Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন

| প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

জাতীয় ঐক্যফ্রণ্ট ও ২০ দলীয় জোট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে সব দলের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে এতদিন যে অনিশ্চয়তা ও সংশয় ছিল তা কেটে গেছে। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রণ্ট-২০ দলকে তাদের এই সিদ্ধান্তের জন্য অভিনন্দন জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বলেছেন, তাদের সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে। জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আন্দোলনের অংশ হিসাবে তাঁরা এই ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচনের তফসিল একমাস পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। নির্বাচনের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ ও প্রক্রিয়া সচারুরূপে এগিয়ে নেয়ার জন্য আরো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন, একথা নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও বলছেন। তারাও মনে করেন, তফসিল পিছিয়ে দেয়া উচিৎ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল পেছালে দলীয়ভাবে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। বলা বাহুল্য, প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় স্বাগত জানিয়েছেন এবং ওবায়দুল কাদের তফসিল পেছানোর ব্যাপারে যে ভাষায় কথা বলেছেন, সেটাই আসলে গণতন্ত্রের ভাষা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাকে শক্তিশালী করবে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করাই আমাদের লক্ষ্য। তার এ বক্তব্যে জনগণের অভিমত ও প্রত্য্যাশারই প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে তার এ বক্তব্যের জন্য আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানাই। আশা করি, এই গণতান্ত্রিক মনোভাব ও মানসিকতা শেষ পর্যন্ত অক্ষুন্ন থাকবে এবং অনুপ্রাণিত করবে অন্যদেরও।
জাতির একান্ত কামনা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক। সব দলের অংশগ্রহণ জাতীয় ঐক্যফ্রণ্ট-২০ দলের ঘোষণার মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েছে। এখন নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে হবে। তাহলেই তা গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য হবে। এ দায়িত্ব প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনের অক্ষমতা, অদক্ষতা, অদূরদর্শিতা ও পক্ষপাতমূলক ভূমিকার কারণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য হিসাবে প্রতিপন্ন হওয়ার নজির আমাদের দেশে আছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সরকার ও সরকারি দলের ক্ষমতা ধরে রাখার উদগ্র বাসনা এবং সেই বাসনা চরিতার্থ করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সহযোগির ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ফলেই ওই নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের শিক্ষা গ্রহণের অনেক কিছু থাকলেও সে শিক্ষা গ্রহণে নির্বাচন কমিশন কতটা আন্তরিক ও ইচ্ছুক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর প্রায় সকল মহল থেকে বলা হয়েছিল, নির্বাচন কমিশনের বড় কাজ হবে, জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করা। এই আস্থা অর্জনে নির্বাচন কমিশনের যথাযথ প্রয়াস ও সদিচ্ছার পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার অধীনে এযাবৎ যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার বেশিরভাগই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার অন্যতম প্রধান পূর্বশর্ত হলো, সব দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। সেটা করতে নির্বাচন কমিশন সফল হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এদেশের মানুষ নির্বাচনকে উৎসব হিসাবে দেখে। উৎসবমুখর একটি নির্বাচন সম্ভব করে তুলতে হলে নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। উৎসবমুখর নির্বাচনের নিশ্চয়তায় রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানও জরুরি। এ দু’ক্ষেত্রেই যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও বলেছেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে। তবে এখনো পর্যন্ত তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি। সংলাপের পর ঢাকা ও রাজশাহীতে দুটি সমাবেশ করেছে যুক্তফ্রণ্ট। ওই দুটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাধাদান, হয়রানি, তল্লাশী ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। এক খবরে জানা গেছে, সংলাপের পর থেকে এ পর্যন্ত ২০ জেলায় বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১০০টি মামলা হয়েছে এবং শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা ও ধরপাকড় না করার প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়নি। এখন যেহেতু আইনশৃংখলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীন, কাজেই নির্বাচন কমিশনকেই মামলা ও গ্রেফতার, হয়রানি রহিত করতে হবে। বিস্ময়কর হলেও আমরা লক্ষ্য করছি, মানহানির জামিনযোগ্য মামলায় বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও আইনবিদ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিন হচ্ছে না। পক্ষান্তরে অভ্যন্তরীণ কোন্দেল ও সংঘর্ষের জেরে দু’জন নিহত হওয়ার ঘটনায় সরকারি দলের একজন নেতার গ্রেফতার হওয়ার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে জামিন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক্ষেত্রে কি প্রতিবেদন দিয়েছে, আদালতই বা কিভাবে জামিন মঞ্জুর করলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। আইনশৃংখলা বাহিনী ও আদালত যদি নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন না করে তাহলে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কথার কথাই হয়ে থাকবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বহুবারই বলেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যে অঙ্গীকার করেছে, উভয়কেই তা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেহেতু নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে, সুতরাং তাকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে নিরপেক্ষ থাকে, সবার ক্ষেত্রে সমআচরণ করে এবং সকল রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনবিধি মানতে বাধ্য হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।



 

Show all comments
  • mustafizur rahman ১৩ নভেম্বর, ২০১৮, ৫:৩৯ পিএম says : 0
    দয়া করে পেপারে নগ্ন ছবি যদি না দেন তবে খুশী হবো ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন