Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুশাসন ছাড়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না

সিপিডি’র সংলাপ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

সামগ্রিকভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ও বাড়বে না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষনা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, কর আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করছে এনবিআর। এরই অংশ হিসেবে করদাতা বাড়াতে ঢাকার ফ্ল্যাট বাসায় খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আবাসিক প্রতিনিধি রাগনার গুডমান্ডসন এবং মেট্টোপলিটন চেম্বারের সভাপতি নিহাদ কবির। অনুষ্ঠানে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। প্রবন্ধে বলা হয়, ৬৫ শতাংশ মানুষ মনে করে এনবিআরের কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি রয়েছে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসন পরিপূরক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশে সুশাসন জরুরি। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে দেশে সুশাসন নেই, বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। অপরাধীদেরকে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে, সেখানে এনবিআর চেয়ারম্যান রাজস্বখাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তিনি বলেন, বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিকে কর ছাড় দেয়া হয়। এছাড়াও কেউ অপরাধ করেও শাস্তি পায় না। এ অবস্থায় সামগ্রিকভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা না করে কর আদায়ে ন্যায় বিচারের কথা বলে কোনো লাভ নেই। দেশে বিদেশি সহায়তা নিয়ে কথা আসছে। কিন্তু বিদেশী নেয়া হবে না এটি বলার সক্ষমতা এখনও তৈরি হয়নি। কারণ দেশীয় অর্থায়নে পদ্মাসেতু করায় দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ স্থির হয়ে আছে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে বিদেশি সহায়তার বেশিরভাগই ব্যবহার হচ্ছে ভৌত অবকাঠামোখাতে। সে তুলনায় সামাজিক অবকাঠামোখাতে সহায়তার ব্যবহার একেবারে কমে গেছে। বিশেষ করে শিক্ষা স্বাস্থ্যখাতে বিদেশি সহায়তার ব্যবহার কম। অন্যান্য বক্তারা বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে কার্যকর সংসদ ও আইনের শাসন জরুরি। সরকারকে এটি নিশ্চিত করতে হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের বাজেটের লক্ষ্যে পূরণের জন্য করে আওতা বাড়াতে এনবিআর এই পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতি বছর সরকারে বাজেটের আকার বাড়ছে। তার জন্য করের আওতা বাড়াতে হচ্ছে। আর তাই করে আওতা বাড়ানোর একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। তা হচ্ছে-ঢাকা শহরের যত ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে, এগুলো জরিপ করা হবে। এই ফ্ল্যাট ও বাড়ির মধ্যে থাকা ভাড়াটে ও ফ্ল্যাটের মালিকদের সবাইকে রিটার্নের মাধ্যমে আগামী ৬ মাসের মধ্যে আওতায় নিয়ে আসা হবে। তার জন্য একটি টিম কাজ করছে। পাশাপাশি ঢাকার বাইরে অফিসগুলো উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। উপজেলার ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজনকে করের আওতায় আনার হবে। তিনি বলেন, সরকার কাস্টমস, ভ্যাট এবং ট্যাক্স এই তিনটি সোর্স থেকে রাজস্ব আহরণ করে। কিন্তু বিশ্বায়নের ফলে আগামীতে কাস্টমস ডিউটি কমবে। তাই ইনকাম ট্যাক্সকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর করের আওতা বাড়ানোর জন্য রিটার্নধারীদের সংখ্যা বাড়াতে। মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সারা দেশে এখন ই-টিআইএনের সংখ্যা ৩৫ লাখের বেশি। কিন্তু তার মধ্যে ২০ লাখ রিটার্ন দিচ্ছে না। অন্যতম কারণ কর নিয়ে এক ধরনের ভয় আছে। তাই করদাতাবান্ধব এনবিআর গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, এর মধ্যে ট্যাক্সের যারা আছে তাদের প্রশিক্ষিত করা, মোটিভেট করা এবং জনবল বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি। আশা করি এর সুফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তারা আমাকে সহায়তা করছে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর মেম্বরদেরকে একেবারে বের করে দেয়া সম্ভব নয়।
রাগনার গুডমান্ডসন বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বিপরীতে বাংলাদেশে কর আদায় একেবারে কম। জিডিপির অনুপাতে মাত্র ৯ শতাংশ কর আদায় হয়। দক্ষিণ এশিয়াতে এটি সর্বনিম্ন। ফলে কর আদায় বাড়াতে হবে।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা বলছে। কিন্তু দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়েনি। আবার লেবার সার্ভে রিপোর্ট বলছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে। ফলে সঙ্গে অর্থনীতির স্বাভাবিক হিসাবের মিল পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, কর আদায়ে বড় ধরনের দুর্বলতা রয়েছে। কারণ ২০১৭ সালে নেপালের মাথা পিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩৩০ মার্কিন ডলার। কর আদায় জিডিপির ১০ শতাংশের কম। কিন্তু আলোচ্য সময়ে নেপালের মাথা পিছু আয় ছিল ৭৩০ মার্কিন ডলার। আর কর আদায় হয়েছে জিডিপির ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ কম আয় করেও তারা বেশি কর আদায় করতে পারছে। ফলে এখানে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে কর আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। এ সময়ে কর নীতি ও কাঠামোয় পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, কর ব্যবস্থা নিয়ে ১ হাজার মানুষের মধ্যে জরিপ চালিয়েছে সিপিডি। এরমধ্যে ৩২ শতাংশ মানুষ আয় কর দিচ্ছে। জরিপে মতামত দেয়া ৬৫ শতাংশ মানুষ মনে করে এনবিআরের কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি রয়েছে। ৫০ শতাংশ মানুষ মনে করে এনবিআরের কর ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল। উচ্চ আয়ের ২৫ শতাংশ মানুষের একতৃতীয়াংশ গত বছর আয়কর দেয়নি। যারা দিয়েছেন, তারাও পুরোপুরি দেননি। কর ফাঁকি দিয়েছেন। জরিপের দেখানো হয়, ৭৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, কর ব্যবস্থায় ধনী-গরিবের মধ্যে পক্ষপাতদুষ্ট। ৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন এনবিআরের সেবা ও তার গুনগতমান বাড়ালে জনগন কর দিতে উৎসাহিত হবে। সিপিডির সুপারিশে বলা হয়, কর অফিসকে একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করে মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ধনী অথচ কর ফাঁকি দেন এমন ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সমতাভিক্তিক কর ব্যবস্থা বিকশিত করা জরুরি। এক্ষেত্রে অধিকতর ন্যায্য এবং আধুনিক সম্পত্তি ও সম্পদ কর চালু করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংলাপ

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১০ জুন, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ