Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামের দৃষ্টিতে রাষ্ট্র এবং ধর্মের সম্পর্ক

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ইসলামে রাষ্ট্র এবং ধর্মের সম্পর্ক কী এবং কেমন তা উপলব্ধি করতে হলে চলমান বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকানো একান্ত দরকার। লক্ষ করলে দেখা যায়, বর্তমান বিশ্বের ছোট-বড় রাষ্ট্রগুলো সাধারণত তিন ধরনের। যেমন- ০১. ওই সকল রাষ্ট্র, যেগুলোতে রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে পৃথক রাখা হয়েছে।
অর্থাৎ রাষ্ট্র একদিকে এবং ধর্ম অন্য দিকে। বলা হয়েছে, ‘যা রাষ্ট্রের তা রাষ্ট্রকে দাও এবং যা প্রভুর তা প্রভুকে দাও’ (প্রচলিত বাইবেল)। এই চিন্তাধারা ও শিক্ষার দ্বারা রাষ্ট্র এবং প্রভুকে পরস্পরবিরোধী অস্তিত্ব হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে। ফলে, এদের একের নির্দেশ ও রীতি অপরের নির্দেশ ও বিধান থেকে সম্পূর্ণ পৃথক, আলাদা ও ভিন্ন। বর্তমান ইউরোপ এবং পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশে ও আফ্রিকায় এ ধরনের রাষ্ট্র কায়েম করা হয়েছে। এতে করে রাষ্ট্র এবং ধর্মের দুটি জগৎ ও পরিমন্ডল পৃথক এবং আলাদা রূপ পরিগ্রহ করেছে।
এই বিভক্তি ও মেরুকরণের ফলশ্রুতিতে এই শ্রেণীর রাষ্ট্রগুলোতে একান্ত নির্লিপ্ত মনে আল্লাহপাকের ইবাদত করা, নির্ভেজাল ধর্মজীবন পালন করা, নির্মল সততা ও সত্যবাদিতার শামিয়ানার নীচে অবস্থান করা এবং বিশুদ্ধ নিয়ত বা উদ্দেশ্যের বাস্তবায়ন করা মোটেই পরিদৃষ্ট হয় না। বরং তা’ সম্ভবও নয়।
০২. ওই সকল রাষ্ট্র, যেখানে ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক রাখা হয়নি। কিন্তু মানুষের বানানো রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন ও নীতিমালার রজ্জুদ্বারা ধর্মের সু² নাজুক প্রাণশক্তিকে এমনভাবে জড়িয়ে রাখা হয়েছে, যার দরুণ ধর্মের বিশুদ্ধতা ও সু² পবিত্রতা বিলুপ্তির অতলান্তে তলিয়ে গেছে বা হারিয়ে গেছে। কতগুলো আচার-অনুষ্ঠান এবং মানুষের কল্পিত নিয়ম-কানুন ধর্মের স্থান দখল করে ফেলেছে। বর্তমান বিশ্বের ইহুদিবাদ গ্রহণকারী এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের যাতাকলে নিস্পিষ্ট মূতিপূজারি ও বৌদ্ধ নামের আলখাল্লা পরিহিত রাষ্ট্রগুলো এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত এবং তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
০৩. ওই সকল রাষ্ট্র, বা শ্রেণিভূক্ত রাষ্ট্র, যেখানে ধর্ম এবং রাষ্ট্রের পৃথক কোনো পরিচিতি নেই। রাষ্ট্র এবং ধর্ম এক এবং অভিন্ন। এই শ্রেণীর আদর্শে গড়া রাষ্ট্রের বুনিয়াদ গড়ে ছিল পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.। যে কোনো ধর্মীয় বিধি-বিধান ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালা পৃথক কোনো অস্তিত্ব নেই। যেখানে রাষ্ট্রীয় নীতিমালার দ্বারা ধর্মজীবন শাসিত হয় না। বরং ধর্ম হচ্ছে আল্লাহপাকের জীবন ও জগতের প্রশাসনিক অবকাঠামো এবং রাষ্ট্র হচ্ছে এর বাস্তব প্রয়োগক্ষেত্র। তাই, ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক রাখা যায় না। এবং রাষ্ট্র ও ধর্মহীনতার আবর্তে নিমজ্জিত হলে প্রকৃত ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে না।
আমরা জানি আল্লাহর মনোনীত ও পছন্দনীয় ধর্ম একটাই। অতীতেও তা একই ছিল এবং ভবিষ্যতেও একই থাকবে। অর্থাৎ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এর মাঝে কোনো ব্যতিক্রম ও ব্যবচ্ছেদ পাওয়া যাবে না। এই ধর্মই হচ্ছে ‘ইসলাম’। আল কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম।’
এই ধর্মের পরিপূর্ণতার বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা নানা দিক থেকে করা হয়েছে এবং এর বিশ্লেষণ সবসময়ই করা যায়। এই রাষ্ট্রব্যবস্থা সার্বিকভাবে ধর্মীয় নীতি ও বিধি-বিধান দ্বারা পরিপুষ্ট এবং ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত। বস্তুত, তা এমন ধর্ম বা জীবনব্যবস্থা, যা পরিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোকে পরিবেষ্টন করে আছে। আর এটাকেই আল্লাহর রাষ্ট্ররূপে আখ্যায়িত করা যায়। তবে, আল্লাহর রাষ্ট্র বলতে সংক্ষেপে যা বোঝায় তা হলো এই যে, এখানে পৃথক কায়সার, শাহানশাহ বা প্রভুত্বের অস্তিত্ব মোটেই নেই।
আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, হে আল্লাহ, আপনিই সারা জাহানানের অধিশ্বর। আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন, যার হতে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নেন, যাকে ইচ্ছা সম্মান ও প্রাধান্য দান করেন, যাকে ইচ্ছা লজ্জিত ও হীন করেন, সবই আপনার সদিচ্ছা-নির্ভর, আপনিই সকল ক্ষমতার আধার’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত-২৬)।
এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা ও হাকিম হিসেবে একক এবং অদ্বিতীয় সত্তা ‘আল্লাহকে’ গ্রহণ করা হয়েছে। সেই হাকিম প্রভু এবং একচ্ছত্র অধিপতি কেবলমাত্র আল্লাহ। সকল ক্ষমতা ও বাদশাহী তারই। সকল নির্দেশ এবং ফরমান তার নিকট থেকেই আসে।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বড়ই মহান এবং বড়ই দয়ালু। তিনি দয়াপরবশ হয়ে এই পৃথিবীতে তার পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্ব ও কর্তব্য নিষ্পন্ন করার জন্য ‘খলিফা’ বা প্রতিনিধি নিয়োগ করার ব্যবস্থা জারি রেখেছেন। এ সম্পর্কে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং স্মরণ করুন, ওই সময়ের কথা, যখন আপনার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা বা প্রতিনিধি অবশ্যই সৃষ্টি করব’। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-৩০)।
এই খলিফা বা স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ক্ষমতা সম্পূর্ণ অস্থায়ী ও নির্ধারিত সময়ের জন্য সীমিত। এই শ্রেণীর স্থলাভিষিক্ত ক্ষণস্থায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্দেশ দাতাদের হুকুম বা আদেশ তখনই মানা যাবে, যখন তা হবে আল্লাহর আদেশ-নির্দেশ অথবা আল্লাহপাকের নির্দেশের ওপর প্রতিষ্ঠিত, অথবা যা আল্লাহর নির্দেশের বিরোধী না হবে। অন্যথায় তা মান্য করলে পাপ এবং অপরাধে মাত্রা বাড়তেই থাকবে। স্থায়ী সফলতা অর্জিত হবে না।



 

Show all comments
  • মারুফ ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৬ এএম says : 0
    ইসলামের দৃষ্টিতে রাষ্ট্র এবং ধর্মের সম্পর্ক নিয়ে দলীলসহ এই সুন্দর লেখাটি উপস্থাপন করায় এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী হুজুরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • তামিম ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৭ এএম says : 0
    নিয়মিত এই কলামটি পড়ার জন্য একার হলেও দৈনিক ইনকিলাব পড়ি
    Total Reply(0) Reply
  • নিঝুম ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৭ এএম says : 0
    আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম জাযাহ দান করুক। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • পারভেজ ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫৯ এএম says : 0
    আল্লাহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদেরকে ইসলামের বিধি বিধান মেনে চলার তৌফিক দান করুক, মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এই দোয়া প্রার্থনা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১০:২৯ পিএম says : 0
    Why the slave of Allah totally forgot the goal of life... They are running after mirage as if they are always thirsty... their thirst is unquenchable end of the day they have to leave this fleeting world with empty hand then what gonna happen.. do they realize that they have to face ugly looking angle and they will ask 3 question...nay they will never ever able to reply then they will wake up and see the horror.. still there is time O Muslim submit to your Lord Allah and rule our Country By the Divine Law the much sought peace and security will prevail InshaAllah.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন