Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রতারিত মালয়েশিয়া ফেরত কর্মীদের আহাজারি

শামসুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

প্রতারণার শিকার কর্মীরা তিনদিন না খেয়ে মালয়েশিয়া থেকে দেশে এসে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। প্রতারক চক্র এসব কর্মীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন সাড়ে তিন থেকে সর্বোচ্চ পৌনে চার লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। ফিরে আসা এসব নিরীহ কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য দালাল চক্রের পেছনে ঘুরেও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না। আগামী ২৫ নভেম্বর তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ অক্টোবর ৬৩ জন কর্মীকে প্রান্তিক ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরিজম এসপিপিএ-এর চাহিদাপত্র এনে বিপ্লব ইন্টারন্যাশনাল ও বারাকাত ডাইনামিক ওভারসীজ এ্যামপ্লয়মেন্ট এজেন্সীর মাধ্যমে বিএমইটি থেকে বর্হিগমন ছাড়পত্র নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠায়। কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে পৌঁছলে সেখানে অবস্থানরত কথিত দালাল বাদেলুর রহমান খান সুপারম্যাক্স কোম্পানীকে প্রাপ্য রিংগিট দেননি। ফলে ওই কোম্পানীর লোকজন এসব কর্র্মীকে রিসিভ করেনি। তিন দিন না খেয়ে তারা অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এসব কর্মীকে ১৩ অক্টোবর রাতে একটি ফ্লাইটে করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।

মালয়েশিয়া বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসা মাগুরার মোহাম্মদপুর থানার শফিকুল কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বায়রার সাবেক মহাসচিব স্বপনের ক্যাথারসীজ-এর মাধ্যমে আলফাডাঙ্গা থানার চরপাসুরিয়া গ্রামের দালাল টুকু ও তার বিয়াইয়ের মাধ্যমে তিন লাখ ৬৫ হাজার টাকা দেন। কিন্তু স্বপ্নের মালয়েশিয়ায় গিয়ে বিমানবন্দরে তিন দিন না খেয়ে প্রবেশ করতে না পেরে ফেরত এসেছি।

ফরিদপুরের মোস্তাফিজুর খান জানান তিন লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে গেলেও পৌনে তিন লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে দালাল চক্র। ফরিদপুর সদরের জামিল শেখ ঋন করে তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে গেলেও দেশে ফেরত আসার পর দালাল আউয়াল ও তার ছেলে সুজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, দশ সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ায় গিয়েও ভাগ্যে চাকরি জোটেনি।

প্রতারণার শিকার এসব কর্মীর মধ্যে ইর্স্টান বিজনেস এসোসিয়েট লিমিটেডের ২৬ জন রয়েছে। ইর্স্টান বিজনেস এসোসিয়েটের স্বত্বাধিকারী ওয়ালী উল্লাহ জাহিদ জানান, মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী দালাল ইঞ্জিনিয়ার বাদেলুর রহমান খান সুপারম্যাক্স কোম্পানীকে লাখ লাখ রিংগিট পরিশোধ না করে গা-ঢাকা দেয়ায় কোম্পানীর লোকজন কুয়ালালামপুর বিমান বন্দর থেকে ৬৩ জন কর্মীকে গ্রহণ করেনি। বাদেলুর রহমান ২৬ জন কর্মীর প্রায় ৭০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে।

জাহিদ বলেন, প্রান্তিক ট্রাভেলসের মালিক গোলাম মুস্তাফা বিপ্লব ইন্টারন্যাশনাল ও বারাকাত ডাইনামিক ওভারসীজ এ্যামপ্লয়মেন্ট এজেন্সীর-এর কাগজপত্রের মাধ্যমে বিএমইটির ছাড়পত্র সংগ্রহ করে কর্মীদের মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিল। মালয়েশিয়ায় দশ সিন্ডিকেট কর্মী পাঠানোর সুযোগ পেয়েছিল জি টু জি প্লাসের মাধ্যমে। কিন্ত কিভাবে উল্লেখিত দুইটি রিক্রুটিং এজেন্সীর কাগজপত্র দিয়ে ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা উচিত।

বিপ্লব ইন্টারন্যাশনাল- এর স্বত্বাধিকারী এ কে এম জসিম উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, কে বা কারা জালিয়াতি করে আমার রিক্রুটিং এজেন্সীর কাগজপত্র দেখিয়ে এসব কর্মীর ছাড়পত্র বের করে তাদের মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিল। তিনি বলেন, ২০০৭ সালের পর থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাননি। এসব জালিয়াতির জন্য বিএমইটির মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ পেশ করেছেন বলেও জসিম উদ্দিন উল্লেখ করেন। বারাকাত ডাইনামিক ওভারসীজের স্বত্বাধিকারী কামরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, ৬৩ জন কর্মী কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসা সর্ম্পকে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে ফেরত আসা কর্মীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালয়েশিয়া ফেরত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ