Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পরিবেশ সৃষ্টিই বড় চ্যালেঞ্জ

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

নির্বাচন কমিশনার মাহবুর তালুকদার গত মঙ্গলবার রির্টানিং অফিসারদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দুটি মন্তব্য করেছেন। এক. এই নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের আত্মমর্যাদার নির্বাচন। দুই. এই নির্বাচন জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার নির্বাচন। বোধকরি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচন কমিশন ও দেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তার এদুটি মন্তব্যের মাধ্যমে সেটাই তিনি স্পষ্ট করতে চেয়েছেন। প্রথম মন্তব্যে তিনি এই নির্বাচনকে নির্বাচন কমিশনের আত্মমর্যাদার নির্বাচন বললেও আসলে এ নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের আত্মমর্যাদা পুনরুদ্ধারের নিবাচনও বটে। কারো অজানা নেই, বিগত নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ইতিহাসের সর্বাধিক বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা ধূলায় মিশিয়ে দেয়। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কতটা পরাধীন, কতটা অজ্ঞাবাহী, কতটা দুর্বল ও অক্ষম হতে পারে, ওই নির্বাচনে তার নজির স্থাপিত হয়। ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারায় নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা শূণ্যে নেমে আসে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর তাই দায়িত্ব এসে পড়ে, নিজের ধুলিলুন্টিত মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা এবং জনগণের আস্থা অর্জন করা। এই মর্যাদা ও আস্থা পুনরুদ্ধারের একমাত্র উপায় হলো, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চত করা।
অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের অনেকগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ব্যক্তিক্রম বাদে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। যথেষ্ট সুযোগ পেয়েও নির্বাচন কমিশন তা কাজে লাগতে পারেনি। গত পৌনে দু’বছরে এই নির্বাচন কমিশন তার কথা-কাজ ও আচরণের দ্বারা বার বার পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশনের কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। জনগণ, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক মহল এই নির্বাচন কমিশনে হতাশ। অনেকে এমন কি এও বলতে চান, এ নির্বাচন কমিশন পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশনের চেয়েও দুর্বল ও আজ্ঞাবাহী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনার দক্ষতা ও সক্ষমতা কতটা দেখাতে পারবে এই নির্বাচন, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সংশয় রয়েছে। এহেন সংশয়ের জায়গায় দাঁড়িয়ে নির্বাচন কমিশনের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা কিংবা হৃত আত্মমর্যাদা পুনরুদ্ধারের কথা যখন বলা হয় এবং একজন নির্বাচন কমিশনার স্বয়ং বলেন, তখন সেটাকে তার আত্মউপলদ্ধির বা ব্যক্তি-অভিমতের বিষয় হিসাবে ধরে নেয়া ছাড়া উপায় থাকেনা। তার কথাটির যথার্থতা সম্পর্কে দ্বিমত না থাকলেও তা নির্বাচন কমিশন কতটা অজর্ন করতে পারবে, সেটা নিয়ে সকল মহলেই প্রশ্ন রয়েছে।
এও সবারই জানা, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না হয়ে হয় একটি শো। জনগণ ভোটাধিকার হারায়। বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় ১৫৪ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যান। বাকী নির্বাচনে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভোট পড়ে। কার্যত ভোটবিহীন একটি নির্বাচন হয়ে যায়। আর ওই নির্বাচনের অসিলায় দশম সংসদ ও সরকার গঠিত হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচন জনগণের হারানো ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার নির্বাচন অবশ্যই এবং সে অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। মাহবুব তালুকদার যখন বলেন, এ নির্বাচন জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার নির্বাচন তখন যথার্থই বলেন। প্রশ্ন হলো : নির্বাচন কমিশন কি জনগণের এই অধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্তরিক ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ? অবস্থাদৃষ্টে সেটা মনে হয় না। বরং মনে হয়, সরকারের ইচ্ছাপূরনেই নির্বাচন কমিশন অধিকতর সক্রিয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এটি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ ও ১৪ দলের নেতাদের প্রথম দফা সংলাপের সময় জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টনেতারা তফসিল সংলাপের পরে ঘোষণার অনুরোধ জানান। জবাবে জানানো হয়, এটি নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয় অনুরোধটি। জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের তরফে নির্বাচন কমিশনে অনুরোধ জানানো হয়। সিইসি জানান, নির্বাচন কমিশন সংলাপের দিকে নজর রাখছে। স্বভাবতই ধরে নেয়া হয়, সংলাপের পর হয়তো নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে দেয়। দ্বিতীয় দফা সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের তরফে তফসিল পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এ প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, নির্বাচন কমিশন তফসিল পিছিয়ে দিলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। এই সবুজ সংকেতের পর নির্বাচন কমিশন তফসিল সাতদিন পিছিয়ে দিয়ে পুন:নির্ধারণ করে। জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের তরফে তফসিল এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এই পর্যায়ে আওয়ামী লীগের তরফে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে জানায়, তফসিল এক ঘণ্টাও পিছিয়ে দেয়া যাবে না। নির্বাচন কমিশন জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের নেতাদের দাবি বা প্রস্তাব বিবেচনা করার এবং আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানোর আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত সে আশ্বাস রক্ষা করেনি। জানিয়ে দিয়েছে, তফসিল পেছানো সম্ভব নয়। এতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, সরকারের ইচ্ছা ও কৌশলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই নির্বাচন কমিশন তার পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে। এরকম একটি নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অবাধ, সুষ্ঠ,ু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা কিভাবে সম্ভব, সে প্রশ্ন ক্রমাগতই বড় হয়ে উঠছে।
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম গত শুক্রবার সহকারি রিটার্নিং অফিসারদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে বলেছেন, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হবে না। এটা পৃথিবীর কোনো দেশেই হয়না। একজন নির্বাচন কমিশনারের পক্ষে এধরনের মন্তব্য করা কতটা সমীচীন, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এতে নির্বাচন কমিশনের অক্ষমতাই স্পষ্ট হয়নি, আন্তরিকতাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এর মাধ্যমে নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের কাছে একটি বার্তা গেছে। বার্তাটি হলো, নির্বাচনে কিছু এদিক-সেদিক হলেও তেমন কিছু হবে না। জনগণসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এ থেকে একটা ভিন্ন বার্তা পেয়ে যেতে পারে। তাহলো, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, সুষ্ঠু করার সদিচ্ছা নির্বাচন কমিশনের নেই। স্মরণ করা যেতে পারে, গত আগস্ট মাসে সিইসি ‘জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেয়ার সুযোগ নেই’, বলে মন্তব্য করেছিলেন। সে সময় তার এ বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। তখন কবিতা খানমসহ চার নির্বাচন কমিশনার তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছিলেন, এটা ইসির বক্তব্য নয়, সিইসির ব্যক্তিগত অভিমত। তখন মাহবুব তালুকদার একটু এগিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, সিইসির এমন বক্তব্য নির্বাচনে অনিয়মকারীদের উস্কে দিতে পারে। সিইসির বক্তব্যে দ্বিমত পোষণকারী সেই কবিতা খানমই এখন সিইসির বক্তব্যকে অন্যভাবে প্রত্যায়ন করেছেন। আমরা বরাবরই লক্ষ্য করে আসছি, নির্বাচন কমিশনাররা নিজেদের সার্বভৌম মনে করে যা ইচ্ছা তাই বলছেন। তাদের কথার মধ্যে পরস্পরবিরোধিতা যেমন আছে তেমনি স্ববিরোধিতাও আছে। এতে নির্বাচন কমিশন এবং তাদের নিজেদের মর্যাদা কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা তারা বিবেচনায় আনছেন না। সিইসি ও অন্যান্য কমিশনারের কথাবার্তা এবং নির্বাচন কমিশনের কাজ-কর্মে পরস্পরবিরোধিতা, স্ববিরোধিতা হযবরল অবস্থার চিত্রই স্পষ্ট করে, সমন্বয়হীনতাই প্রমাণ করে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন উপহার দেয়া। সেই লক্ষ্যেই তার সমস্ত শক্তি ও প্রয়াস নিয়োজিত করা উচিৎ। তা না করে সে যা করছে বা বলছে সেটা ওই ধরনের নির্বাচনের পথে অনেকাংশেই অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জনগণ নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা স্থাপন করতে পারছে না। আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না নির্বাচন। বরং দিনে দিনে তা আরো বাড়ছে।
একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতির একান্ত প্রত্যাশা। এটা সম্ভব করে তোলার দায়িত্ব যুগপৎভাবে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের। আশার কথা, সবদল নির্বাচনে অংশ নিতে এগিয়ে এসেছে। এজন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কোনো কৃতিত্ব নেই। বিরোধীদলগুলোর দাবি-দাওয়া পূর্বাপর উপেক্ষিত হওয়ার পরও জাতীয় আকাঙ্খার প্রতি সম্মান জানিয়ে তারা নির্বাচনে আসতে সম্মত হয়েছে। ফলে ধরে নেয়া যায়, নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হতে যাচ্ছে। অংশগ্রহণমূলক হলেও যে সে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচন কমিশনও একই সুরে একই কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া কাঙ্খিত নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। সিইসির কাছে এ বিষয়ে এক সময় প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠায় কিছু করার সুযোগ নির্বাচন কমিশনের নেই। তফসিল ঘোষিত হলেই সেটি করা হবে। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পরও দেখা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের এব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই। সকলেরই জানা, নির্বাচনের প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দল ও জোট অনেক দূর এগিয়ে আছে। তারা অনেক দিন ধরে প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের ব্যানার-পোস্টার-প্রচারপত্রে গোটা দেশ ছেয়ে গেছে। সেই তুলনায় বিরোধীদল ও জোটের প্রচার-প্রচারণা নেই বললেই চলে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ব্যানার-পোস্টার-প্রচারপত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য সাতদিনের সময় বেধে দেয়া হয়েছিল। সেই সময় সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও দেখা যায় সেসব তেমনই আছে। সময় বাড়ানোতে ও ফলোদয় হয়নি। সবকিছু বহাল তবিয়তে আছে। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, সাত দিন কেন? কেন ২৪ ঘণ্টা বা ৪৮ ঘণ্টা নয়? এর জবাব পাওয়া যায়নি। সবশেষ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে প্রচার সামগ্রী সরানো না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই কঠোর ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয়।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বদ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আশা করা যায়। অথচ তফসিল ঘোষণার পরও মাঠ একতরফাই হয়ে আছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এক্ষেত্রে সরকারেরও যে দায়িত্ব আছে, সেটা তিনি এড়িয়ে গেছেন। নির্বাচন কমিশনের শক্ত অবস্থান অনুপস্থিত। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের একটি অপরিহার্য পূর্বশত হলো, সকলের জন্য বিশেষত বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের জন্য অভয় পরিবেশ নিশ্চিত করা যাতে তারা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা ও অন্যান্য কাজ-কর্ম নির্ভয়ে-নির্বাধে করতে পারে। আমরা লক্ষ্য করছি, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে, গ্রেফতার, রিমান্ড ও হয়রানির শিকারে পরিণত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন নিরব রয়েছে।
নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ বলতে যা বুঝায় তা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন কমিশনের কার্যকর কোনো প্রয়াসও দেখা যাচ্ছেনা। গত শুক্রবার জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের সঙ্গে দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের মত বিনিময় সভায় বক্তরা বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। নির্বাচন কমিশন ও সরকারকেই সেটা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হতে যাচ্ছে, সংসদ বহাল রেখে হতে হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে সরকার সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে নিজের মতো করে সাজিয়ে রেখেছে। এমতাবস্থায় নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং প্রতিষ্ঠা বা নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা খুবই কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ ও সহযোগিতা প্রত্যাশিত হলেও সরকার যে তা করতে আগ্রহী, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য থেকে তা প্রমাণিত হয়না। কাগজে-কলমে সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে গেলেও নির্বাচন কমিশন কতটা তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, সে বিষয়ে নিয়ে সন্দেহ পোষণের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। রিটার্নিং অফিসারও সহকারি রিটার্নিং অফিসারদের ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনারগণ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করার জন্য জিরো টলারেন্স প্রর্দশনের নির্দেশ দিয়েছেন। কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার ও অতি উৎসাহ প্রদর্শন না করার পরামর্শ দিয়েছেন। ব্যতিক্রম কিছু হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকিও প্রদান করেছেন। নির্বাচনী কর্মকর্তারা এই নির্দেশ ও পরামর্শ কতটা মানবেন বা মানতে পারবেন সেটা একটা প্রশ্ন। বলা বাহুল্য, সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ অবস্থানে না থাকে তবে এসব নির্দেশ ও পরামর্শ খুব একটা কাজে আসবে বলে মনে হয়না। এই দুই প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা বা রাখা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সেটাও কম বড় প্রশ্ন নয়। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ, নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে তার অধীনেস্থ কোনো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই নিরপেক্ষতা আশা করা যায়না। এজন্যই পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবার আগে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা দরকার।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে লাগাতারই বলা হচ্ছে, নির্বাচন সুষ্ঠু করাই তার লক্ষ্য। সুষ্ঠুও নির্বাচন বলতে নির্বাচন কমিশন কী বোঝে, সেটাও আসলে বিবেচনার বিষয়। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচন কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে, সকলেরই তা জানা। অথচ প্রতিটি নির্বাচনের পরই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ওই ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচন গ্রহণ করেছে। সবার দৃষ্টিতে নির্বাচনগুলো নূন্যতম সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়েছে বলে প্রতিপন্ন হয়নি এবং গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতেও তা উত্তীর্ণ হতে পারেনি। জাতীয় নির্বাচন ওই মতো সুষ্ঠু হলে চলবে না, কেউ তা মানবেও না। কাজেই, নির্বাচন কমিশনকে আগে নিরপেক্ষ হতে হবে এবং সেই অবস্থানে থেকে নির্বাচনটি করে দেখাতে হবে। আমরা আশা করতে চাই, নির্বাচন কমিশন তার মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার প্রেরণার উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের অবস্থানকে স্বাধীন ও সুদৃঢ় করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন