Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধানের শীষের প্রার্থী ব্যারি. আমিনুল হকের ঋণ প্রায় ২ কোটি, নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর আয় কমেছে ১৮ লাখ টাকা।

গোদাগাড়ী(রাজশাহী) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:০৩ পিএম

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে ৫ জন প্রার্থী টিকে থাকলেও ২ জন প্রার্থীকে নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় উঠেছে। ২ জনই হেবিওয়েট প্রার্থী । ২ বারের সাংসদ, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর আর ১জন হলেন, বিএনপি মনোনীত পর পর তিন বারের সাংসদ, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মো: আমিনুল হক। এছাড়া এ আসনে আরও প্রার্থী রয়ে গেছে, ব্যারিস্টার আমিনুল হকের স্ত্রী আভা হক, ওয়ার্কাস পার্টির রাজশাহী জেলার সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল ও ইসলামী আন্দোলনের আব্দুল মান্নান।
ওমর ফারুক চৌধুরী নির্বাচনী প্রচার প্রচার প্রচারনায় অনেক এগিয়ে থাকলেও ব্যারিস্টার আমিনুল হক এখনও পিছিয়ে রয়েছেন। পর পর তিনবারের সাংসদ, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বিরুদ্ধে গত ১০ বছরে অনেক ফৌজদারি মামলা সংযুক্ত হয়েছে। মামলা নিয়ে তিনি আদলতে ব্যস্ত সময় পার করেছে। ওই মামলায় মধ্যে ১ টি মামলার করণে তার মনোনয়ন বাতিল হয় এবং নির্বাচন কমিশনে আপিলের পর প্রার্থিতা ফিরে পান। তার প্রার্থী হওয়ার করণে এলাকায় বিএনপি জামায়াত নেতা কর্মীদের মাঝে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে । একই সাথে তিনি প্রায় ২ কোটি টাকা ঋণগ্রস্ত।
অপর দিকে, গত ২ বারের সাংসদ, সাবেক শিল্প প্রতি মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর গত ১০ বছরে ১৮ লাখ টাকা আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ লাখ টাকা। তবে সে সময় নিজের ও যৌথ নামে ১৮ কোটি টাকা ঋণ থাকলেও এবারের হলফ নামায় কোন ঋণ নেই বলেই জানিয়েছেন তিনি। সেই সাথে তার নামে কোন ফৌজদারি মামলাও নেই।
রাজশাহী-১ আসনে বিএনপি’র হেবিওয়েট প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মনোনয়ন পত্র গত ২ ডিসেম্বর যাচাই শেষে একটি মামলার তথ্য না দেয়ার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করে ছিলেন এবং প্রথম দিনই ফিরে পান তার প্রার্থিতা । তবে একই আসনে তার স্ত্রী আভা হক রয়েছে বিএনপি’র বিকল্প হিসেবে রয়েছেন। হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুসারে, আমিনুলের বিরুদ্ধে এখন চলমান ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ১৬টি। আর বাৎসরিক ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। যার মধ্যে বাড়ি বা এ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে সর্বোচ্চ আয় দেখান হয়েছে ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। একই সাথে তিনি ব্যায় দেখিয়েছেন ১৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। স্ত্রী আভা হকের আয় দেখান হয়েছে ২৩ লাখ ৮ হাজার টাকা। এদিকে তার অস্থাবর সম্পদ (ব্যাংকে ও নগদ অর্থ) দেখান হয়েছে ২ কোটি ১২ লাখ ২৩ হাজার টাকা। আর স্ত্রীর কাছে নগদ অর্থেও পরিমাণ ১ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে গচ্ছিত ও সঞ্চয়পত্র করে রাখা আছে ১ কেটি ৪৯ লাখ ৬৫ হাজার। স্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখান হয়েছে এ্যাপার্টমেন্ট যা অর্জিত সময়ে মূল্য দেখান হয়েছে ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ হিসেবেও দেখান রয়েছে বাড়ি যার অর্জিত সময়ে মূল্য দেখান হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এদিকে তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ দেখিয়েছেন ১ কোটি ৯৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।একই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও গত ২বারের সাংসদ ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীর গত ১০ বছর আগে ২০০৮ সালে বাৎসরিক আয় ছিল ৮৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা। আর স্ত্রীর বাৎসরিক আয় দেখান হয় ১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ২০০৮ এ তিনি অস্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখিয়েছিলেন ৪২ লাখ টাকা। যারমধ্যে ছিল নগদ টাকা ২ লাখ ৫০ হাজার। ব্যাংকে ছিল ৩০ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র ছিল ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার। স্ত্রীর নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থেও পরিমাণ ছিল ৪ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদ বলতে ছিল মোহাম্মদপুরে অর্জিত সময়ে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্য মানের বাড়ি। স্ত্রীর নামে অর্জিত সময়ে ১২ লাখ টাকা মূল্য মানের একটি এ্যাপার্টমেন্ট ছিল। এসময় তার একক নামে ঋণ ছিল ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজর টাকা এবং যৌথ নামে ঋণ ছিল ১১ কোটি ৪ লাখ টাকা। ১০ বছর পর ২০১৮ সালে এসে তার বাৎসরিক আয় ১৮ লাখ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১৭ লাখ ১০ হাজার টাকা করমুক্ত আয় (সংসদ সদস্য হিসেবে ভায়াদি)। আর স্ত্রীর আয় ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ দেখান হয়েছে নগদ অর্থ ৯০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এছাড়া ২টি ট্রাক অর্জনকালীন সময়ে মূল ধরা হয়েছে ১৮ লাখ, প্রাইভেট কার অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ৬৩ লাখ, শুল্ক মুক্ত জীপ ৬১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯৭ টাকা। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ১৬ লাখের ওপরে। স্ত্রীর নামে নগদ অর্থ ও ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৩৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। আর স্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখান রয়েছে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ৬০ বিঘা কৃষি জমি। অকৃষি জমি রয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে ১০ বিঘা। বিসিক শিল্প এলাকায় দালান ও ব্যবসায় বিনিয়োগ ১৬ লাখ ৮৩ লাখ টাকা। এছাড়া মোহাম্মদপুরে এ্যাপার্টমেন্ট বাবদ বিনিয়োগ ১ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার। যার মধ্যে স্ত্রীর বিনিয়োগ রয়েছে ৬৫ লাখ। দি থিম ওমর প্লাজা ইস্টেস লি: এর ৮৫ লাখ, স্যানাপ বাটন এর নামে ৯৬ লাখ ৮০ হাজার এবং পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পে কিস্তি প্রদান ৩১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। রয়েছে সাগর পাড়ায় যৌথ নামে বাড়ি। আর ২০০৮ সালে হলফনামায় একক ও যৌথ নামে ১৮ কোটি ৪ লাখ টাকা ঋণ দেখান হলেও, নির্বাচন কমিশনে দেয়া এবারের মনোনয়ন পত্রের হলফনামায় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোন ঋণ নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সেভেন স্টার গ্রুপ সক্রিয় থাকলেও তার এখন প্রায় নিশ্চিত এবং নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ।

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে উন্নয়নের বার্তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। প্রতিদিনই নির্বাচনী এলাকায় আয়োজিত আওয়ামী লীগ এর অঙ্গ সংগঠন গুলির বর্ধিত সভায় ফারুক চৌধুরী একই নির্দেশনা দিচ্ছেন। উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন নেতা কর্মীরা। নৌকার টিকেট পেয়ে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিজয়ী হন তিনি। এবারও এই আসনে নৌকার প্রার্থী তিনি। যোগাযোগ করা হলে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, গত এক দশকে আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামোসহ সকল খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এর সুফল পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। এই বার্তা নিয়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিকে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আবারো নৌকায় ভোট চান ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশে আজ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, বাড়ী বাড়ী চাকুরী, নারীর ক্ষমতায়ন, আশ্রয়ণ প্রকল্প, বিনিয়োগ বিকাশ, কমিনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সামাজিক, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বলায় ও কৃষি ভুর্তকির কারণে সারের দাম কম হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে গেছে। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা রাখতে, ২০২১ ইং সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ গড়তে এলাকার মানুষ নৌকায় ভোট দিবেন। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী ব্যাপক প্রচার, সভা, গণসংযোগ করছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ, গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিদ্যুতসহ সকল সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় ভোটারগণ এখন চিন্তা করে উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোট দিবেন, বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করবেন ওমর ফারুক চৌধুরী । এদিকে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হক এখনও নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন নি। গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে আমরা নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শুরু করবো, নেতা কর্মী সমর্থকেরা মাঠে কাজ করছেন। ব্যারি.আমিনুল হক মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে গোদাগাড়ী Ñ তানোর উপজেলাসহ রাজশাহী অঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভাট নির্মাণ করেছেন, নতুন নতুন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন, মসজিদ, মন্দির গির্জায়, অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন করেছিলেন, যা সংস্কার অভাবে এখন অবহেলিত, উন্নয়ন হয়নি, তাই এলাকার মানুষ পরিবর্তন চাই, ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, গণ জোয়ার সৃষ্টি করবে। নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, গ্রহণ যোগ্য নির্বাচন হলে, ভোটারেরা নিজের ইচ্ছা মত ভোট দিতে পারলে ইসাল্লাহ ধানের শীষের প্রার্থী ১ লক্ষাধিক ভোটে বিজয় হবেই।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ