Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গার্মেন্ট খাতে দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টিতে উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

দেশের প্রধানতম রফতানি খাত গার্মেন্ট শিল্পের সম্ভাবনার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। এ খাত থেকে মোট রফতানির ৮০ ভাগের বেশি আয় হয়। ব্যাপক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে খাতটির ভূমিকা অপরিসীম। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে এ খাত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির মাধ্যমে খাতটিকে ধ্বংসের পায়তারা করা হচ্ছে। খাতটির কর্মপরিবেশসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অভাবের অভিযোগে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স বেশ তৎপর হয়ে ওঠে। বিদেশের আমদানিকারকরাও বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্ট আমদানি না করার হুমকি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র তো জিএসপি সুবিধাই বন্ধ করে দেয়। এতসব প্রতিকূলতার মধ্যেও গার্মেন্ট খাতটি এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী বহু গার্মেন্ট কারখানা সংস্কার করা হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া চালু আছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ শতাংশ কারখানা এ সংস্কারে সাফল্য দেখিয়েছে বলে পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। এর ফলে কারখানাগুলোতে দক্ষ শ্রমিকেরও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে, গার্মেন্টস শিল্প খাতে শতকরা ২৫ ভাগ দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে উৎপাদিত অধিকতর ফ্যাশনেবল, বৈচিত্রময় এবং জমকালো পোশাক কিনতে আগ্রহী। এজন্য কারখানাগুলোকে আরও দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। ২০২০ সালের মধ্যে কারখানাগুলো যদি ৩ গুণ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে চায় তবে এর বিকল্প নেই। এজন্য অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন, মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কাঁচামালের জোগান সহজতর করা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পণ্যসামগ্রী যথাসময়ে আমদানি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে এ খাত আরও গতিশীল এবং লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।
দেশের গার্মেন্ট খাত মূলত অর্ধ দক্ষ, অদক্ষ এবং শিক্ষানবিশ শ্রমিকের মাধ্যমে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে। বলা যায়, কর্মক্ষেত্রে শিক্ষার মাধ্যমে গার্মেন্টের বিশাল শ্রমিক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। এ খাতে বর্তমানে প্রায় ৪৫ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত। খাতের ক্রমবর্ধমান বিস্তৃতির ফলে দক্ষ শ্রমিকের আরও প্রয়োজন হবে। এ প্রয়োজনীয়তা পূরণে নির্দিষ্ট কোনো ইনস্টিটিউট বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুব একটা নেই। অধিকাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে কারখানায় চাকরিরত অবস্থায় অথবা স্থানীয় বেসিক সুইং স্কুলগুলোতে। এ প্রশিক্ষণ একেবারেই প্রাথমিক। এমন শিক্ষানবিশ শ্রমিক দিয়ে দ্রুত পোশাক উৎপাদন করা একপ্রকার অসম্ভব। ফলে কারখানাগুলোতে দক্ষ শ্রমিকের সংকট দেখা দিচ্ছে। আবার উচ্চপদস্থ দক্ষ কর্মকর্তার ক্ষেত্রেও সংকট রয়েছে। এ সংকট পূরণ করা হচ্ছে বিদেশি বিশেষ করে ভারতের লোকবলের মাধ্যমে। এতে ব্যাপক হারে দেশ থেকে অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, খাতটির বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ শ্রমিক ও কর্মকর্তার সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠবে। বর্তমানে বিশ্বে চীনের পরই এ খাতে বাংলাদেশের অস্থান। চীন এ খাত থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিলে সুফল বাংলাদেশ পাবে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে, দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন। বিজিএমইএ এ খাত থেকে আগামী কয়েক বছরে যে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের আশা করছে, তা পূরণ করতে হলে দক্ষ শ্রমিক ও কর্মকর্তা তৈরি করার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে বিজিএমইএ যে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে, তা বলা যাবে না। অথচ এ সংস্থাটির উচিত ছিল দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টিতে একাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা। শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের নিজস্ব একটি ইনস্টিটিউট থাকলেও তা চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে সরকারও এ খাতটির দিকে যথাযথভাবে নজর দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। সরকার এ খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করেই যেন দায়িত্ব শেষ করেছে। খাতটিকে এগিয়ে নিতে এর অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, ঋণ সুবিধা, গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ ও নিরবিচ্ছিন্ন সুবিধার দিকগুলো উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও মালিক-শ্রমিকেরা সম্মিলিত প্রয়াসে এবং নিজেদের তাকিদেই খাতটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
দেশের বেশিরভাগ গার্মেন্ট কারখানা গড়ে উঠেছে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে। দক্ষ শ্রমিক সংকটের এটিও একটি কারণ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২০ সালের মধ্যে এ শিল্পের রফতানি বৃদ্ধি করতে হলে ৬০ লাখেরও বেশি দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন পড়বে। বর্তমানে যে সংখ্যক শ্রমিক রয়েছে, তা দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। ফলে এ খাতে আরও অধিক শ্রমিক নিয়োগ করতে এবং দক্ষ করে গড়ে তুলতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গার্মেন্ট কারখানার বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলে। এতে ঐসব অঞ্চলে বেকারত্ব যেমন ঘচবে, তেমনি দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টির সুযোগ হবে। এর পাশাপাশি, বড় বড় গার্মেন্ট কারখানা গ্রুপগুলোকে নিজস্ব উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। গার্মেন্ট খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারেরও অধিক কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ খাতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রমিক

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন