Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ জীবন-ব্যবস্থা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা বা ধর্ম। এই ধর্মে কোনো খুঁত নেই, অপূর্ণতা নেই। মহান আল্লাহপাক কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করেছেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নিয়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের দ্বীন হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করলাম।’ অপর এক আয়াতে মহান আল্লাহপাক আরো ঘোষণা করেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহর নিকট মনোনীত ধর্ম বা জীবন-ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম।’ এই ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থার মাঝে কোনো কিছু বাইরে থেকে আরোপ করা এবং এর মধ্য থেকে কোনা কিছু বাদ দেয়ার এখতিয়ার কারো নেই। ইসলামের সবকিছুই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। এ ক্ষেত্রে অন্য কারো কোনো কর্তৃত্ব ও অধিকার নেই। এই জীবন-ব্যবস্থার মূল প্রবাহ হচ্ছে তাকওয়াসমৃদ্ধ জীবন-ব্যবস্থা। তাকওয়া মানুষের নৈতিক দৃঢ়তার একটি বিশেষ পর্যায়।
এ পর্যায়ে মানুষের মেেন এমন একটি অবস্থার উদয় হয়, যা মানুষকে আল্লাহর গজব ও আল্লাহর মর্জির খেলাফ কর্মকান্ড থেকে নিবৃত থাকার পথ সুগম করে এবং তাকে এই পথে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। অর্থাৎ সে মনে-প্রাণে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রেজান্দির প্রত্যাশী হয়ে আল্লাহর নির্দেশাবলি পালন করতে মনে-প্রাণে আত্মনিবেদন করে।
তাকওয়ার অধিষ্ঠান হচ্ছে অন্তর। রাসূলুল্লাহ সা. সাহাবিদের সামনে তাকওয়ার মূল অধিষ্ঠানকে তুলে ধরতে গিয়ে বক্ষদেশের ওপর হাত রেখে বলেছিলেন, ‘তাকওয়া এখানে।’ মানুষের মন সবকিছু গ্রহণ, বর্জন ও নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ব পালন করে। মন যদি পরিচ্ছন্ন, সংশোধিত ও নির্মল হয়, তা হলে কোনো কাজেই বিভ্রান্ত ও বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। একই সাথে আল্লাহর ভয় অন্তরে বদ্ধমূল হওয়ার কারণে, সকল অবস্থায় বান্দা অনুগত ও বিনয়াবনত থাকে। ফলে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ সমাজ-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সহজতর হয় এবং জীবন চলার পথে শৃঙ্খলা ও নিয়মতান্ত্রিকতার উন্মেষ ঘটে।
মহান আল্লাহপাক আল কুরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘এই কুরআনে প্রতিটি বস্তুর বিবরণ আছে।’ এই নির্দেশের আলোকে অতি সহজেই অনুমান করা যায় যে, মানব জীবনের জন্য যে সকল বস্তুর প্রয়োজন তার সবকিছুর নীতি-নির্ধারণী বিবরণ আল কুরআনে আছে। প্রয়োজনীয় জ্ঞানানুশীলনের মাধ্যমে সমস্ত বিষয়ের সকল বস্তুর যথার্থ প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা রাসূলুল্লাহ সা. এর পবিত্র জীবনাদর্শের ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে। আম্বিয়ায়ে মুজতাহিদিন নিজেদের জীবন ব্যয় করেছেন এই কাজে।
রোজ কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির পরিপূর্ণ জীবন-ব্যবস্থার সনদ পত্র তারা মানবকুলের জন্য তুলে ধরেছেন বিস্তৃতভাবে। এই ইসলামী জীবন-ব্যবস্থায় কোনো রকম অপূর্ণতার কথা চিন্তাও করা যায় না। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক জীবন দর্শনের মূলনীতিসমূহ ইসলামে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা প্রকৃতই পরিপূর্ণ ও অতুলনীয়। তাই রাসূলুল্লাহ সা. সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দান করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু নতুন জিনিস উপস্থাপন করবে, যা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা অবশ্যই বর্জনযোগ্য।’
ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত এমন এক জীবন-ব্যবস্থা যা স্বাভাবিক স্বভাবসম্মত ও পরিপূর্ণভাবে ভারসাম্যপূর্ণ। মানব জীবনের কোনো একটি বিষয় বা দিকের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা এবং স্বাভাবিক ভারসাম্য বিনষ্ট করাকে ইসলাম কোনোক্রমেই সমর্থন করে না। ইসলাম শান্তিপূর্ণ ও নির্ভেজাল জীবন-যাত্রার পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটাতে চায়।
ইবাদত-বন্দেগি, কায়-কারবার, মুয়ামালাত, রিসালাত, আমল ও আখলাকের সকল স্তরে এমন কিছু করা মোটেই ইসলামসম্মত নয়, যা দেহ ও মনের স্বভাবজাত চাহিদার বাস্তবায়নে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। রাসূলুল্লাহ সা. ও আল কুরআনের মাধ্যমে যে দ্বীন ও জীবন ব্যবস্থা প্রদান করেছেন, তা একান্তই ভারসাম্যপূর্ণ, স্বভাবসম্মত এবং মানবিক সামর্থ্যরে অনুক‚ল।
আল কুরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘আল্লাহপাক শক্তির বহির্ভূত কোনো বোঝা কারো ওপর চাপিয়ে দেন না।’ এতে বুঝা যায় যে, জীবনের সকল অবস্থাতেই এই ভারসাম্যকে রক্ষা করে চলতে হবে এবং নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে। কোনোক্রমেই শরিয়ত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ভারসাম্য নষ্ট করা যাবে না।



 

Show all comments
  • Ameen Munshi ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩২ এএম says : 0
    ইসলাম শান্তিপূর্ণ, নির্ভেজাল এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনাদর্শের বাস্তবায়ন ঘটাতে চায়। মানব জীবনের কোনো একটি বিষয় অথবা কোনো একটি দিকের উপর অধিক গুরত্বারোপ করা এবং স্বাভাবিক ভারসাম্য বিনষ্ট করাকে ইসলাম কোনোক্রমেই সমর্থন করে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Monir ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩৩ এএম says : 0
    Thanks to the Writer. Jajhakallah jhairan
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mosharraf ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩৩ এএম says : 0
    ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো, মানুষকে সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩৪ এএম says : 0
    কোনো কাজে বাড়াবাড়ি ইসলামে অনুমোদিত নয়; বরং ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যপন্থার জীবন দর্শনই হলো ইসলাম। এ কারণেই ইসলাম যেমনিভাবে কৃপণতাকে নিন্দনীয় হিসেবে চিহ্নিত করে তা পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছে, তদ্রুপ অপচয়কেও হারাম ঘোষণা করে তা বর্জনের আদেশ দিয়েছে। ইসলাম অপচয়, অপব্যয় ও কৃপণতা উভয়টি পরিহার করে
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩৫ এএম says : 0
    আল কুরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘আল্লাহপাক শক্তির বহির্ভূত কোনো বোঝা কারো ওপর চাপিয়ে দেন না।’ অতএব সামর্থের বাইরে জোর করে কিছু করা যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • আতিকুর রহমান ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩৭ এএম says : 0
    লেখককে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:৫১ পিএম says : 0
    Islam is the best best,,, best why don't we run our country by the law of Islam. Islam select leader by their piety, they are super expert in Qur'an and Hadith, super honest and super innovative in science and technology......like Abu Bakr, Omar, Ali. Usman and Omar bi Abdul Aziz. We are sick and tired of being a football of man made law. Allah please rescue us.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন