Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এনআরসি নিয়ে শাহ-মমতার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শিকার বাঙ্গালী হিন্দুরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:২৪ পিএম

কিছুদিন বিরতির পর আসামের ‘এনআরসি’ এবং বাংলাদেশি ‘অবৈধ অভিবাসী’ ইস্যুটি ভারতের রাজনীতিতে আবারও ফিরে এসেছে। মঙ্গলবার চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে ভারতের নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬ কাল। এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, এ সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলে বাংলাদেশি হিন্দুদের বাদ দেয়া হতে পারে। আর এটা হলে বাংলাদেশি হিন্দুরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন না।
জানা গেছে, এনআরসি বিষয়ক যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) বেশিরভাগ সদস্যই এমনই সুপারিশের পক্ষে। জেপিসির একজন সদস্যের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। তবে বাংলাদেশি হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়া আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি বড় ইস্যু।
গত ১৫ নভেম্বর আলাদা অনুষ্ঠানে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ এবং পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যে এই ইস্যুটি জোরালোভাবে শোনা গেছে। অচিরেই বিজেপি শাসিত মধ্য প্রদেশে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সেখানে এক নির্বাচনী সমাবেশে শাহ বলেন, আগামী বছর পার্লামেন্ট নির্বাচনে তার দল ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশী ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ খুঁজে বের করে তাদেরকে বের করে দেয়া হবে। শাহ বলেন অনুপ্রবেশকারীরা ১৯৭১ সাল থেকে এখানে আসছে এবং কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দলের ভোট বাড়াচ্ছে।
১৫ নভেম্বর মধ্য প্রদেশে যেদিন শাহ বক্তৃতা করেন, একই দিন পশ্চিম বঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি এক অনুষ্ঠানে মমতা অভিযোগ করেন যে, আসামে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্সের চূড়ান্ত খসড়ার নামে ‘নোংরা রাজনীতি’ চলছে। এই তালিকা থেকে ৪.৭ মিলিয়ন মানুষের নাম বাদ পড়েছে। বহু ‘প্রকৃত’ ভোটারের নাম তালিকায় নেই।
এনআরসি’র বিরুদ্ধে মমতার অবস্থানের বিষয়টি সবারই জানা। গুরুত্বপূর্ণ হলো সেখানে যে অনুষ্ঠান থেকে তিনি কথা বলেছেন, সেটা। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগর এলাকায় বিনাপানি দেবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উৎসবে এ কথা বলেছেন তিনি। মাতুয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই দেবী ঠাকুর খুবই সম্মানিত। এই সম্প্রদায়ের আদি বাস মূলত বাংলাদেশ এলাকায়। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর বিপুল সংখ্যায় তারা ওই অঞ্চলে চলে যায়। বিনাপানি দেবীকে পশ্চিম বঙ্গ সরকারের শীর্ষ পুরস্কার ‘বঙ্গবিভূষণ’ দেয়া ছাড়াও মাতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য জমি বরাদ্দ দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন মমতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণও হবে সম্প্রদায়ের দুই প্রতিষ্ঠাতা হারিচান্দ ঠাকুর ও গুরুচান্দ ঠাকুরের নামে।
দুই কারণে মাতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে গেছেন মমতা: ১) এই সম্প্রদায় ‘নমশুদ্র’ জণগোষ্ঠির দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রুপ যারা তৃণমূল কংগ্রেসের মূল সমর্থকগোষ্ঠির অংশ এবং ২) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিজেপির প্রচারণার মোকাবেলায় এটা হয়তো তৃণমূলকে সহায়তা করবে। বিজেপি পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণা চালাচ্ছে যে, ‘অবৈধ অভিবাসী’ বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীদের ব্যাপারে মমতা ব্যানার্জি নমনীয়।
বিজেপির দীর্ঘদিনের হিন্দুত্ববাদী আদর্শই কংগ্রেসকে হিন্দুত্ববাদী চেতনার ব্যাপারে খানিকটা নরম হতে বাধ্য করেছে। গত বছরের শেষ দিকে গুজরাটের নির্বাচনের সময় থেকে বিভিন্ন মন্দিরে যেতে শুরু করেন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী। শুধু তাই নয়, তার দল মধ্য প্রদেশের আসন্ন নির্বাচনের আগে ম্যানিফেস্টোতে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যেগুলো ধর্মীয় প্রভাবিত। যেমন, লর্ড রাম নির্বাসনের সময় যে পথে গিয়েছিলেন, সেখানে রোড নির্মাণ করা, গাভী সংরক্ষণ সেন্টার তৈরি, গরুর মুত্রের বাণিজ্যিক উৎপাদন এবং রাজ্য প্রশাসনে আধ্যাত্মিক বিভাগ চালু। ভারতের বড় দলগুলোর মধ্যে এটা এক ধরণের স্বীকৃতি যে, সেখানকার রাজনীতিতে উন্নয়নের সাথে সাথে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিও থাকতে হবে। পার্লামেন্ট নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে, ভারতের রাজনৈতিক বক্তৃতায় এনআরসি আর অবৈধ অভিবাসীদের ইস্যুটি ততোই জোরালো হতে থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ