Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তাহলে সেনাবাহিনী কেন মাঠে?

| প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৫ এএম | আপডেট : ১২:১৪ এএম, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

গত ২৪ ডিসেম্বর সোমবার নির্বাচন উপলক্ষে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। ভোটের মাঠে সেনাবাহিনীর নামাকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট স্বাগত জানিয়েছে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এতে চলমান সংঘাত ও সংঘর্ষ কমবে এবং নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরবে। দেখা যাচ্ছে, সেনাবাহিনী মাঠে নামার প্রথম দিনেই ব্যাপক সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে। অন্তত ১৭ জেলায় সহিংসতা হয়েছে। বিরোধী দলের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যাপক হামলা হয়েছে এবং বিএনপির ৭ জন প্রার্থী হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১৩০ জনের মতো। সেনাবাহিনী নামার পর এ ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ কাম্য না হলে, তা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সাধারণ মানুষ আশা করেছিল, আস্থার প্রতীক সেনাবাহিনী মাঠে নামলে চলমান নির্বাচনী সহিংসতা অনেকটাই কমে যাবে এবং ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে। তা না হয়ে আগের মতোই পরিস্থিতি বজায় থাকায় তারা হতাশ হয়েছে। অর্থাৎ তাদের আশার বিপরীত ঘটনা ঘটেছে। এ পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তবে সাধারণ মানুষের কাছে সেনাবাহিনীর মাঠে থাকা এবং তার কার্যকর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।
বিগত দশ বছরে ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ব্যাপক দলীয়করণ করার অভিযোগ বরাবরই উঠেছে। এ অভিযোগের সত্যতা নির্বাচনকালীন এ সময়ে প্রশাসন ও পুলিশের অনিরপেক্ষ আচরণ থেকেই বোঝা যায়। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় যখন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া হয় তারা দলমত নির্বিশেষে সবার সাথে সমান আচরণ করবে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিরোধী দলের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ক্রমাগত হামলা চালালেও এসব হামলা ঠেকানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশকে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে বারবার লিখিতভাবে অভিযোগ করা হলেও কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এতে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দল এক হয়ে কাজ করছে, বিরোধী দলের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য থেকেও তা প্রতীয়মান হচ্ছে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচনী পরিবেশ ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বারবার বলছেন, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে, সুবাতাস বইছে। এ নিয়ে পর্যবেক্ষকরা তাকে কালা, বধির এবং দেখেও না দেখার ভান করার মতো তীব্র বাক্যবানে সমালোচনা করলেও তার মধ্যে কোনো বিচলন দেখা যায়নি। তার এই ধরনের আচরণে নির্বাচনী সহিংসতা জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে। এ প্রেক্ষিতে, দেশের নাগরিক সমাজ, সচেতন মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল, কখন সেনাবাহিনী মাঠে নামবে। তাদের উচ্চ প্রত্যাশা ছিল, সেনাবাহিনী মাঠে নামার সাথে সাথে চলমান সংঘাত-সংঘর্ষ থেমে যাবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করবে। যখন ঘোষণা করা হলো ২৪ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনী মাঠে নামবে, তখন তারা অত্যন্ত আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে অপেক্ষা করছিল। সেনাবাহিনী মাঠে নামাকে বিরোধীদলের পক্ষ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাগত জানানো হয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, সাধারণ মানুষ দেখল, সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে এবং মাঠে নামাার পরও সংঘাত-সংঘর্ষের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়েনি, উল্টো ব্যাপক হারে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তখন তারা যারপরনাই হতাশ হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহŸায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পরও হামলার ঘটনা একদমই প্রত্যাশার বাইরে। সেনাবাহিনীর এক সাবেক কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, সেনাবাহিনী মাঠে নেমে প্রথমেই দুষ্টলোকদের বার্তা দেবে যে তারা কাউকে ছাড় দেবে না। যারা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছে, প্রশাসনে থেকে পক্ষপাতিত্ব করছে তাদেরকেও একই বার্তা দেবে। সেনাবাহিনী প্রথম দিন এ বার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেনাবাহিনী মাঠে নামার পরও দেখা যাচ্ছে, হামলা-মামলা-গ্রেফতার চলছেই, সহিংস ঘটনা ঘটছে, পুলিশের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ অব্যাহত আছে। প্রথম দিনে সেনাবাহিনীকে কার্যকর ভূমিকায় না দেখায় সাধারণ মানুষ একে ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা মনে করছে, এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সেনাবাহিনীকে নিয়ে যে উচ্চ প্রত্যাশা, তা হতাশায় পরিণত হবে এবং নির্বাচনের পরিবেশ আরও সহিংস হয়ে উঠবে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, প্রথম দিনে সেনাবাহিনী দুষ্কৃতিকারী থেকে শুরু করে পুলিশ ও প্রশাসনে পক্ষপাতদুষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো বার্তা দিতে না পারাটা খুবই হতাশার। এতে তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। তারা মনে করছেন, সেনাবাহিনী জনগণের টেক্সের অর্থে পরিচালিত এবং সকল জনগণই তার কাছে সমান আচরণ প্রত্যাশা করে। সাধারণ মানুষ মনে করে, যেখানে পুলিশ থেকে শুরু করে প্রশাসনের প্রায় সর্বস্তর পক্ষপাতের দোষে দুষ্ট, সেখানে সেনাবাহিনী তার নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করবে। পক্ষপাতদুষ্ট পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা দেখা বা সহায়তা করা তার দায়িত্ব নয়। যদি তাই হয়, তবে তাদের মাঠে থাকা না থাকা সমান বিষয়ে পরিণত হবে, জনপ্রত্যাশাকে চরমভাবে হতাশার দিকে ধাবিত করবে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানোর উদ্দেশ্যই হচ্ছে, অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে কঠোর ভূমিকা রাখা। সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে, নিরাপদ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী অতীতের মতো তার গৌরবোজ্জ্বল ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অতীতে তারা যেভাবে নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা রেখেছে, সেই ঐতিহ্য ধরে রাখবে। চলমান নির্বাচনী সংঘাত-সংঘর্ষ ও সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

 

 



 

Show all comments
  • জাতির বিবেক ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৮ এএম says : 0
    হে আল্লাহ এই জালিম অত্যাচারী শাসক থেকে তুমি আমাদের হেফাজত কর।সকল প্রকার সহিংসতা থেকে রক্ষা কর।তুমিই মহাপরাক্রমাশীল।সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দাও।আমরা তোমার সাহায্য চাই। সবাই বেশি বেশি পড়ুন-- রব্বি নাজ্জিনি মিনাল কওমিজ্জলিমিন। অর্থ-- হে আল্লহ, জালিম শাসক থেকে আমাকে রক্ষা করুন ( সূরা কাসাস/২১)।
    Total Reply(0) Reply
  • Tariqul Islam ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৮ এএম says : 0
    Amdr alakay army camp thake sara din ber e hoy nai. Avabe army saradin camp a bose thakle army namaya luv ki !!!
    Total Reply(0) Reply
  • জীবন যুদ্ধের সাহসী সৈনিক ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৯ এএম says : 0
    সেনাবাহিনী থাকা অবস্থায়, যেহেতু হামলা, মামলা হচ্ছে, সেহেতু সেনাবাহিনীর সম্মানার্থে এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়া উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • Masud Khan ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৯ এএম says : 0
    সময়ের সাথে সাথে সব নিজের লোক দিয়ে পরিপূর্ন করে ফেলেছে। এর চাইতে ভাল কিছু আশা করা এদের কাছে বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
    Total Reply(0) Reply
  • Julekha Khanom ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০০ এএম says : 0
    সেনাবাহিনীর ওপর বিরোধী দল এবং জনগণের একশো ভাগ বিশ্বাস। যারা ২০১৪ সালে তামাশার নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছে, এবং এবারও একই কায়দায় ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া, তারা যে সেনাবাহিনীর ওপর জনগণের বিশ্বাসের সুযোগ নেবে না, তার কী কোনো নিশ্চয়তা আছে? তাছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যরাও মানুষ, তারা ফেরেস্তা নয়। সুতরাং চোখ- কান খোলা রাখা খুবই জরুরী
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon Ahmed ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০০ এএম says : 0
    Jedin Sena mutayen holo awamilig aro besi suro Kore dise ai sov kisu mane holo vote diye na komota diye avar election korve awamilig
    Total Reply(0) Reply
  • Subir Roy ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০১ এএম says : 1
    এখন বলেন যে সেনাবাহিনীও আওয়ামীলীগের???
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Hozaiff ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০১ এএম says : 0
    সেনাবাহিনী দিয়ে আর কি হইবো তারা তো ক্যাম্প থেকে বেরই হয় না আল্লাহ জানে ক্যাম্পের মধ্যে কি আছে
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Harez ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৩ এএম says : 0
    The role that the Bangladesh Army was playing in the 2008 election is not doing it now
    Total Reply(0) Reply
  • Sebratali Montahaak ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৩ এএম says : 0
    সেনাবাহিনী মাঠে নামার পরও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার স্বীকার হচ্ছেন BNP জামাতের প্রার্থী এবং নেতাকর্মীরা, সেনাবাহিনীর কাজ কি? সোমবার দু জন নিহত, এনি আহত,বিএনপির সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী ডা. সানসিলার ওপর হামলা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Anamul ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৩ এএম says : 0
    সেনাবাহিনী নামার পর পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Tanvir Kabir ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৪ এএম says : 0
    সেনাবাহিনীর উপর ভরসা করে লাভ নাই, এরা চাবি দেওয়া পুতুলের মত, চাবি না দিলে ঘুরে না!! নিজেদের ভাগ্য আর পরিস্থিতি নিজেদেরই গড়তে হবে।।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbubul Alam ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৪ এএম says : 0
    সেনাবাহিনীকে নিদৃষ্ট নিয়মের ব্যারিকেডে আটকে রাখা হয়েছে!কাজেই কিছু করার নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Khalid Biplob ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৫ এএম says : 0
    সেনাবাহিনী কি কোন দল বিশেষ এর হয়ে ভোট দিয়ে দেবে? তাদেরকে বিতর্কিত করবেন না প্লিজ
    Total Reply(0) Reply
  • Md Belal Hossain ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৫ এএম says : 0
    কোনো লাভ ই নাই। যারা নিজেদের ঘর সামলাইতে পারে না তারা নাকি আবার শান্তিরক্ষা মিশনে প্রথম!
    Total Reply(0) Reply
  • Kalkini Madaripur ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
    দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সেনাবাহিনীর ভূমিকা তেমন দেখা যাবে বলে মনে হয়না
    Total Reply(0) Reply
  • H M Sayad Karim ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
    পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে,তফশিল ঘোষনার পর থেকে আজ পর্য্যন্ত যত হামলা হয়েছে,সেনাবাহিনী নামার পর একদিনে তারচেয়ে বেশি হামলার শিকার ও রক্তাক্ত হয়েছে ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মিরা!
    Total Reply(1) Reply
    • Palash ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১১:৩২ এএম says : 4
      Asole ke sena bahini namecha, akhono dekhine.

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন