Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তরুণ ভোটারদের অদম্য ভূমিকার প্রত্যাশা

| প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:৪৪ এএম

প্রায় ১০ বছর পর দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অনেক জল্পনা ও আশঙ্কা সত্তে¡ও দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও সকলের প্রত্যাশা অনুসারে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলের প্রচার-প্রচারণায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মূল শর্ত। অদ্যাবধি সুষ্ঠু নির্বাচনের সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দেশের অধিকাংশ স্থানে ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকরা দাঁড়াতেই পারছে না। একদিকে পুলিশি হয়রানি, মামলা, গণগ্রেফতার অন্যদিকে সরকারদলীয় ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়ে প্রতিদিন বিরোধীদলের শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতার ও হতাহত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন একযোগে একপাক্ষিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশাকে সুদূরপরাহত করে তুলেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় শক্ত হাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বদলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে বলে সাফাই গাইছেন। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনের শাসন ও পোশাকের মর্যাদা রক্ষার কথা একাধিকবার স্মরণ করিয়ে দিলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। একজন নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা সাধারণ মানুষের কাছে সাধুবাদ পেলেও সিইসি তার সাথে শুধু দ্বিমতই করছেন না, বরং তার বক্তব্য অসত্য বলে অভিহিত করতেও পিছ পা’ হচ্ছেন না। নির্বাচনী মাঠের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ, অসমতল এবং সন্ত্রাসকবলিত।
মনোনয়নপত্র জমা দিতে নয়াপল্টনে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর পুলিশের গাড়ি তুলে দেয়া, নতুন পুরনো মামলায় প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতার, নির্বাচনী প্রচারণায় যত্রতত্র রক্তাক্ত হামলায় জজর্রিত বিএনপি প্রার্থী ও সমর্থকরা একতরফা আক্রমণ ও জুলুমের শিকার হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে কোথাও কোথাও পাল্টা আক্রমনের শিকার হয়ে সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকের হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি পুরোপুরি একপাক্ষিক। ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ সরকারি দলের ক্যাডারদের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নাই। নির্বাচনের মাঠে এসব ক্যাডাররা বিরোধীদলের কোনো নির্বাচনী কার্যক্রমই সহ্য করতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ ও আইনানুগ ভূমিকা পালনের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে দৃশ্যমান। দেশের মানুষ এবং বিশ্ববাসী যখন বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ফলাফল দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন দেশের মানুষের আশ্রয়স্থল পুলিশ ভিনদেশি বাহিনীর মতো ন্যাক্কারজনক ভূমিকা পালন করছে। মানুষ আশা করেছিল, সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর নির্বাচনের পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে। বিরোধীদলের প্রার্থী ও সমর্থকরা নিরাপদে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পাবে। গত ৪ দিনেও জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সেনাবাহিনী মাঠে নামার পরও বিরোধীদলের প্রার্থী ও সমর্থকরা মার খাচ্ছে। গতকাল দেশের উত্তরাঞ্চলে ধানের শীষের একজন প্রার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এহেন পরিস্থিতি কিছুতেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের গ্যারান্টি দিতে পারে না। এখনো সময় আছে দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের প্রত্যাশা অনুসারে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জনগণকে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া এবং ভোটে জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও সরকারি দলকে আইনানুগ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যতই প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হোক না কেন, অতীতে দেশের প্রায় সব জাতীয় নির্বাচনে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ গড়ে উঠতে দেখা গেছে। রাজনৈতিক সংলাপের মধ্য দিয়ে সমঝোতা না হওয়া সত্তে¡ও দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সরকার, সরকারি দল এবং নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল ভূমিকা অনেক বেশি আকাক্সিক্ষত ছিল। কিন্তু বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। যেখানে শেষ পর্যন্ত সব দলকে নির্বাচনে ধরে রাখাই সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সেখানে তাদের আচরণে দেখা যাচ্ছে, তারা যেন নির্বাচন থেকে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বিতাড়িত করতে যা কিছু করণীয় তার সবই করছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এই মন্তব্য করেছেন। এতকিছুর পরও দেশের মানুষ ভোটের জন্য অপেক্ষমান। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার রয়েছে যারা গত ১০ বছরে কোনো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক জীবনে প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছে। তাছাড়া বয়সের বিচারে দেশের প্রায় সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের অর্ধেকেরই বয়েস ১৮ থেকে ৪০ বছর। এই বিপুল সংখ্যক ভোটার এবং দেশের ১৬ কোটি মানুষ একটি গণতান্ত্রিক, উন্নয়নমুখী ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগণের সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরিবেশ এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল নয়। পুলিশের ধরপাকড় ও সরকারি দলের প্রতি পক্ষপাত জনমনে এক ধরনের ভীতি ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে। এরপরও কোটি মানুষ ভোট দিতে যার যার এলাকায় চলে যেতে শুরু করেছে। একদিকে কোটি কোটি তরুণ সচেতন ভোটার, অন্যদিকে এখনো সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের পুরোপুরি আস্থা রয়েছে। এই দুই অদম্য শক্তির কাছে ভয়ভীতি, ভোট কারচুপি ও সন্ত্রাসের যে কোনো নীলনকশা পরাস্ত হতে বাধ্য। শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জয় হবে, এটাই মানুষের একান্ত প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন