Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মামলা ধরপাকড় চলছেই

| প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে প্রথম দফা সংলাপের সময়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গায়েবি মামলার তালিকা চাওয়ার পাশাপাশি গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধের আস্বাস দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফা সংলাপের সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে গায়েবি মামলার বিশাল এক তালিকাও প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক আশ্বাস এবং দ্বিতীয় দফা সংলাপে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের কথা বলা হয়েছে, তাতে সঙ্গত কারণেই প্রত্যাশা করা হয়েছিল মামলা ও ধরপাকড় বুঝি এবার বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা ভিন্নতর। গত ৬ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় আসা-যাওয়ার পথে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল প্রকাশিত একাধিক রিপোর্টে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সাথে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পর একদিনে শুধুমাত্র ঢাকায় বিএনপির চারশতাধিক নেতাকর্মীকে নাশকতার মামলায় আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে প্রায় সকলের জামিনের আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
একদিকে প্রধানমন্ত্রী তার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থা রাখতে বলেছেন, অন্যদিকে সংলাপ চলমান অবস্থায় খোদ রাজধানীতে বিএনপির শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল সামনে রেখে যখন প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আস্থায় আনতে মামলা, গ্রেফতার হয়রানি বন্ধ থাকার কথা সেখানে গ্রেফতার, হয়রানি ও রিমান্ডে নেয়ার তৎপরতা আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস ও পুলিশের তৎপরতার মধ্যে সুস্পষ্ট অসঙ্গতিই ধরা পড়েছে। দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহীর মৌখিক আশ্বাসের কি কোনো মূল্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে নেই? এর মধ্য দিয়ে তারা কি প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রীকেই হেয় করছে না? প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস শুধু কথার কথা নয়। সরকারের সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টিকে যথার্থ মূল্য না দিলে বিরোধিদল ও জনগণ কিভাবে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের কথা ও প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখবে? সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে লাখো মানুষের সমাবেশ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরেরদিন অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংলাপের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী এই সমাবেশের প্রশংসা করেছেন বলে পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। তাহলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের পরের দিন শত শত বিএনপি কর্মীকে নাশকতার মামলায় গ্রেফতারের হেতু কি? এমন একটি স্পর্শকাতর সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ ছাড়াই পুলিশ এ ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যেতে পারে কি?
সরকার মুখে মুখে বলছে সব রাজনৈতিক দলকে আস্থায় এনে সকলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে দুই দফা সংলাপের ফলাফল এবং সমাবেশকে ঘিরে পুলিশের তৎপরতার মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচন যেমনই হোক, কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে হাজার হাজার গায়েবি মামলায় বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে সন্ত্রস্ত রাখার নজির আছে কিনা আমাদের জানা নেই। এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা বাস্তবায়নের প্রতীকে পরিনত হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্টদের এ কথা অজানা নয় যে, বিএনপিই হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মূল শক্তি। বিএনপি’র শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম এজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এহেন বাস্তবতায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আস্থায় রেখে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকর্মীদের মিথ্যা মামলায় হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কারনে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে ভীতির মধ্যে রেখে, গায়েবি মামলা ও অজ্ঞাতনামা আসামীর তালিকায় ফেলে গ্রেফতার নির্যাতনের চলমান বাস্তবতা মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের পরিস্থিতি দেশের গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও বড় ধরনের প্রতিবন্ধক। বিরোধিদলের নেতাকর্মী ও সমর্থক হওয়ার কারণে মামলা ও গুম-খুনের শিকার হওয়ার ঘটনাগুলো ধামাচাপা থাকছেনা। দেশের গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এসব সংবাদ ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিকে জননিরাপত্তাহীনতা বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে এবং দেশের বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বাণিজ্যেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। দুই দফা সংলাপে কোনো বাস্তব ফলাফল পাওয়া না গেলেও সরকার এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তরফ থেকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। উল্লেখের অপেক্ষা রাখেনা, সংলাপ ও সমঝোতার প্রয়াস ব্যর্থ হলে গভীর সংকটে পড়বে দেশ। বিরোধিদল ও জনগনকে আস্থায় রেখে একটি সফল ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রধান দায়িত্ব সরকারের। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছার প্রাথমিক প্রতিফলন হবে বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা, গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মামলা


আরও
আরও পড়ুন