Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভোটের লড়াই শুরু

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। গতকাল প্রতীক বরাদ্দের মধ্যদিয়ে এর সূত্রপাত হয়েছে। এই প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জমে উঠবে ভোটের লড়াই। আর চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া ৩০ ডিসেম্বর। ইতোমধ্যে প্রধান দুই দল ও জোট ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এ জন্য দুই প্রধান দল ও জোটকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাইকে সন্তুষ্ট করা যায়নি। এটা আশাও করা যায় না। কিছু ক্ষোভ-বিক্ষোভ, অসন্তোষ আছেই। সবদিক খেয়াল রেখে প্রার্থী চূড়ান্ত করা দুই প্রধান দল ও জোটের পক্ষে কঠিন কাজই ছিল। এই কঠিন কাজটি একরকম সম্পন্ন হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থীদের দু’জন বাদে সবাই ধানের শীর্ষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোটের প্রার্থীরা যথাক্রমে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। দুই প্রধান দল ও জোটের বাইরে বামপন্থী দল ও জোট এবং ইসলামী দলও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি বড় বৈশিষ্ট্য এই যে, এতে সব দল অংশগ্রহণ করছে। এত দল এর আগে কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে তাকিদ ও প্রত্যাশা ছিল বিভিন্ন মহলে, তা পূরণ হয়েছে। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে এরূপ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এর আগে হয়নি। বলে রাখা দরকার, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত (মাঝখানে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন বাদে) নির্দলীয় তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে। ওই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলসহ অধিকাংশ বিরোধী দল অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাদে সব ভোটার ওই নির্বাচনে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। বলা যায়, ১০ বছর পর এবার দলমত নির্বিশেষ সকল ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেতে যাচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে এবং সংসদ বহাল থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে তা অংশগ্রহণমূলক হলেও কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে বিভিন্ন যথেষ্ট সংশয়ে ও সন্দেহ রয়েছে। অতীতে দলীয় সরকারের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে, তার একটিও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। সব নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন দল বিজয়ী হয়েছে। কাজেই, এবারের নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সংশয়-সন্দেহ মোটেই অমূলক নয়। সরকার, সরকারি দল ও মহল এবং নির্বাচন কমিশনের তরফে যদিও বলা হয়েছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে, কিন্তুু আলামতাদী থেকে তা এখনো প্রতীয়মান হয়ে ওঠেনি। নির্বাচন কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে জন্য প্রাথমিক কাজ হিসাবে নির্বাচনের মাঠ সমান করা জরুরি বলে বিবেচিত হলেও মাঠ এখনো অসমতল ও খানাখন্দকে ভরা। নির্বাচন কমিশন মাঠ সমতল করতে এখনো সমর্থ হয়নি। স্বীকার করতেই হবে, সরকার তার সুবিধা বা অনুকূলে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন সাজিয়েছে। এই সাজানো প্রশাসন দ্বয়ের মাধ্যমেই হতে যাচ্ছে নির্বাচন। বিরোধ দলের পক্ষ থেকে উভয় প্রশাসনে প্রয়োজনীয় রদবদলের দাবি জানানো হলেও নির্বাচন কমিশন তাতে কর্মপাত করেনি। বিভিন্ন মহল থেকেই অভিযোগ উঠেছে নির্বাচন কমিশন সরকারের দেখানো পথই অনুসরণ করছে। সরকারের দেখানো পথে হাঁটলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কীভাবে কাঙ্খিত নির্বাচন করা সম্ভব হবে? সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে ভূমিকা রাখার। এটা নৈতিকতার দাবি। তাছাড়া সরকারের প্রবর্তিত নির্বাচনী ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা প্রতিপন্ন করার জন্যও এটা প্রয়োজন। সরকার এই নৈতিকতার দাবি পূরণ ও দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে কতটা আন্তরিক, সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
পর্যবেক্ষকদের অভিমত, নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা ও এখতিয়ার রয়েছে, তা যথযথভাবে প্রয়োগ করলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা সম্ভব। এজন্য সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের ওপর তার নিরংকুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি প্রতিপালনে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক বা অনিয়ন্ত্রিত আচরণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ করা গেছে। নির্বাচনী আচরণবিধিও নির্বিচারে লঙ্ঘিত হতে দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশন এসব ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকার নীতি অনুসরণ করেছে। তফসিল ঘোষণার পর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও বাস্তবে নির্বাচন কমিশন তা করতে পারেনি। বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। সেটা নির্বাচন কমিশন বন্ধ করতে পারেনি। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা যদি নির্বাচনের মাঠেই না থাকতে পারে, তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে তৈরি হয়েছে বলা যাবে এবং নির্বাচনই বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হবে কীভাবে? পর্যবেক্ষক মহল থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনে ভোট দেয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে ভোট দেয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণাকালে প্রতিদ্বদ্বী দল ও জোটের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ দেখা দিতে পারে, যার প্রমাণ ইতোমধ্যেই দেখা গেছে। আচরণবিধির লংঘন হতে পারে ব্যাপকভাবে। এদিকে নির্বাচন কমিশনকে কঠোরভাবে নজর রাখতে হবে। খবর পাওয়া গেছে, অধিকাংশ নির্বাচন কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথোচিত জোরদার করতে হবে। কোনো নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন নয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ সক্রিয়তা ও তৎপরতা দেখাতে হবে। প্রত্যাশিত নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের সদাচারণ, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানও একান্তভাবে কাম্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন