Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে পুলিশের ওপর হামলা -সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম

গ্রেফতার ছাত্রদলের ৬ নেতা ৫ দিনের রিমান্ডে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলার উদ্দেশ্য ছিল অ্যাকশনের ভিডিও প্রচার করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়া। পুলিশের সঙ্গে বিএনপি সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিও ও ছবি থেকে শনাক্ত করে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার রাজধানীর সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, বড় নেতারা তাদের হেলমেট পরে যেতে বলে, যাতে নাশকতার সময় কেউ তাদের শনাক্ত করতে না পারে। এছাড়া সেখানে আগে থেকেই লাঠিসোটা রাখা ছিল।
গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, যারা এই হামলার পরিকল্পনা করেছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল পুলিশকে উসকানি দিয়ে অ্যাকশনে যেতে বাধ্য করা। যেন তারা নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের অ্যাকশনের ও লাঠিচার্জের ভিডিও দেখিয়ে বিভিন্ন মহলে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারে। গ্রেফতারকৃত ৬ জন হলেন-১১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী এইচ কে হোসেন আলী, শাহজাহানপুর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ ভূঁইয়া, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্বাস আলী, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রবিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন উজ্জ্বল ও তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাহাবুবুল আলম।
মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আসামিদের মধ্যে হোসেন আলী হেলমেট পরে শার্ট খুলে পুলিশের গাড়ির ওপর উঠে লাফিয়েছিল, সোহাগ শার্ট খুলে লাঠি হাতে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে, আব্বাস আলী গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা করেছে, আশরাফুল ইসলাম পুলিশের পিকআপ ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা করেছে। এছাড়াও উজ্জ্বল ও মাহবুবুল পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও সড়ক অবরোধ করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, স¤প্রতি মোহাম্মদপুরে সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত চলছে, গ্রেফতার রয়েছে। এর আগে হেলমেট পরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার তদন্ত চলছে।
আগে আরও সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরা সবাই এজাহারনামীয় আসামি। যারা অজ্ঞাত ছিল তাদেরও মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজের সহায়তায় শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকেই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, সেদিন যে ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল সেটি ফৌজদারী অপরাধ। ফৌজদারী অপরাধ বিবেচনায় নিয়েই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, এখানে কারও রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়। যে যুবক গাড়িতে আগুন দিয়েছে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারলেও এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি, তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এর বাইরেও অনেককে শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি। ঘটনার দিন পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে পুলিশ ইসির নির্দেশে কাজ করতে বাধ্য। সেদিন পল্টনে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। ৫-৭ মিনিটে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে ডিএমপির ক্যাপাসিটি রয়েছে। সেদিন পুলিশ অ্যাকশনে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে ৫-১০ মিনিটে সবাইকে সরিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়েছে।
উল্লেখ্য, দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মধ্যেই গত ১৪ নভেম্বর বুধবার ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বুধবার রাতেই বিস্ফোরক ও বাংলাদেশ দÐবিধি, বিশেষ আইনে এবং বাংলাদেশ দÐবিধি আইনে পল্টন থানায় মামলা তিনটি দায়ের করে পুলিশ। ২১ নম্বর মামলার বাদী হলেন, পল্টন থানার এসআই সোমেন কুমার বড়ুয়া, ২২ নম্বর মামলার বাদী এসআই আল আমিন এবং ২৩ নম্বর মামলার বাদী এসআই শাহীন বাদশা। তিনটি মামলার এজহারে মোট ৪৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও সহস্রাধিক জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ মোট ৮২ জনকে গ্রেফতার করেছে।
ছয়জন ৫দিনের রিমান্ডে
রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ছয়জনের ৫দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস এ আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই কামরুল ইসলাম গতকাল আসামিদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
নথি থেকে জানা যায়, মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় গত ১৪ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ দুটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এতে পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তা, দুজন আনসার সদস্যসহ ২৩ পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই ঘটনায় সেদিন রাতে পুলিশ বাদী হয়ে পল্টন থানায় পৃথক তিনটি মামলা করে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেফতা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ