Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফ্রান্সে সহিংসতায় আহত ১৩৫ ও আটক ১৮শ’

বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগ এরদোগানের নিন্দা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

রাজধানী প্যারিসসহ ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে চলমান ‘ইয়েলো ভেস্ট’ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। শনিবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১৩৫ জন। ইতোমধ্যে অন্তত ১৮শ’ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিক্ষোভ ও সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। এদিকে, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
সংবাদ মাধ্যম সূত্র জানায়, শনিবারের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন অন্তত ১ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষ। স্থানীয় সময় সকাল থেকে ঐতিহাসিক চ্যাম্পস এলিসি ও প্লেস ডে লা রিপাবলিকের কাছে এসে মিলিত হন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফরাসি কর্তৃপক্ষ দেশব্যাপী প্রায় ৯০ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করে। এর মধ্যে শুধু প্যারিসেই মোতায়েন করা হয় ৮ হাজার পুলিশ। পরে আন্দোলনের এক পর্যায় পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে তারা এগোতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সে সময় আন্দোলনরত লোকজন বিভিন্ন গাড়িতে ভাংচুর করেন এবং আগুন দেন। আশপাশের অসংখ্য দোকানেও হামলা চালান বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা। পরে সড়কে সাঁজোয়া যান নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। আন্দোলনে ‘হলুদ জ্যাকেট’ পরিহিত লোকদের উপর টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। নিক্ষেপে ক্ষতি অথবা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এমন সকল সম্ভাব্য জিনিস সড়ক থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
এদিকে, প্যারিসে বিক্ষোভকারীদের দমনে পুলিশ ‘মাত্রাতিরিক্ত শক্তি’ প্রয়োগ করছে বলে দাবি করে বিষয়টির নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের পুলিশের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ করে, তাদের দেখা উচিত যে তাদের পুলিশ এখন কী করছে।’
উল্লেখ্য, তুরস্কে আগামী ৩১ মার্চ স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন এই নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলোর সমালোচনায় মুখর হয়েছেন এরদোয়ান। নিন্দুকদের পেছনে বিদেশিদের ইন্ধন রয়েছে বলে প্রায়ই দাবি করেন তিনি।
এ ঘটনায় দেয়া এক টুইট বার্তায় সাহসিকতা এবং সঠিকভাবে পেশাদারিত্ব পালনের কারণে নিরাপত্তা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাখোঁ।
প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড ফিলিপ রাতে দেয়া এক ভাষণে দেশে জাতীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । তিনি বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, কোন ধরনের ট্যাক্স আমাদের জাতীয় ঐক্যকে বিপন্ন করতে পারবে না। এখন আলোচনা, কাজ এবং একত্র হয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
অন্যদিকে প্যারিসে আন্দোলনরত জনাথন গনজেলস নামক এক বিক্ষোভকারী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‘ফ্রান্স বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশগুলোর মধ্যে একটি, কিন্তু গত কয়েক দশক যাবত সরকারের অদূরর্শিতার কারণে ফরাসি জনগণ দরিদ্রতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। আমরা শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি চাই এবং সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন কমাতে চাই।’ তিনি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর উদ্দেশে বলেন, ‘বর্তমানে আপনার জনপ্রিয়তার গ্রাফ ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। প্রশাসন ব্যবহার করে এভাবে আর থাকা যাবে না।’
শনিবারের বিক্ষোভে আন্দোলনকারীরা ‘জনগণের কথা শুনুন’ স্লোগান দিয়ে প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর পদত্যাগের দাবি করতে থাকেন। অনেকেই কঠোর সংস্কারের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ‘সরকারের দাবি, ফ্রান্সকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করা হচ্ছে। তবে রাষ্ট্রপতি দরিদ্রদের নয়, শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিদের জন্যই চিন্তায় ব্যস্ত।’
আন্দোলনের বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহের সহিংসতার পুনরাবৃত্তি দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেবে।’ একইসঙ্গে এ আন্দোলনের ফলে সরকারের টিকে থাকার বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা।
উল্লেখ্য, সরকার জ্বালানি তেলের উপর বাড়তি কর আরোপের পরিকল্পনা নেয়ায় চার সপ্তাহ আগে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির সূত্রপাত হয়। আন্দোলনকারীরা ইয়েলো ভেস্ট পরে রাস্তায় নেমে আসেন। তবে বিক্ষোভের কারণে পরবর্তীতে বাড়তি কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেও আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ থাময়নি। বরং ফ্রান্সে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে যাওয়া এবং প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আন্দোলনকারীরা ফ্রান্স সরকারের বিরুদ্ধে চলা এই বিক্ষোভকে আখ্যা দিয়েছে ‘অ্যাক্ট ফোর’, যেন এটা কোনও নাটকের চতুর্থ অঙ্ক। বিক্ষোভকারীদের অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের কারণে প্যারিস পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে নগরীতে। দোকান-পাট সব বন্ধ। বন্ধ রাখা হয়েছে রাজধানী প্যারিসের যাদুঘর, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, মেট্রো এবং দেশের প্রধান ল্যান্ডমার্ক আইফেল টাওয়ার। সূত্র: আনাদুলু এজেন্সি, ভোয়া, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফ্রান্স


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ