Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আখেরাত সম্পর্কে মূর্খ, অজ্ঞোচিত সন্দেহ-সংশয় ও শয়তানী ওয়াসওয়াসা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

একদিকে কুরআন আখেরাতের অপরিহার্যতা ও অবশ্যসম্ভাবিতার ওপর আলোকপাত করেছে এবং তার ওপর ঈমান আনার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। অপর দিকে, সেসব অজ্ঞ ও মূর্খোচিত সন্দেহ ও সংশয়কে অপসারণ করেছে, যা স্বল্প মেধার সাধারণ মানুষের মাঝে আখেরাত সম্পর্কে সৃষ্টি হয়ে থাকে, অথবা ঈমান ও সঠিক পথ থেকে মানুষকে বিরত রাখার জন্য শয়তান তাদের মাঝে বিস্তার করে এবং এগুলোর প্রচারণা চালায়। কুরআন মাজিদ জায়গায় জায়গায় অস্বীকারকারীদের এসব সন্দেহ-সংশয় উদ্ধৃতও করেছে এবং অতঃপর নিজের বিশেষ আশ্বস্তকারী ভঙ্গিতে সেগুলোর এমনসব উত্তর প্রদান করেছে এবং আখেরাতকে বুঝানোর লক্ষ্যে এমনসব প্রমাণ ও উদাহরণ পেশ করেছে, যাতে করে মন সম্পূর্ণভাবে আশ্বস্ত হয়ে যায়। কোনো বুদ্ধিমানের জন্যই তখন আর অস্বীকার কিংবা দুর্বোধ্যতার অবকাশ থাকে না।
আখেরাত সম্পর্কে সর্বাধিক বিখ্যাত ও আদি সংশয় হলো সেই দুর্বোধ্যতা (অর্থাৎ, বুঝে উঠতে না পারা) এবং কোনো মৃতকে এ জগতে জীবিত হতে না দেখার সংশয়। এ বিষয়টিকে কুরআন অবতরণকালে আরবের আখেরাত অস্বীকারকারীরাও বারবার পুনরাবৃত্তি করত। তা ছাড়া তাদের পূর্বের ও পরের অস্বীকারকারীরাও বেশির ভাগ ওই বিষয়টিকেই তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছে। কুরআন তার অবতরণকালীন অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে বলেছে, ‘বরং তারা হুবুহু তেমনি এবং সে কথাই বলেছে, যা তাদের পূর্ববর্তী অস্বীকারকারীরা বলেছিল। তারা বলত, যখন আমরা মরে যাব এবং (মাটিতে সমাহিত হওয়ার পর আমরা) মাটি ও হাড়ের স্ত‚পে পরিণত হয়ে যাবো, তার পরেও কি আমাদেরকে জীবিত করা হবে? (অর্থাৎ, বিষয়টি কোনোমতেই বুঝে আসার মতো নয়, আর নাই বা পৃথিবীতে কখনো এমনটি ঘটেছে)।’ (সূরা মু’মিনুন : আয়াত ৮১-৮২)।
অন্য আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আর মুনকির বা অস্বীকারকারীরা বলল, আমরা যখন মরে মাটি হয়ে যাবো এবং আমাদের বাপ-দাদারা (যারা পূর্বে মরে মাটি হয়ে গেছে) আমাদের সবাইকে কি তাহলে পুনরুজ্জীবিত করা হবে?’ (সূরা নামল : আয়াত ৬৭)। অন্যত্র তাদেরই উদ্ধৃত করা হয়েছে, ‘আমরা যখন মরে যাব এবং মাটিতে পরিণত হয়ে যাবো (তারপর কি আমাদেরকে পুনরায় জীবন দেয়া হবে?) এ প্রত্যাবর্তন (অর্থাৎ, পুনর্জীবন লাভ করা) একান্তই অসম্ভব।’ (সূরা ক্বাফ : আয়াত ৩)। বস্তুত যারা আখেরাতকে অস্বীকার করে তাদের কাছে এই অস্বীকৃতির কোনো যুক্তি নেই। অর্থাৎ, কোনো যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে তারা এ বিষয়টি প্রমাণ করতে পারে না যে, আখেরাতের যে সংবাদ আল্লাহর রাসূলগণ এবং তার কিতাব দিয়েছে তা অসম্ভব। তারা যা বলে এবং বলতে পারে তাহলো কেবল এটুকুই যে, ‘মরা এবং মাটি হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় জীবিত করা একান্ত দুষ্কর এবং আমাদের বোধগম্য নয়। উপরন্তু আমরা কখনও এমনটি হতে দেখিনি।’ কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহকে এবং তার গুণাবলি বিশেষ করে তার ব্যাপক ক্ষমতা সম্পর্কে কিছুটা জানতে পেরেছে, তার অস্তিজগৎ সম্পর্কে সামান্য চিন্তা-ভাবনা করেছে, তার কাছে এ ধারণা একান্তই মূর্খোচিত ও অজ্ঞতা-প্রসূত।
কুরআন মাজিদ নিজেও এসব মুনকিরকে বুঝানোর জন্য এই সহজ পন্থা অবলম্বন করেছে। তাদেরকে বাতলে দিয়েছে, তোমরা মরার পর জীবিত করার বিষয়টিকে খুব বড় এবং অতি কঠিন বলে মনে করো এবং শুধুমাত্র সে কারণেই ব্যাপারটিকে অস্বীকার করো। নিঃসন্দেহে এটি অতি বিরাট বিষয়। কিন্তু যে আলীম, হাকিম, কাদির ও খাবির (মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়, ক্ষমতাধর ও সর্বজ্ঞ) আল্লাহ সমগ্র এ জগৎ সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি একে চালাচ্ছেন, তার মহিমা ও সীমাহীন ক্ষমতার কাছে এটি না কঠিন কিছু, না বিরাট বিষয়। অতঃপর এই পার্থিব জীবনে মৃত্যুপরবর্তী জীবনের যেসব বিশেষ দৃষ্টান্ত ও প্রমাণ রয়েছে, কুরআন মাজিদ সেগুলোর প্রতিও সেসব মুনকিরকে পথনির্দেশনা দান করে। বলে, তোমরা চিন্তা কর, এ জগতে তোমরা যে জন্মগ্রহণ করেছ, সে জন্ম সম্পর্কেই চিন্তা করে দেখো। তা ছাড়া মাঠের শুকনো প্রাণহীন ভ‚মির ওপর রহমতের পানি বর্ষণ করে আল্লাহ তায়ালা যেভাবে তাতে প্রাণ সঞ্চার করেন এবং তার ফলে ফাঁকা মাঠ যেভাবে শ্যামলিমায় পরিণত হয়ে যায়, সে সম্পর্কে চিন্তা করলেই মৃত্যুর পর জীবন লাভের বিষয়টি অীত সহজে উপলব্ধি করতে পারবে। তারপর আর এ বিষয়ে তোমাদের সংশয় ও বিস্ময়ের কিছুই থাকবে না।



 

Show all comments
  • আমিন মুন্সি ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 1
    ইসলামি আকায়েদগুলোর মধ্যে আখেরাতের প্রতি ঈমান আনা একটা বৈপ্লবিক বিশ্বাস, যা দুনিয়ার রূপই পাল্টে দিয়েছে। এ বিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়েই ওহির অনুসারীগণ প্রথমে নৈতিকতা ও কর্মে এবং পরবর্তীতে ব্যক্তিগত, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পর্যন্ত দুনিয়ার অন্যান্য সকল জাতির মোকাবেলায় একটি অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আসনে উত্তীর্ণ হতে সমর্থ হয়েছে। পরন্তু তওহিদ ও রেসালতের ন্যায় এ আকিদাও সমস্ত নবি-রসুলের শিক্ষা ও সর্বপ্রকার ধর্মবিশ্বাসের মধ্যেই সর্বসম্মত বিশ্বাস রূপে চলে আসছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Zulfiqar Ahmed ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 1
    যেসব লোক জীবন ও এর ভোগ-বিলাসকেই জীবনের চরম লক্ষ্য বলে গণ্য করে, জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে যে তিক্ত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, সে তিক্ততাকেই সর্বাপেক্ষা কষ্ট বলে মনে করে, আখেরাতের জীবন, সেখানকার হিসাব-নিকাশ, শাস্তি ও পুরস্কার প্রভৃতি সম্পর্কে যাদের এতটুকুও আস্থা নেই, তারা যখন সত্য-মিথ্যা কিংবা হালাল-হারামের মধ্যে পার্থক্য করাকে তাদের জীবনের সহজ-স্বাচ্ছন্দ্যের পথে বাধারূপে দেখতে পায়, তখন সামান্য একটু সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বিনিময়ে সকল মূল্যবোধকে বিসর্জন দিতে এতটুকুও কুণ্ঠাবোধ করে না, এমতাবস্থায় এ সকল লোককে যেকোনো দুষ্কর্ম থেকে বিরত রাখার মতো আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
    Total Reply(0) Reply
  • রিপন ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 1
    প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মেনে চলাই হলো পরকালে জান্নাত লাভ এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভের মাধ্যম।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 1
    কুরআন বলে, মানুষের জীবন যদি এ জগতেই শেষ হয়ে যায় এবং এর পরে অন্য কোনো জীবন না থাকে, তাহলে গোটা বিশ্বের সমস্ত কর্মশালাই তো উদ্দেশ্যবিহীন হৈহল্লা আর অর্থহীন তামাশা এবং সৃষ্টিকর্তার এক নিরর্থক কর্মপ্রয়াসে পরিণত হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • কেরামত আলী ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 1
    যেন সমগ্র এ জগৎ-সংসারের আসল ও মূখ্য উদ্দেশ্য শুধুই মানুষ। পৃথিবী ও আকাশের যাবতীয় কর্মশালাকে যেন শুধুমাত্র মানুষের জন্য অস্তিত্ব দান করা হয়েছে। আর এটি একটি বাস্তব সত্য যে, কয়েকদিনের পার্থিব এ মানবজীবন স্বপ্নের চাইতে বেশি কিছু গুরুত্ববহন করে না। তদুপরি শতকরা দু’একজনও এমন নেই যারা নিজেদের এ জবীন নিয়ে তুষ্ট ও হৃষ্ট, বরং অধমের ধারণা, আখেরাতের সে জীবন যদি না থাকত, যার সংবাদ নবী-রাসূলগণ দিয়ে গেছেন এবং কুরআন মাজিদ যার সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছে, তা হলে এ জগতে মানুষের জন্ম অপেক্ষা হাজারগুণ উত্তম ছিল আদতেই জন্ম না হওয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • সরল পথ ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 1
    মোট কথা, অসহায় মানুষের ক্ষণস্থায়ী ও নিরানন্দ জীবনের জন্য ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের গোটা এ ব্যবস্থাপনার সৃষ্টি, এমন কি স্বয়ং মানুষের সৃষ্টিও নিঃসন্দেহে একটি আপত্তিকর প্রহসন এবং উদ্দেশ্যহীন তামাশায় পরিণত হয়ে যায়; যদি আখেরাতের জীবন না থাকে, যার সংবাদ নবী-রাসূলগণ এবং আল্লাহর কিতাবসমূহ আমাদেরকে দিয়েছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ হান্নান ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ৭:২৫ এএম says : 1
    The people who do not believe in resurrection and Judgment Day are those do not behave rightly with their neighbours and fearless in making unlawful gains in building mountains of wealth. The truth is that none will be able to escape the Judgement Day (the day of Qiamah). Shaitan has occupied some for not to believe in Allah who will judge everyone for their worldly deeds on judgement day. May Allah SWT help us understand the Holy Quran the divine book that revealed to prophet Mohammad (SAW) as a book of guidance for mankind to see the correct way of living in this world.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন