Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

একই আসনে মহাজোটের একাধিক প্রার্থী

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৬ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে মহাজট দেখা দিয়েছে। রোববার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিনে মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টি (জাপা) ও যুক্তফ্রন্ট প্রায় দেড় শতাধিক আসনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রেরণ করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়া মহাজোটের বাইরে গিয়ে জাতীয় পার্টি প্রায় দেড়শ আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সূত্র জানায়, উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের কারণে শঙ্কায় রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা; তৈরী হয়েছে ক্ষোভ। কারণ অতীতের নির্বাচনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জামালপুর-১ আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী রশিদুজ্জামান মিল্লাত ৯৩ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন।
৭৩ হাজার ভোট পেয়ে হারতে হয়েছিল আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদকে। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এম এ সাত্তার ৩৪ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ভোট যোগ করলে হারতে হয় বিএনপির প্রার্থীকে। এবারও একই শঙ্কা কাজ করছে আবুল কালাম আজাদের।
নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে ৬১ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূইয়া। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান আলী ৪৫ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। যেখানে জাতীয় পার্টির শাহজাহান সাজু ১৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন।
এবারের নির্বাচনে ২০টি আসনে এই ধরণের সমীকরণের মুখোমুখি আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। যেখানে যেখানে জাতীয় পার্টির ভোট আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগ হলে বিএনপিকে হারতে হবে আর যোগ না হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় হবে।
ইসিতে দেয়া চিঠি অনুযায়ী, মহাজোটের হয়ে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ ২৫৮টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি, জাসদ-ইনু ৩টি, যুক্তফ্রন্ট ৩টি, বাংলাদেশ জাসদ-আম্বিয়া ১টি, তরিকত ফেডারেশন ২টি, জাতীয় পার্টি-জেপি ১টি আসনে এবং লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টি ২৯টি আসনে নির্বাচন করবে।
এছাড়া জোটের বাইরে দলীয় ভাবে নিজ নিজ প্রতীকে জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকে ১৪৫টি আসনে; বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারার দলীয় প্রতীক ‘কুলা’ নিয়ে ২০টি আসনে, জাসদ-ইনু মশাল প্রতীকে ৪টি আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি হাতুড়ি প্রতীকে ৫টি আসনে, জাতীয় পার্টি-জেপি বাইসাইকেল প্রতীকে ৭টি আসনে, গণতন্ত্রী পার্টি কবুতর প্রতীকে ৬টি আসনে, ন্যাপ কুঁড়েঘর প্রতীকে ১০টি আসনে, সাম্যবাদি দল চাকা প্রতীকে ২টি আসনে নির্বাচন করবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মহাজোটের অন্যতম শরীক এরশাদের জাপার সঙ্গে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে যেমন সমঝোতা করতে পারেনি। এছাড়া শরীকদের সঙ্গে আসন বণ্টনে সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিষয়টিকে কৌশল হিসেবে দাবি করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
নেতারা বলছেন, যদি শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ায় তাহলে এসব প্রার্থীরা বিরোধী প্রার্থী হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। সূত্রে জানায়, জাতীয় পার্টি নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে যে বাণিজ্য হয়েছে তাতে দলীয় প্রার্থিতা দেয়ার মাধ্যমে দলের জটিলতা কমানো হল। এবার প্রার্থীরা নিজের মত করে নির্বাচন করবে। অন্য দলগুলোর সূত্র জানায়, কিছু কিছু আসনে উন্মুক্ত নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগকে বলা হয়েছে। সে হিসেবে তারা প্রার্থী দিয়েছেন।
জাসদ যে ৪টি আসনে নির্বাচন করবে তা হল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে শাহ জিকরুল আহমেদ, গাইবান্ধা-৩ আসন থেকে এস এম খাদিমুল ইসলাম খুদি, রংপুর-২ আসন থেকে কমারেশ চন্দ্র রায় এবং বরিশাল-৬ আসন থেকে মো. মোহসিন।
ন্যাপের সারা দেশে ১০টি আসনে দলীয় প্রতীক কুঁঁড়েঘর মার্কায় নির্বাচন করবেন। চট্টগ্রাম-৮, জামালপুর-১, নাটোর-৪, ঢাকা-৫, চট্টগ্রাম-১৪, চট্টগ্রাম-১৬, বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ আসন থেকে ন্যাপের প্রার্থীরা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবে।
বিকল্পধারার কুলা প্রতীক নিয়ে যেসব আসনে লড়বে যুক্তফ্রন্ট: দিনাজপুর-২ মো. আশরাফুল ইসলাম, রংপুর-২ ইঞ্জিনিয়ার হারুন-অর-রশিদ তালুকদার, কুড়িগ্রাম-২ আবুল বাশার, রাজশাহী-৩ মো. মনিরুজ্জামান, নাটোর-৩ মনজুর আলম হাসু, সাতক্ষীরা-৪ এইচ এম গোলাম রেজা, যশোর-৪ এম নাজিমউদ্দিন আল আজাদ, যশোর-৩ মারুফ হোসেন কাজল, বরিশাল-৩ মো. এনায়েত কবির, টাঙ্গাইল-২ মুনিরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ-২ গোলাম সারোয়ার মিলন, ঢাকা-৪: কবির হোসেন, ঢাকা-১৩ মো. মাহবুবুর রহমান, ঢাকা-১৫ এইচ এম গোলাম রেজা, ঢাকা-১৭ এ কে এম সাইফুর রশিদ, ঢাকা-১৯: আইনুল হক, সিলেট-৬ শমসের মবিন চৌধুরী, কুমিল্লা ১১ মাওলানা শামছুল হক জেহাদী, নোয়াখালী-১ ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, কক্সবাজার-২ মেজর (অব.) শাহেদ সরওয়ার।
যেসব আসনে মহাজোটের একাধিক দলের প্রার্থী রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ একাংশ) আসন। এখানে মহাজোটের তিন জন প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন- বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি এইচ এম গোলাম রেজা (কুলা প্রতীক), আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি এস এম জগলুল হায়দার (নৌকা প্রতীক) এবং জাপার সাত্তার মোড়ল (নাঙ্গল প্রতীক)। এ তিন প্রার্থীর সবাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের, তাই আওয়ামীলীগ একক কোনো প্রার্থীর পক্ষে না গিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছে।
একই চিত্র সাতক্ষীরা-১ ও ২ আসনে। এ দুটি আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে জাপারও প্রার্থী রয়েছে। ফলে সাতক্ষীরা-৪ আসনের ন্যায় এখানেও মহাজোটের একাধিক প্রার্থীর মধ্যে ভোটযুদ্ধ হবে। অপরদিকে, এসব আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী রয়েছে।
এবার মহাজোটে থেকেও জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী দেওয়ার ভূমিকার ব্যাখ্যায় দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের সমস্যা হলেও তাদের অনেক প্রার্থী হওয়ায় সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। প্রতিটি আসনে আমাদের অনেক প্রার্থী রয়েছে। এটা নিয়ে একটু অসুবিধা হচ্ছিল। আমাদের বিবেচনায় ছিল, আমাদের প্রার্থী দাঁড়ালে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পরে মহাজোট থেকে সিদ্ধান্ত আসল, ঠিক আছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। এসব বিবেচনায় দুই দলই যেন দুদলের সহযোগিতা পায়, সেটা বিবেচনা করে আসন ওপেন রাখা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির এত প্রার্থীর বিষয়টির বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, জোটের বাইরে অনেক শরিকরাই নির্বাচন করছে। এটা আমাদের জোটগত সিদ্ধান্ত।#



 

Show all comments
  • Mizan Chowdhury ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:০৫ এএম says : 0
    ভোট সুষ্ট হলে আওয়ামী লীগ ১০০% হেরে যাবে আর ২০ টার উপরে সিট পাবে না
    Total Reply(0) Reply
  • Sulaiman Numan ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:০৬ এএম says : 0
    এক জরীপ অনুযায়ী ৮৫% মানুষ হাসিনার পতন চায়। বাকি ১৫% কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না সেই সংশয় করছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah Belal ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:০৭ এএম says : 0
    আমি বিএনপি নয় আওয়ামী লীগ ও নয় কিন্তু আমি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অপমান এর বিচারের জন্য আওয়ামী লীগের পতন চাই। হে আল্লাহ কবুল কর। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Jonakir Alo ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:০৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ৯০০কোটি টাকা ফেরত চাই, কয়লা ও পাথরের সন্ধান চাই, সোনা কেমনে তামা হল জবাব চাই, সব গুম-খুনের বিচার চাই, সব হিসাব পাওয়ার পর, সব বিচার পাওয়ার পর ভোট দিতে চাই। হিসাব নাই তো ভোট নাই। জবাব নাইতো ভোট নাই। বিচার নাই তো ভোট নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • হারুনুর রশিদ ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:১৬ পিএম says : 0
    আমরা শুধু আমাদের ভোট দেবার অধিকারটা ফিরে পেতে চাই। আর কেন্দ্রে যেন সুস্হ ভাবে ভোট গণনা হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ