Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আ.লীগ একের পর এক আচরণবিধি ভঙ্গ করছে

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আচরণবিধি ন্যূনতম অনুসরণ করছেন না। এ বিষয়ে পুরোপুরি নির্বিকার সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন। শনিবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আচরণবিধিমালা ১৪ (২) ভঙ্গ করে শেখ হাসিনা গণভবনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত প্রামান্য চিত্র ‘হাসিনা: এ ডটার’স টেল’ ডকুমেন্টরি ফিল্মটি চারটি সিনেমা হলে মুক্তি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে একজন প্রার্থী। শেখ হাসিনা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সেই কারণে ইতিহাসের নানা ঘটনা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ক্ষমতার পালাবদল, ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এককেন্দ্রীকভাকে উপস্থাপন করা হয়েছে-যা আচরণবিধির চরম লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, আচরণবিধিতে বলা আছে-এধরণের কোন কর্মকান্ড পরিচালনা করা যাবে না। এতে প্রচারণা শুরুর আগেই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে। নিজে প্রার্থী হয়ে নিজেই কিভাবে আচরণবিধি ভঙ্গ করেন তা বোধগম্য নয়। রিজভী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিমালার ১২ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, ভোট গ্রহণের তিন সপ্তাহ পূর্বে কোন প্রকার প্রচার শুরু করা যাবে না। একই সঙ্গে বিধিমালার ১০ (ঙ) ধারানুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রার্থীর ছবি বা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণামূলক কোন বক্তব্য দেয়া যাবে না। এই ডকুমেন্টরি ফিল্মটি কি প্রচারণামূলক নয়? বিধিমালার ৭-এ পোস্টার ব্যহারের বিধি-নিষেধও আছে। সেখানে বলা আছে-সিটি কর্পোরেশন এবং পৌর এলাকার কোথাও পোস্টার সাঁটানোর কোন সুযোগ নেই। অথচ ডকুফিল্মটি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অর্থাৎ সিনেমা হলগুলোয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত পোস্টারসহ রীতিমতো মহড়া আকারে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
ধানমন্ডির সুধাসদনে অবস্থিত সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) পক্ষে ডকুফিল্মটি প্রযোজনা করেছেন রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি ও বিদ্যূৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ঢাকঢোল পিটিয়ে এসব করা হলেও নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শকের ভ‚মিকায়। এছাড়াও বিভিন্ন টেলিভিশন ও রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে সিটি কর্পোরেশনের স্থাপিত টিভি স্ক্রিনে শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আচরণবিধি ভঙ্গের অসংখ্য প্রমাণ থাকলেও নির্বাচন কমিশনের নীরব ভ‚মিকার কারণে নির্বাচনে ন্যূনতম লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হয়নি। বরং আচরণবিধি লঙ্ঘন না করলেও পরিকল্পিতভাবে ঘটনা তৈরী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়-এসব কর্মকান্ড চলতে থাকলে কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অবিলম্বে শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত ডকুফিল্মটি সিনেমা হলগুলো থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানান রিজভী। তিনি বলেন, কোনভাবেই নির্বাচনকালীন সময়ে এসব প্রচারণা চালানো যাবে না। পাশাপাশি গণভবনকেও নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচন কমিশন কেন এসব বিষয়ে দ্রুত আচরণবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকারের প্রতি নতজানু বলেই নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করতে কমিশন আগ্রহী নয়।
নির্বাচন তিনদিন পেছানোর দাবি: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিন সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানিয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট এমনকি আওয়ামী জোট ছাড়া অন্যান্য সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি করছে। কারণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের যাবতীয় কার্যক্রম এখনও বাকী রয়েছে, তফশীল ঘোষণার সপ্তাহ পরে চলছে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। অন্যান্য নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগই দেয়া হয়নি। নির্বাচনী গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দলবাজ কর্মকর্তারা বহাল আছেন, তাদের সরিয়ে দিয়ে নিরপেক্ষভাবে প্রশাসন সাজানো হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে সাজানো হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম কোন পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি কমিশন, মানুষের মন থেকে ভীতি দুর করতে পারেনি। ভোট দেয়া দুরে থাক, মানুষ নির্ভয়ে মুখ খুলে কথা বলবে এমন পরিস্থিতিও দেশে নেই। বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। বিরোধী দলগুলোর দাবি অনুযায়ী নির্বাচন তিন সপ্তাহ পেছানোরও দাবি জানান তিনি। রিজভী বলেন, বর্তমান সরকার এখনো বহাল আছে। একবার বলা হয় নির্বাচনকালীন সরকার ছোট করা হবে, আবার বলা হয় এ সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার, অথচ নির্বাচনকালীন সরকার বলতে সংবিধানে কিছুই নেই। সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করার পরও আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, উপদেষ্টা, এমপিরা উন্নয়ন কার্যক্রম উদ্বোধনসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন লাভজনক পদে তারা এখনও দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রী-এমপিদের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের কোন আচরণবিধি এখনও তৈরি হয়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তারা যারা ডিসি পদ মর্যাদার লোক তারা কিভাবে মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে এ প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে। তারা সর্বদা মন্ত্রী-এমপিদের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে আছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে তা মোটেও সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও সহিংসতায় তফসিল ঘোষনার পর ৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অর্ধশত। কই দেখলাম না তো নির্বাচন কমিশনকে কোন ব্যবস্থা নিতে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিন্দু পরিমাণ কোন পরিবেশ নেই। এতসব ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন পিছিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা অত্যাবশ্যক। রিজভী অভিযোগ করে বলেন, একজন কমিশনারের মেয়ের বিয়ে, তাই ৩ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কমিশন একমত হলে উক্ত কমিশনার বাধ সাধেন। এছাড়া জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বিশ্ব ইজতেমা তাই নির্বাচন পেছানো যাবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত করা হয়েছে। তাই বিরোধী দলগুলোর দাবি অনুযায়ী নির্বাচন তিন সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানাচ্ছি। এসময় তিনি সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরেন এবং অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদীন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, আসাদুল করীম শাহীন প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ