৃক্ত হবেন কী না, তা দলের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা করে ৫ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের সাথে দেখা করে জানাবেন।
এর আগে গত ১ নভেম্বর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্টকে নীতিগত সমর্থন দিয়েছেন বলে জানান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তার প্রেক্ষিতে কাদের সিদ্দিকীও বলেছিলে ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়া না দেয়ার বিষয়ে তার দলের অবস্থান তি ৩ নভেম্বর আয়োজিত জেল হত্যা দিবসের অনুষ্ঠানে জানাবেন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ভোট হলে ড. কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসনেও (টুঙ্গিপাড়া) নির্বাচিত হবেন। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন কিছুদিন আগেও হয়তো কোথাও নির্বাচন করলে বিজয়ী হতে পারতেন না। কিন্তু, আজ তিনি শুধুমাত্র কামাল হোসেন নন। তিনি আজ সারা দেশের মানুষের নেতা। এখন তিনি বাংলাদেশের যে কোন স্থানে দাড়াবেন সেখানেই জয়ী হবেন। এমনকি আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি তিনি টুঙ্গিপাড়ায় দাঁড়ালেও শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে নির্বাচিত হবেন। আওয়ামী লীগ এখন ১৯ আসনের বেশি পাবে না।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, কয়েকদিন আগে দুই রিকশাওয়ালা ও এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আমাকে ড. কামাল সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন। আমিও চ্যালেঞ্জ করে বলছি, শেখ হাসিনা কামালের সঙ্গে এক আসনে নির্বাচন করলে তিনি পরাজিত হবেনই।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। তিনি যে দিন আলোচনায় বসেছেন সে দিনই জাতীয় ঐক্যের বিজয় রচিত হয়েছে। এই বিজয় আর কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আমাকে যোগ দিতে বলেছেন। আমি যদি যোগ দেই, তাহলে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করবো। আর যদি আপনাদের সঙ্গে নাও থাকতে পারি, তাও জানিয়ে দেবো। তবে, যেদিন প্রধানমন্ত্রী আপনাদের সঙ্গে সংলাপ করেছেন, আপনাদের বিজয় হয়ে গেছে। আমি যেখানেই থাকি না কেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের লোকেরা সারা দেশে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিল। ছাত্রীর শরীরে কালি দিল। তারা শুধু ছাত্রীদের মুখে কালি দেয়নি, গোটা জাতির মুখে কালি মেখে দিয়েছে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জাতীয় ৪ নেতার স্বপ্নকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর চিন্তাতেও ছিল জাতীয় ঐক্য। এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলবো আমরা। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার অনেকে চেষ্টা করেছে। অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু কেউ পারেনি। স্বৈরাচারও চেষ্টা করেছে পারেনি। আগামীতেও কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। বাঙালিকে কেউ পরাজিত করতে পারেনি। জাতির পিতা সেটা প্রমাণ করেছেন।
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব মাঠে নেমেছি। জয়লাভ করা ছাড়া ঘরে ফিরে যাবো না। জনগণ যখন মাঠে নেমেছে, তখন আন্দোলনের ফসল ঘরে না তুলে ফিরে যাবে না। দাবি আদায়ে যা যা করা দরকার, তা করা হবে।
দেশে নির্বাচন না হলে তার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হবে বলে হুশায়ারি দিয়ে আ স ম রব বলেন, সব দলের অংশগ্রহণ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হলে, নিরপেক্ষ সরকার সৃষ্টি না হলে, তার জন্য নির্বাচব না হলে এর দায় দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর সরকারকে বহন করতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনার সঙ্গে সংলাপ করে আসার পর আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আপনার সরকার যদি ফাঁসির আসামিকে বিদেশে পাঠাতে পারে, তাহলে কেন রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে পারবে না?
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এ সরকার মিথ্যাবাদী, ভন্ড, প্রতারক। তারা মুখে বলে এক তাদের মনে আছে অন্য কিছু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ চলাকালে খাবার খাওয়ার ছবি গণমাধ্যমে কি ভাবে গেল তা প্রশ্ন রেখে মান্না বলেন, সংলাপে কোনো সাংবাদিক ছিলেন না। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে আমাদের চা খাওয়ার ছবি বাইরে গেল কী করে? শুধুমাত্র ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের চা খাওয়ার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। আমাদের হেয় করতেই এটা করা হয়েছে। তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, এভাবে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পার পাওয়া যাবে না। বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এই বার ঘুঘু তোমার বধিব পরাণ। আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চলছে, এ লড়াই চলবে। জনগনের এই আন্দোলনের বিজয় হবেই।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এতদিন আমাদের বলা হতো এদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জিয়াউর রহমান। এর পর বলা হয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে বেগম খালেদা জিয়া। এখন আমরা জানলাম যে, স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের প্রথম প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ তিনিইতো ড. কামাল হোসেনকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। ড. কামাল যদি রাজাকার হন তাহলেতো বলতেই হবে বঙ্গবন্ধু প্রথম রাজাকারদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছেন। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের এত ধৃষ্টতা হয় কি করে? তার বিরুদ্ধে কেন কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, গণভবনে আমরা কোনো কিছু খেতে চাইনি। কিন্তু, আমাদের খাবারের অনুরোধ করে, তার ছবি তুলে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেই এটি করা হয়েছে।
আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক, বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, গণফোরামের কার্যকরি সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, নাসরিন সিদ্দিকী, শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী।#



 

Show all comments
  • ইউসুফ আলী ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:১১ এএম says : 1
    ঐক্যফ্রন্টের সংলাপকে ছোট করার জন্য, ফালতু করার জন্য অনেককেই ডাকা হচ্ছে। ক্ষমতায় বসে এসব রং তামাশা হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঐক্যফ্রন্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ