Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাবা

সম্পত্তির লোভে সন্তানদের হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের কাছে বাবাদের শেষ আশ্রয়স্থল হওয়ার কথা। কিন্তু সেই সন্তানরাই যদি বাবাদের জন্য হুমকি হয় তবে আর উপায় কি? সম্পত্তির লোভে সন্তানদের মারধরের শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকিতে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে এমনই এক অসহায় বাবাকে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন আবুল কালাম বাবুল (৬৫) নামে সেই হতভাগা বাবা।
তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে সন্তানদের বড় করেছি। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছি। সেই আদরের সন্তানদের হাতে বেধড়ক মার খেতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। কান্নারত অবস্থায় তিনি বলেন, একটি কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে জন্মদাতা বাবাকে পিটিয়ে আহত করতে দ্বিধাবোধ করেনি তারা। শুধু তাই নয়, পিটিয়ে কাজ না হওয়ায় সম্পূর্ণ সুস্থ্য বাবাকে জোর করে পাগল সাজিয়ে ভর্তি করা হয় মানসিক হাসপাতালে। আর এখন দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকিসহ নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে তারা। তিনি বলেন, কখনো ভাবিনি নিজের সন্তানদের বিরুদ্ধে এভাবে সংবাদ সম্মেলন করতে হবে। কিন্তু এখন তাদের হাত থেকে বাঁচার তাগিদে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তা কামনা করছি।
বাবুল বলেন, তিনি আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করেন। দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। অনেক কষ্ট করে বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা ও সম্পত্তি রক্ষা করেছেন। ভাই বোনদের মধ্যে বাবার সম্পত্তি ভাগ হওয়ার পর নিজের অংশ নিয়ে বেশ চলে যাচ্ছিলো তার। বড় ছেলে আশিক কালাম ওরফে শিহাব একজন ক্যামিস্ট। মেয়ে নওরিন সাবা কালামকে লন্ডনে লেখা-পড়া করিয়েছি। ছোট ছেলেও দেশের একটি নামী ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ছে।
তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে সন্তানদের লালন-পালন করেছি। কিন্তু হঠাৎ করে সেই সন্তানরা তাদের মা সোফিয়া কালাম ও মামাদের প্ররোচনায় বাবার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাদের দাবীÑ আমার স্থাবর-অস্থাবর পুরো সম্পত্তি তাদের নামে লিখে দিতে হবে। তারা সম্পত্তি বিক্রি করে লন্ডনে বাড়ি কিনবে।
বাবুল বলেন, আমার কষ্টে গড়া ব্যাবসা ও পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সন্তানরা। নানা ধরনের অত্যাচার শুরু করে তারা। বছরের পর বছর এভাবে চললেও সমাজিক সম্মান ও লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কখনো বলিনি। কিন্তু এখন অসহায় হয়ে সবকিছু বলতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ১৮ অক্টোবর রাতে আমার ১৩ নম্বর পরীবাগের বাসায় ঘটে যায় নির্মম ঘটনা। ওই রাতে বড় ছেলে আশিক, স্ত্রী সোফিয়া ও দুই শ্যালক সম্পত্তি লিখে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। আমি রাজি না হওয়ায় ছেলে আশিক তার মা ও মামাদের সহযোগীতায় আমার কলার চেপে ধরে বেধড়ক কিলঘুশি মারতে শুরু করে। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তারা আমার হাত-পা বেধে একটি মাইক্রোবাসে উঠায়। তিনি বলেন, যখন জ্ঞান ফেরে তখন নিজেকে তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি মানসিক হাসপাতালের সামনে আবিষ্কার করি। ওই সময় আশিক ও তার সহযোগীরা কিছু সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলে। কিন্তু না করায় পুনরায় বেধড়ক মারধর করে কয়েকটি লেখা ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ওই হসপিটালে ভর্তি করে রেখে আসে।
বাবুল আরও বলেন, ওই হসপিটালে ৩৩ দিন ধরে বন্দি ছিলাম। কিন্তু শরীরে সার্বক্ষণিক ওষুধ প্রয়োগ করায় এতদিনের বিষয়টি বুঝতে পারি নাই। এই সময়ের মধ্যে আমার ভাই-বোন ও অন্যান্য আত্ময়দের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়নি এমনকি আমি কোথায় আছি সেটিও তাদেরকে জানানো হয়নি। তিনি বলেন, একপর্যায়ে আমার ভাইবোন ও ব্যবসায়ীক ম্যানেজার আমার খোঁজ পেয়ে আইনজীবীর পরামর্শে থানায় জিডি করে আদালতের সরণাপন্ন হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তেজগাঁও থানা পুলিশ গত ২২ নভেম্বর আমাকে ওই হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে আদালতে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে আদালত আমাকে সুস্থ্য সাব্যস্ত করে নিজ জিম্মায় থাকার অনুমতি দেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমি মুক্ত অবস্থায় থাকলেও সন্তান এবং তাদের মা-মামাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তারা প্রতিনিয়ত আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। হুমকিতে ‘এবার ধরতে পারলে আর বাঁচিয়ে রাখবো না, সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো’ এমন কথা বলে। এ ব্যপারে জানতে বাবুলের ছেলে আশিকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সংবাদ সম্মেলনে বাবুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খালেদ মাসুদ মজুমদার, ম্যানেজার ও অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জীবন

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ