Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সকলেরই আছে সম্মানজনক কাজের অধিকার

প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ রেজাউর রহমান
রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে নিজ নিজ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, যোগ্যতা অনুযায়ী পছন্দসই কাজের অধিকার। কর্মসংস্থান সৃষ্টির দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞগণ এখন বলছেন শুধু কর্মসংস্থান একজন নারী বা পুরুষের জন্য যথেষ্ট নয়। সম্মানজনক কর্মসংস্থানই হচ্ছে প্রতিটি নারী পুরুষের জন্মগত অধিকার। ২০০০ সালে জাতিসংঘ সরকার প্রধানদের যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাতে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছিল সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের পর্যালোচনা নিয়ে আরো একটি সম্মেলন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে আরো একটি শীর্ষ সম্মেলনে সমবেত হয়ে বিশ্বের নেতৃবৃন্দ গ্রহণ করেছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস্)।
২০০৫ সালে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের পর্যালোচনার জন্য যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞগণ তাতে মানুষের কর্মসংস্থান সম্পর্কিত ধারাটিতে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন করেন তা হচ্ছে শুধু কর্মসংস্থানই একজন মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়। সম্মানজনক কর্মসংস্থানই হচ্ছে প্রত্যেকের জন্মগত অধিকার।
সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সাফল্য পর্যালোচনার জন্য ২০০৫ সালে জাতিসংঘ সদর দফতরে যে বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে একটি প্রধান নীতির গুণগত পরিবর্তন  করা হয়। সম্মেলনে সমবেত রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানরা অঙ্গীকার করেন, তারা ন্যায়ভিত্তিক বিশ্বায়ণের নীতিকে সমর্থন করে যাবেন এবং এর আলোকে তারা সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি প্রণয়ন এবং সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি পরিপূর্ণ উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান ও সবার কাজের পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট থাকবেন। তখন পর্যন্ত বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকা- বিশেষ করে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কর্মসূচীগুলোয় দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় একটি পরিচ্ছন্ন কর্মপরিবেশ ও জীবিকার ব্যবস্থা করা অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এই নতুন নীতি গৃহীত হওয়ার পর সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্পর্কিত কর্মসূচীগুলো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জাতিসংঘ ও এর সব অঙ্গসংস্থা এবং বহুজাতিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য ব্যবস্থায় এ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়।
এই অঙ্গীকারকে সুনির্দিষ্ট নীতি পরিবর্তনে রূপান্তর করাই এখন একটি অতি কঠিন কাজ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নে একটি সম্পূর্ণ উৎপাদনক্ষম ও ফলপ্রসূ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার দ্বারা কৌশল পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনেকেই জোরালোভাবে বক্তব্য রাখছেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য থেকে জলবায়ু সংকটÑএসবই এ পরিবর্তনকে অত্যাবশ্যকীয় করে তুলেছে। অর্থনীতির করণীয় নির্ধারণে নিয়োজিত সব কর্তৃপক্ষকেই জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জোরালো যুক্তিও উঠে আসছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্তগুলোর সংখ্যাগত ও গুণগত ফলাফল মূল্যায়ণ  করে এবং প্রয়োজনমতো সেগুলো নতুনভাবে পুনঃনির্ধারণ করার সুযোগ কাজে লাগানোর সময় হচ্ছে এখনই। সামাজিক কাঠামোর ভাঙন রোধ করার জন্যও ব্যাপকতর সুষম কর্মসংস্থানের নীতি অনুসরণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক হুয়ান সোমাভিয়া উল্লেখ করেছেন, বিশ্বব্যাপী একটি সম্মানজনক কর্মসংস্থান আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে; কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন নীতির প্রতি সমর্থনকে তাৎপর্যপূর্ণ আর্থ-সামাজিক বিবর্তনমূলক প্রত্যক্ষ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
জাতিসংঘের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক (ঊপড়ংড়প) সহকারী মহাসচিব জেমো কেএস বলেছেন, ওয়াশিংটনে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ২৫ বছর পর অর্থনীতির বিশ্বায়ন ও উদারীকরণের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বিশ্বব্যাপী একটি সামাজিক সুরক্ষামূলক নীতির প্রয়োজনীয়তার পক্ষে নতুন চিন্তাধারা স্পষ্ট হচ্ছে। এই নতুন চিন্তাধারায় একটি পরিপূর্ণ ও সম্মানজনক কর্মসংস্থানের পরিবেশ সৃষ্টির ওপরই গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে যে একটি শিক্ষা পাওয়া গেছে তা হলোÑ অর্থনৈতিক নীতি ও কর্মসূচি প্রণেতার দুর্বোধ্য কিছু তত্ত্ব ও শব্দ চয়নের আড়ালে জনগণকে আর বোঝাতে পারছেন না, তাদের প্রণীত নীতি ও কর্মসূচির কোনো বিকল্প নেই। বাস্তবিকপক্ষে বিকল্প রয়েছে অনেক। অনেক বিকল্প ধারণা পাওয়া যায় সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক কর্মকা-ের ইতিহাস থেকে। আরো পাওয়া যায় জাতিসংঘ ও সুশীলসমাজের যেসব চিন্তাবিদ তাদের সময় অপেক্ষা অনেক অগ্রসর চিন্তা করে আসছিলেন এবং ভিন্নমত পোষণ করে আসছিলেনÑ তাদের লেখা ও বক্তব্যে। কয়েক দশক ধরে অর্থনৈতিক মূলধারার নীতিগুলোকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছিল। কর্মসংস্থান ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যকে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের লক্ষ্য থেকে পৃথক করে রাখা হয়েছিল। বিশ্ব অর্থনৈতিক সংগঠন (ডড়ৎষফ ঊপড়হড়সরপ ঋড়ৎঁস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড স্যামন্সের মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব। অর্থায়ন, বিনিয়োগ ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এমন অনেক সুশীল সমাজের সংগঠন প্রত্যক্ষভাবে না হলেও সম্মানজনক কর্মসংস্থান ও ন্যায়ভিত্তিক বিশ্বায়নের বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। পরিপূর্ণ উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান ও বিশ্বব্যাপী সবার জন্য পরিচ্ছন্ন কাজের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলনে যারা কাজ করছেÑ তাদের সচেতনতা আরো বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বয় পরিষদ প্রণীত নির্দেশনা সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্মানজনক কর্মসংস্থানের ধারণাটি সব দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। বাস্তবিকপক্ষে এটা হচ্ছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণের কাজ সহজ করার উদ্দেশ্যে একটি প্রস্তাবিত উন্নয়ন কাঠামো। তবে সম্মানজনক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত চারটি স্তম্ভ অবশ্যই একটি সম্মানজনক জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য ও আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক ও একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠার দাবি করার অধিকার শ্রমজীবী মানুষের রয়েছে আর এ জন্য তাদের সংগঠনের অধিকার ও দর কষাকষির অধিকার দিতেই হবে। আর একই কারণে উৎপাদনশীল জীবিকার সুযোগও থাকতে হবে। অসুস্থতা, বার্ধক্য, ছাঁটাই বা জীবিকার অবলম্বন হারানো এসব ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। তবে তা হতে হবে প্রয়োজনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এবং আলোচনা ও সামাজিক সংলাপের মাধ্যমে।
বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্রমবিবর্তনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামাজিক অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার মোকাবেলায় আইএলওর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সামাজিক সংলাপে এটি ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল, ন্যায়ভিত্তিক বিশ্বায়নের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতির সঙ্গে সম্মানজনক কর্মসংস্থানের প্রশ্নটিকে আলাদা করে রাখা যায় না। কারণ, বিশ্বায়নের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে বিশ্ব অসম উন্নয়ন ভারসাম্যহীনতা ও ব্যর্থ অর্থনৈতিক নীতিগুলোর অবসান ঘটানো অন্তর্ভুক্ত ছিল। আইএলও ২০০২ সালে বিশ্বায়নের সামাজিক প্রতিক্রিয়াগুলো নির্ণয়ের জন্য একটি বিশ্ব কমিশন গঠন করে। এটি কমিশনের চূড়ান্ত মতামত ছিল যে, জাতীয়ভিত্তিক বৃহৎ অর্থনৈতিক কর্মসূচি, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সম্মানজনক কর্মসংস্থান কর্মসূচির সমন্বয় করা প্রয়োজন। কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, একটি পরিচ্ছন্ন জীবিকার কাজ ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার ব্যাপারে মানুষের যে মৌলিক ও আইনসম্মত আকাক্সক্ষা রয়েছে প্রবর্তিত বিশ্বায়ন কর্মসূচি সেসবের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ভারসাম্যহীনতা নৈতিক বিবেচনায় যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, রাজনৈতিক বিবেচনায়ও এটা টেকসই নয়।
সম্মানজনক কর্মসংস্থানের প্রশ্নটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ব্যাপকতর গভীরে প্রোথিত একটি বিষয়। ২০০৮ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মেরি রবিনসন বলেছিলেন, ৬০ বছর আগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণার খসড়া প্রণয়নকারীদের স্বপ্ন ছিল, তাদের কল্পিত ও কাক্সিক্ষত বিশ্বে সব মানুষই সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে আর সবারই থাকবে পরিচ্ছন্ন কাজ পাওয়ার অধিকার। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ২৩নং ধারায় মানুষের কাজের অধিকার সুস্পষ্ট ভাষায় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ন্যায়ভিত্তিক ও অনুকূল পরিবেশে জীবিকার জন্য কর্মক্ষেত্র বেছে নেয়ার অধিকার এবং সেই সঙ্গে সমান্তরালভাবে যৌক্তিক ও পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকারও তার রয়েছে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকার অধিকার ও সংগঠনে যোগ দেয়ার অধিকারও রয়েছে প্রত্যেক মানুষের।
মানবাধিকার ঘোষণার ২২নং ধারায় সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বায়ন ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের পারস্পরিক নির্ভরতার আলোকে এসব মৌলিক অধিকারের বাস্তবায়ন ঘোষণার ২৮নং ধারার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এতে বলা হয়েছে, সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় যেসব অধিকার ও মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছেÑ সেসব একটি সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় ভোগ করার অধিকার রয়েছে প্রতিটি মানুষের। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির ৬নং থেকে ১১নং ধারা এবং মৌলিকনীতি ও কাজের অধিকার সম্পর্কিত ১৯৯৯ সালের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ঘোষণায় কর্মসংস্থানের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
২০০৬ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ উন্নয়ন ফোরামে উৎপাদনশীল কাজ ও পরিচ্ছন্ন কাজের পরিবেশের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে নারীর স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ডায়ানে এলসন বলেছেন, বৃহৎ জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকা-গুলো সংকুচিত করা হচ্ছে। সরকার একদিকে যেমন প্রকল্প খাতে ব্যয় হ্রাস করছেÑ অন্যদিকে মালিকানাধীন বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত খাত ও ব্যক্তি মালিকানাধীন খাত উভয় দিকেই অর্থনৈতিক কর্মকা- হ্রাস পাওয়ার ফলে সম্মানজনক কর্মসংস্থানের সুযোগ করে যাচ্ছে। নারীস্বার্থ রক্ষাকারী অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সরকারের সংকোচনমূলক চিন্তার জন্য বিশেষ করে নারীরাই সুবিধাবঞ্চিত হবেন। কারণ এটা অনেক পক্ষপাতদুষ্ট চিন্তার প্রসার ঘটাবে। এসব পক্ষপাতমূলক চিন্তার একটি বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ‘রুটির জোগানদার হচ্ছে পুরুষ’Ñ এই যুক্তি। এতে এটার ওপরই গুরুত্বারোপ করা হয়Ñ যাতে বলা হয়, ভালো কাজের সুযোগ পুরুষদেরই পাওয়া উচিত। কারণ পরিবারের খরচের সিংহভাগ বহন করেন তারাই। মেয়েদের উপার্জনের অর্থে সংসারের ব্যয় আংশিক মেটানো যায়Ñ পুরোটা নয় এবং পরিবারের কল্যাণে তা অত্যাবশ্যকীয় নয়। অথচ বাস্তবে অনেক নারীই পরিবারের সিংহভাগ ব্যয়ই বহন করেন আর অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নারীর উপার্জনই হচ্ছে পরিবারের দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করার হাতিয়ার। এখানে ভুলে যাওয়া হয়, কাজের অধিকার নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ‘মৌলিক নীতি ও কাজের অধিকার’ সম্পর্কিত ঘোষণায় ‘কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য থাকবে না’ হচ্ছে একটি অন্যতম মূল শর্ত। নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা আনয়নের অন্যতম উপায় হলো রাষ্ট্র কর্তৃক অর্থনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা। কারণ এর মধ্যে নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিতকরণ সহজ অথচ অনেক দেশেই লাভলোকসানের বিবেচনায় এটা কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। এই প্রবণতা ও পুরুষরাই পরিবারের উপার্জনকারী হিসেবে বেশি সুবিধা ভোগ করার অধিকারীÑ এই পক্ষপাতমূলক চিন্তার অবসান ঘটাতে হবে।
অতিসম্প্রতি ডায়ানে এলসনসহ অন্য নারী স্বার্থরক্ষা প্রবক্তা অর্থনীতিবিদরা অর্থনৈতিক নীতিগুলোর মানবাধিকার দিক নিরীক্ষা করার কথা বলছেন। বৃহৎ ও জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সম্মানজক কর্মসংস্থানের অধিকারসহ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা রয়েছে কি নাÑ তা তারা মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করে যাচাই করছেন।
য় লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সকলেরই আছে সম্মানজনক কাজের অধিকার
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ