Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করুন

| প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

কোন রাজনৈতিক সমঝোতা না হলেও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইতিমধ্যেই সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারনায় নেমে পড়েছেন। ভোটের আর মাত্র ১৭দিন বাকি। তবে একটি সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাকি আছে আরো অনেক কিছুই। প্লেয়িং ফিল্ড এখনো অসমতল। বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই হামলা ও পুলিশি ধরপাকড়ের শিকার হচ্ছেন। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দিলেও সরকারী দলের পক্ষ থেকে এখনো নির্বাচন বানচালের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা ও দূতাবাসের সাথে গোপন বৈঠক করেছে বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেছেন। তাঁর এই অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও দূরভিসন্ধিমূলক অভিহিত করে এ ধরনের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল রীতিমত অপ্রত্যাশিত, বিস্ময়কর ঘটনা। এমনকি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবীর একটিও মানা না হলেও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তের পর বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে উদ্যোগী ভ‚মিকা না করে সরকারী দলের পক্ষ থেকেই বার বার নির্বাচন বানচালের অভিযোগ তোলার কারণে নির্বাচন নিয়ে জনমনে এখনো সংশয় রয়ে গেছে।
বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের শর্ত পুরণ করতে হলে প্রথমে জনমনের সংশয়-সন্দেহ ও ভয় দূর করতে হবে। সকল দলের অংশগ্রহণ সত্বেও যদি সাধারণ ভোটাররা নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারেন তাকে অবাধ ও সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যাবে না। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জেলখানায় রেখে, হামলা মামলায় জর্জরিত করে, নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানি ও আদালতে ব্যস্ত রেখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায় এমন অনেক অনুসঙ্গ এখনো বিদ্যমানও সক্রিয় রয়েছে। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে বিবেচিত হলেও এবারের হাই-ভোল্টেজ নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কোন তৎপরতা বা অভিযান দেখা যাচ্ছেনা। নির্বাচনের উত্তাপ তুঙ্গে উঠার আগেই প্রতীক পেয়ে প্রচারনায় নামার প্রথম দিনেই গত সোমবার দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষের কর্মী সমর্থকদের হামলায় অন্তত ৭৭ জন আহত হয়েছেন বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ী বহর হামলার শিকার হয়েছে। নাটোরের লালপুরে ধানের শীষের প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম এবং তাঁর ২ সহযোগী আহত হয়েছেন। নির্বাচনের রির্টানিং অফিসার ও মাঠপ্রশাসন সরকারী দলের পক্ষে কাজ করছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা’ অমূলক নয়। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে একতরফাভাবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র বাতিল হওয়ার ঘটনা থেকেই তা পরিষ্কার হয়ে যায়।
জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানাবিধ কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়া জরুরী। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোটারবিহীন ও একপাক্ষিক হওয়ায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এর ফলে দেশের বিনিয়োগ ও বৈদেশিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধুমাত্র সবদলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত হয়ে যায় না। তা ছাড়া শুধু নির্বাচনই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একমাত্র মানদন্ড নয়। নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত হওয়া, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা না থাকলে নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন অসম্ভব। একপক্ষ রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াবে, আরেক পক্ষ হামলা-মামলা ও অপপ্রচারের শিকার হয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়লে তাকে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন বলা যাবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। এ দেশের সাড়ে ১০ কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। এহেন বাস্তবতায় কোন একপাক্ষিক নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সম্ভাবনাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। নির্বাচনী প্রচারনার শুরুতেই সারাদেশে যে সংঘাত সহিংসতা দেখা গেছে তা’ কঠোরভাবে দমন করতে হবে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরকারদলীয় প্রার্থীদের জেতাতে ডিসিদের গোপন তৎপরতার অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগ সত্য হয়ে থাকলে, এটি খুবই সাংঘাতিক বিষয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের যে সব কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক ভ‚মিকা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে, তাদেরকে এখনই চিহ্নিত করে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচনের জন্য নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মূল দায়িত্ব। এই দায়িত্ব অগ্রাহ্য করার কোন সুযোগ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন