Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘অশান্তি গইরলে ভোটত জওয়াব’

চট্টগ্রামের ১৯টি আসনে দুই জোটের নির্বাচনী ক্যাম্প চালু শান্তিপূর্ণ প্রচারণা চায় মানুষ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

“যার যার ভোটর কেনভাস তে তে গরঅ। কিনতুক সন্ত্রাস গন্গোডল অশান্তি তৈয়ার গইরলে আখেরে কনঅ লাভ ন অইব। পাবলিক বেকুপ নঅ। ভোটর দিন আঁরা ভোটত জওয়াব দিয়ম”। (অর্থাৎ যার যার ভোটের প্রচারণা তিনি চালাবেন। কিন্তু সন্ত্রাস, গন্গোডল, অশান্তি সৃষ্টি করলে শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হবেনা। জনগণ বোকা নেই। ভোটের দিন আমরা ভোট দিয়েই তার জবাব দেবো)।
গতকাল বুধবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জনবহুল এলাকা বাকলিয়া কালামিয়া বাজারে একটি কুলিং কর্নারে বসা কয়েকজন লোক নিজেদের মধ্যে ওই কথাগুলো বলছিলেন। নগরীর বহদ্দার হাট মোড়ে লোকজনের বলাবলিতে শোনা গেল, ‘ঠাকুরগাঁওতে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলের গাড়িতে কেন হামলা করা হলো? কী দোষ উনার? উনি তো ভদ্র মানুষ জানি। এভাবে ধানের শীষের প্রচার হলে হামলা হবে আর নৌকার বেলায় নো-চিন্তা ডু-ফুর্তি তা তো ঠিক না। ইলেকশন কমিশন ঠিকঠাক মতো দায়িত্ব পালন করলে তো সমস্যা হয় না’।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফ‚র্ত আলাপচারিতা এবং শান্তিপ্রিয় আপামর মানুষের অনুভ‚তি তারা দুই জোটের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার পক্ষে। ভোটের ক্যানভাসে দুই পক্ষ নিজ নিজ বক্তব্য ভোটার-জনতার কাছে তুলে ধরবে। ভোটাররা বিচার-বিবেচনা করে স্বাধীন ও সুচিন্তিত রায় দেবেন ভোটের মাধ্যমে। কিন্তু এক পক্ষ যদি মাঠে অবাধে প্রচার চালায়, আরেক পক্ষ জনগণের সামনে গিয়ে কথাগুলো বলবে কীভাবে? আবার পুলিশসহ গোটা প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভ‚মিকা পালনের প্রত্যাশা মানুষের।
ব্যবসায়ী, শিক্ষক, আলেম-ওলামা,আইনজীবী, শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজনের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার দিকে নিবিড় মনোযোগী রাজনীতি সচেতন সাধারণ মানুষ। সরকারী দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী তৎপরতা ভোটাররা পর্যবেক্ষণ করছেন গ্যালারির দর্শকের মতো। ‘দর্শক’রাই আশা করছেন ভোটের ময়দান দেশের মূল দুই প্রতিদ্ব›দ্বী রাজনৈতিক দলের জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে। এরজন্য পুলিশসহ সমগ্র প্রশাসনযন্ত্র উভয়পক্ষের জন্য মাঠে সমঅধিকার নিশ্চিত করবে। অন্যথায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের প্রত্যাশা পরিণত হবে দুরাশায়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হবে বিপর্যস্ত। যা দেশ ও জাতিকে পিছিয়ে দেবে বহুদূরে।
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার প্রথম পর্যায়ে গতকালও বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি আসনের প্রার্থীরা নির্বাচনী ক্যাম্প ও অফিস চালু, স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে গণসংযোগ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। দল ও জোটগত ঘর গোছানোর নানামুখী তৎপরতায় ব্যস্ত দুই জোট। তাছাড়া তিনটি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির তিন আসনে আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নিজেদের পৃথক পৃথক প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা পাহাড়ে নিজেদের ভোট ব্যাংক আয়ত্তে রাখতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে অনেকটা নেপথ্যে। নির্বাচনের সুযোগে উভয় সংগঠন চাইছে আরও সংগঠিত হতে। যাতে পাহাড়ে তাদের প্রভাব বলয় তৈরি বা বৃদ্ধি পায়।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর তিনটি আসনসহ জেলার মোট ১৬টি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা, মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির লাঙল এবং বিএনপিধানের শীষ, ছাতা মার্কার প্রার্থী ও নেতারা মাঠে সরব। সেই সঙ্গে নিজেদের দল-জোটগত অবস্থান সংহত করার লক্ষ্যে মনোনয়ন বঞ্চিতদের কাছে টানছেন। ঐক্যের আওয়াজ উঠেছে সর্বত্র। মহাজোটের মনোনয়ন বঞ্চিত এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের পাশে পেতে নৌকা ও লাঙল প্রতীকের প্রার্থীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত তেমন সাড়া মিলেনি। অন্যদিকে ধানের শীষের যারা বিকল্প প্রার্থী ছিলেন তাদের বেশিরভাগই এখন দল-জোটগত মনোনীত প্রার্থীদের সাথে মাঠে তৎপর হয়েছেন।
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার প্রাথমিক পর্যায়ে গণসংযোগ তৎপরতা বেশি চোখে পড়ছে। প্রধান দুই জোটের প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে ছুটছেন। দোয়া ও সমর্থন চেয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট মাঠে সক্রিয় অনেক আগে থেকেই। সেই তুলনায় অনেক পরে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আগমন। ধানের শীষ প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের সরব পদচারণা বাড়ছে ধীরে ধীরে। উভয় জোটে ভোটের ময়দানে তৎপরতা বৃদ্ধির সাথে চট্টগ্রাম অঞ্চলে তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকরা নিজেদের মার্কা নিয়ে ছুটছেন গ্রাম-জনপদে, পাড়া-মহল্লায়। প্রতিটি এলাকা ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের সাদা-কালো পোস্টারে। পাশাপাশি যেতে দেখা যাচ্ছে নৌকা আর ধানের শীষের মিছিল। শ্লোগানে আর মাইকে ভেসে আসছে মার্কার আওয়াজ। শীতের অনুভ‚তি হার মেনেছে ভোটের উত্তাপের কাছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ