Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারাজীবন তিনি মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম তার সারাটা জীবন দেশ, দল, জনগণ ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তরিকুল ইসলামের চলে যাওয়া দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি আমাদের মাঝে থেকে চলে গিয়ে আমাদের বাকরুদ্ধ করে দিয়েছেন। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ও দলের কঠিন সময়ে তিনি চলে গেছেন। তরিকুল ইসলাম দল ও দেশের কাজ করেছেন। খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য সংগ্রাম করেছেন। অন্যায়ের সাথে কখনো তিনি আপস করেননি। ফলে দল হারালো উচ্চ মানের প্রজ্ঞাবান একজন নেতাকে। আর জাতি হারালো একজন জাতীয় নেতাকে। গতকাল (সোমবার) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মরহুম তরিকুল ইসলামের জানাজার নামাজের সময় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
এর আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতার লাশ শেষবারের মত রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আনা হলে সহকর্মীরা তার কফিনটি দলীয় পতাকায় ঢেকে দেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিএনপি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে তার কফিনে শ্রদ্ধা জানান। পরে মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, তাঁতী দল, ড্যাব, অ্যাব, মৎস্যজীবী দল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তরিকুল ইসলামের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের আগেই বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে তরিকুল ইসলামের জানাজা হয়। জানাজায় বিএনপি মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও বিএনপি নেতাদের মধ্যে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আমিনুল হক, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, ডা. এজেএম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, ভিপি জয়নাল আবেদীন, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মীর সরফত আলী সপু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, আমিরুল ইসলাম আলিম এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা জানাজায় অংশ নেন।
২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে মোস্তফা জামাল হায়দার, এম এ রকীব, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, আহসান হাবিব লিংকন, শামীম সাঈদী জানাজায় ছিলেন। জানাজা শুরুর আগ মুহূর্তে কাতারে দাঁড়ানো নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে দ্রুত তাকে কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে সকাল থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে বিনেপি কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ রাখা হয়। সেই সঙ্গে তোলা হয় শোকের কালো পতাকা। নয়া পল্টনে জানাজা শেষে বেলা সোয়া ১১টার দিকে সাবেক এই এমপি এবং মন্ত্রীর কফিন সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে আরেক দফা জানাজা হয়।
সেখানে জানাজায় অংশ নেন সংসদের প্রধান হুইপ আসম ফিরোজ, আওয়ামী লীগের এমপি শামসুল হক টুকু, কাজী নাবিল আহমেদ, বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান, এম মোরশেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মান্নান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন আলম, এনামুল হক চৌধুরী, শাহজাদা মিয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, মজিবুর রহমান সারোয়ার, নিজামউদ্দিন, এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, আলমগীর কবির, নূর মোহাম্মদ খান, আক্তারুজ্জামান, জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, এলডিপির কর্ণেল (অব.) অলি আহমেদ, রেদোয়ান আহমেদ, আবদুল করিম আব্বাসী, আবদুল গণি, শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ এমপি ও সরকারি কর্মকর্তারা।
পরে সংসদের পক্ষে প্রধান হুইপ আসম ফিরোজ, বিরোধী দলের পক্ষে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম এবং বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে নজরুল ইসলাম খান, এলডিপির পক্ষে অলি আহমেদ কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রোববার বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপেলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ তরিকুল ইসলাম। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থতায় ভূগছিলেন।
তরিকুল ইসলাম ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। তিনি যাশোর থেকে চার বার নির্বাচনে জিতে এমপি, চারদলীয় জোট সরকারের তথ্যমন্ত্রী এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে তিনি প্রথমে সমাজকল্যাণ এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আসার আগে তিনি ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তরিকুলের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোরে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পরও সক্রিয় ছিলেন বাম আন্দোলনে। স্বাধীনতার পর মওলানা ভাসানীর দলে থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের ডাকে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন তরিকুল। মৃত্যু পর্যন্ত এই দলেই ছিলেন। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে তরিকুল ইসলামের কফিন হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয় তার নিজের জেলা যশোরে। সেখানে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা শেষবারের মত তার কফিনে শ্রদ্ধা জানান। আসরের নামাজের পর ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে তাকে কারবালা কবরস্থানে দাফন করা হয়।
যশোর ঈদগাহে জানাজায় মানুষের ঢল
যশোর ব্যুরো জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের নামাজে জানাজায় মানুষের ঢল নামে। যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বিকাল থেকেই লোকেলোকারণ্য হয়ে ওঠে। ঈদগাহ মযদান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আশেপাশের রাস্তায় জানাজার কাতারে দাঁড়িয়ে যায় মানুষ। গতকাল বাদ আছর নামাজে জানাজা শেষে কারবালা গোরস্থানে তরিকুল ইসলামকে দাফন করা হয়। জানাজার আগে তরিকুল ইসলামের দুই পুত্র সান্তনু ইসলাম সুমিত ও বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখে তাদের পিতার জন্য দোয়া কামনা করেন। আগামীকাল বুধবার মরহুমের বাসভবনে দোয়া মাহফিলের ঘোষণা দেন।
জানাযায় অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মঈন খানসহ দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের সব জেলার বিএনপির নেতা ও কর্মীরা। যশোর পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুসহ রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ জানাযা শেষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি জানান দেয় তরিকুল ইসলাম ছিলেন একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা।
এর আগে হেলিকপ্টারে তরিকুল সলামের লাশ যশোরে আসে বিকাল ৩টায়। তাকে এক নজর দেখার জন্য তার বাসভবন যশোরের ঘোপে আত্মীয়-স্বজন, দলীয় নেতা-কমীদের উপচেপড়া ভিড় হয়। লাশ নেওয়া হয় জেলা বিএনপির কার্যালয় লালদীঘিরপাড়ে। সেখানে দলীয় নেতা ও কর্মীরা শেষ শ্রদ্ধা জানান।



 

Show all comments
  • সাজ্জাদ ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:০৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তাকে জান্নাতবসী করুক
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abdul Karim ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:৫০ এএম says : 0
    ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ