Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাড়ছে অপরাধ

চট্টগ্রাম অঞ্চলে অপ্রতিরোধ্য মাদকের বিস্তার

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

চট্টগ্রাম অঞ্চলে গেল বছর গড়ে প্রতিদিন ৪৭টি মাদকের মামলা হয়েছে। ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ হরেক মাদক উদ্ধারের ঘটনায় এসব মামলা হয়। বন্দরনগরীতে দিনে মাদক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে ১২টি। আর চট্টগ্রাম জেলাসহ রেঞ্জের ১১ জেলায় দিনে এমন ঘটনা ৩৫টি। গেল বছরের মধ্য মে থেকে শুরু হওয়া মাদক বিরোধী অভিযানের মধ্যেও চলেছে মাদকের কারবার।
গত বছর চট্টগ্রাম নগরীতে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় চার হাজার ৪৪০টি মামলা রের্কড হয়। যা আগের বছরের তুলনায় ১৮০টি বেশি। আর চট্টগ্রাম রেঞ্জে মামলা হয়েছে ১২ হাজার ৭১৬টি। যা আগের বছরের তুলনায় ১৬৬টি বেশি।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, টানা অভিযানেও অপ্রতিরোধ্য মাদকের বিস্তার। ঠেকানো যাচ্ছে না ভয়াবহতা। মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা নানা কৌশলে তাদের কর্মকাÐ অব্যাহত রেখেছে। মাদকের কারণেই বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। আবার মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে খুনসহ অপরাধ কর্মকাÐ বাড়ছে। গেল বছর এই অঞ্চলে খুন, অপহরণ এবং ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধের ঘটনাও বেড়েছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাদকের ভয়াল আগ্রাসন চলছে দীর্ঘদিন থেকে। মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবা। বাংলাদেশকে টার্গেট করে মিয়ানমার সীমান্তে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইয়াবার কারখানা। এসব কারখানায় উৎপাদিত চালান সাগর, পাহাড় ও সড়ক পথে চট্টগ্রাম হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। র‌্যাব-পুলিশ, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মধ্যেও দেশে ডুকে পড়ছে ইয়াবার চালান।
সহজে লুকিয়ে বহনযোগ্য হওয়ায় সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কোন চালান আটক করা যায় না। ফলে গোপনেই এই মাদকের চালান চলে যাচ্ছে গন্তব্যে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর অভিযান শুরু হলে কৌশল বদলে ফেলে মাদকের কারবারিরা। ফলে তাদের নেটওয়ার্ক ভাঙ্গাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া এই মাদক সিন্ডিকেটে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি এমনকি পুলিশসহ প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তা জড়িয়ে যাওয়ায় তাদের নেটওয়ার্ক অক্ষত থেকে যাচ্ছে।
ভারত থেকে আসছে ফেনসিডিল, গাঁজাসহ হরেক মাদক। সরকারি তরফে দাবি করা হয়- ভারত বাংলাদেশের অনুরোধে সীমান্তে গড়ে উঠা ফেনসিডিলের অনেক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। আর এই কারণে ফেনসিডিল আসা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বাস্তবতা হলো সীমান্ত পথে এখনও ফেনসিডিল আসছে। র‌্যাব-পুলিশের হাতে মাদকের যে চালান ধরা পড়েছে তার শীর্ষে ইয়াবা হলেও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতীয় ফেনসিডিল ও গাঁজা। বিদেশী হরেক মদের পাশাপাশি পাহাড়ে তৈরী দেশি মদও উদ্ধার হচ্ছে।
মাদক বিরোধী অভিযানে নগরীর বেশ কয়েকটি মাদকের হাট উচ্ছেদ হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধ আর ক্রসফায়ারে এই অঞ্চলে অন্তত ২৫জন মাদক কারবারি প্রাণ হারিয়েছে। তবে এখনও মাদকের বিস্তার চলছে। পুলিশ বলছে মাদকাসক্তির কারণে অপরাধ বাড়ছে। বিশেষ করে ছিনতাই, দস্যুতা, খুনসহ ছিনতাই এমন অপরাধে জড়িতদের বেশিরভাগই আসক্ত। তারা নেশার টাকা জোগাড় করতে এমন অপরাধে মেনে পড়ছে। আবার মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে অপরাধীরা। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে এলাকায় অপরাধী গ্রæপ তৈরী হচ্ছে। ফলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা।
এদিকে গেল বছর এই অঞ্চলে খুন, ধর্ষণ অপরহরণ ও ডাকাতি দস্যুতার ঘটনা বেড়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৭০জন খুন হয়েছেন। আগের বছরও খুনের ঘটনা ঘটে ৭০টি। অন্যদিকে রেঞ্জে গেল বছর ৬৭৮টি খুনের ঘটনা রের্কড হয়। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৬২৬। নগরীতে গেল বছর ১০টি অপহরণের ঘটনা ঘটে। আগের বছর অপহৃত হয় চার জন। চট্টগ্রাম রেঞ্জে গেল বছর অপহৃত হয়েছেন ৯০জন। তার আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৭৭।
ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। মহানগরীতে গেল বছর এমন ঘটনা ঘটে ৩৮১টি আর রেঞ্জে ১৮২৫টি। আগের বছর নগরীতে এমন ঘটনা ছিল ৩৫০ এবং রেঞ্জে ১৮৮৯। গেল বছর নগরীতে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয় ৩০৭টি আর রেঞ্জে ৬৩৬টি। মহানগরীর ১৬টি থানায় গেল বছর মোট মামলা হয় সাত হাজার ২০১টি, রেঞ্জে ২৮ হাজার ২৬টি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ