Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রশিক্ষণ বিমানের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

| প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

প্রায়ই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মেধাবী অফিসারের মৃত্যু হচ্ছে। এ ধরনের মৃত্যুর মাধ্যমে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এ ক্ষতি সহসা পূরণ করা সম্ভব নয়। প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সাধারণত যান্ত্রিক ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশিক্ষণ বিমানে কেন যান্ত্রিক ত্রুটি থাকবে? প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ত্রু টিমুক্ত বিমান হওয়াই জরুরি। গত শুক্রবার টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় বিমান বাহিনীর টেলকি ফায়ারিং জোনে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দিপু নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। দুর্ঘটনার পর বিমান বাহিনী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তের পর হয়তো কারণ জানা যাবে। পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২২ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত টাঙ্গাইলের আরণখোলা ইউনিয়নে বিমান মহড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজি নামের বিমানটি হঠাৎ বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলেই পাইলট নিহত হন। আইএসপিআর-এর সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম শাম্মী জানান, বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজি মডেলের প্রশিক্ষণ বিমানটি বেলা আড়াইটার দিকে উড্ডয়ন করে। এর কিছু সময় পর বিধ্বস্ত হয়। এতে পাইলট একাই ছিলেন। বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমানটি থেকে বের হলেও তিনি বাঁচতে পারেননি। স্মরন করা যেতে পারে, গত ১ জুলাই যশোরে রাতের প্রশিক্ষণের সময় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দুইজন পাইলট নিহত। স্কোয়াড্রন লিডার মো. সিরাজুল ইসলাম ও স্কোয়াড্রন লিডার এনায়েত কবির পলাশ কে হন-৮ ডবিøও বিমান নিয়ে মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর তা যশোর বিমান বন্দরের কাছে বুক ভোরা বাওড় নামক জলাশয়ে বিধ্বস্ত হয়। দুজন পাইলটই নিহত হন।
প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট নিহত হওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং দুঃখজনক। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিমান বাহিনীতে বিশেষ করে যারা যুদ্ধ বিমান পরিচালনা করেন, তাদের মেধার ভিত্তিতে চয়ন করা হয়। ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের যোগ্য করে গড়ে তোলা হয়। এতে শ্রম ও মেধা যেমন খাটাতে হয়, তেমনি রাষ্ট্রেরও প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যাদের গড়ে তোলা হয়, তারা একেকজন দেশের সম্পদে পরিণত হন। তাদের দেখে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিমান বাহিনীতে যোগ দিতে অণুপ্রানিত ও উৎসাহী হয়ে উঠে। পাইলট হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়। নিয়োগকৃতদের দীর্ঘ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে তোলা হয়। যুদ্ধ বিমানে উড্ডয়ন এবং তা সফলভাবে সম্পন্ন করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উড্ডয়নের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ বিমান অবশ্যই যান্ত্রিক ত্রুটিমুক্ত এবং নিখুঁত হওয়া আবশ্যক। দেখা যাচ্ছে, প্রশিক্ষণের সময় এ পর্যন্ত উড্ডয়নের পর যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার বেশিরভাগের দুর্ঘটনার কারণ হিসেব বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কথা শোনা যায়। গত শুক্রবার যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, তা যে ত্রুটিমুক্ত ছিল তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তাতে ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিমানটি ছিল চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের তৈরি জে-৭ যুদ্ধবিমান, যার বাংলাদেশের ভার্সন এফ-৭। তৃতীয় প্রজন্ম থেকে আপগ্রেড করে এ বিমানকে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানে রূপান্তর করা হয়েছে, যা শব্দের গতির চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে উড়ে। এটি চারটি ক্ষেপনাস্ত্র বহন করতে পারে এবং ২২ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। এছাড়া তিন হাজার পাউন্ড বোমা বহনে সক্ষম ও যে কোনো আবহাওয়ায় উড়তে পারে। নিঃসন্দেহে এ ধরনের বিমান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত থাকতে হয়। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়া শঙ্কার বিষয়। পাশাপাশি এ প্রশ্নও আসতে পারে, বিমানকে আপগ্রেড করে অন্যরূপ দিলে তা কতটা নিরাপদ থাকে?
সরকারের তরফ থেকে বরাবরই বলা হয়, সশন্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী ও অত্যাধুনিক করা হচ্ছে। এর আওতায় বিমান বাহিনীও রয়েছে। তারপরও প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়টি কেন ঘটছে, তা বোধগম্য নয়। অথচ প্রশিক্ষণ বিমান সবচেয়ে আধুনিক হওয়া বাঞ্চনীয়। এতে কোনো ধরনের ত্রুটি থাকা চলে না। বলা বাহুল্য, বিমান বাহিনীর একজন পাইলট নিহত হওয়ার অর্থ রাষ্ট্রের ক্ষতি হওয়া। পাশাপাশি যারা এ পেশায় যোগ দিতে আগ্রহী তারা ও তাদের পরিবার এ পেশাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে নিরুৎসাহী হয়ে উঠতে পারে। আমরা মনে করি, প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা জিরো লেভেলে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। বিমান উড্ডয়নের আগে তা বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর ফিটনেস নিশ্চিত হতে হবে। পাইলটের শারিরীক ও মানসিক সুস্থ্যতাও নিশ্চিত হতে হবে। প্রশিক্ষণের জন্য সম্পর্কে অত্যাধুনিক বিমান ব্যবহার করতে হবে। এতে প্রশিক্ষণ যথাযথ ও নিরাপদ হবে এবং মূল্যবান জীবনও রক্ষা পাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমান বাহিনী


আরও
আরও পড়ুন