Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নানা অনিয়মে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

রামগতি (লক্ষীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

লক্ষীপুরের মেঘনার ভাঙনকবলিত ও জেলার উপকূলীয় অঞ্চল রামগতি উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা এখন অচলের পথে। সঙ্কট আর দায়িত্বরতদের নানামুখী অবহেলা, অযত্মে এখানকার স্বাস্থ্যসেবা করুণ বলে জানায় ভুক্তভোগীরা। এখানে একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলাটি। উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার একমাত্র প্রতিষ্ঠান রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার প্রাণকেন্দ্র চর আলেকজান্ডারে অবস্থিত ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্বাস্থ্যসেবা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কর্মরত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল আলীর দুর্বল নজরদারির অভাবে হাসপালের এ করুণ দশা।
অভিযোগ আছে, ২০ শয্যা হাসপাতালের অবকাঠামো ও জনবল দিয়েই প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের সেবা চলছে। উপরে ফিটফাট দেখা গেলেও নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে প্রতিদিন সেবার নামে চলছে মহাবাণিজ্যের উৎসব। রামগতি উপজেলাটি নদীভাঙা, জেলে, দরিদ্র ও শিক্ষার হার কম হওয়ায় এ সুযোগ হাসপাতালের লোকজন কাজে লাগিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে পদে পদে। এদিকে ভুক্তভোগীরা জানান, ডাক্তার ও জনবল সঙ্কটে ক্রমেই ভেঙে পড়তে চলেছে স্বাস্থ্য কমপ্লে­ক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম। রামগতি উপজেলার আটটি ইউনিয়নে আটজন মেডিক্যাল অফিসারসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে­ক্সে ১৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে মাত্র তিনজন মেডিক্যাল অফিসার। হাসপাতালের শুরু থেকেই চালু হয়নি প্যাথলজি, এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম সেবা। একজন ডেন্টাল সার্জন থাকলেও তার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই কেবল একবার এসেই হাজিরা খাতায় বকেয়া স্বাক্ষরসহ হালখাতার মতো বেতন তুলে নেন। অবশ্য এ বিষয়ে ডেন্টাল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, অসুস্থতার অজুহাতে তিনি ছুটিতে রয়েছেন। তবে প্রতি মাসেই কী তার এ অবস্থা এমন প্রশ্নের জবাবে তেমন কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে তার দাবি, রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেন্টাল সার্জন পদে তাকে দায়িত্ব দিলেও নেই কোনো বসার ব্যবস্থা, নেই ওটি রুম ও ডেন্টাল টেবিলসহ বিভিন্ন উপকরণ। ফলে কাজ নেই বলেই সপ্তাহে দুইদিন হালখাতায় মতো বকেয়া স্বাক্ষরসহ মাস শেষেই টাকা নেন বলে ক্ষুব্ধ রোগীরা। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২২ জন নার্সের বিপরীতে চরজনের নামে সরকারি কোয়ার্টার বরাদ্দ। অথচ ২২ জনকে সরকারি কোয়ার্টার বরাদ্দ দিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত। এ ছাড়া ফিল্ড অফিসার আবদুর রহমানকে অফিস সহকারীর দায়িত্ব দিয়ে তার মাধ্যমে হাসপাতালের বিভিন্ন সেক্টর থেকে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অর্থাৎ জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, সার্জারি অ্যানেসথেসিয়া, গাইনি পদ এখন পর্যন্ত শূন্য। দীর্ঘ দিন ধরে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, এক্স-রে টেকনোলজিস্ট, অফিস সহকারী, হিসাবরক্ষক, ওয়ার্ড বয়, এমএলএসএস, পিয়ন ও সুইপারের খালি পদের বিপরীতে নেই কোনো নিয়োগ।ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জনবল যাই আছে, নানা ধরনের বখরা, ভিজিটসহ যাবতীয় সুবিধা না দিলে মেলে না পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা। শুধু তাই নয়, তাদের উচ্ছায় কাজ না করলে দায়িত্বরতদের খামখেয়ালিপনা, অযত্ম-অবহেলাসহ নানা হয়রানিতে রোগীকে নানা বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলী জানান, আমাদের জনবল অভাবের কারণে আমরা যথাযথভাবে সেবা দিতে পারছি না। বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি আমার কাছে অভিযোগ করেন, তা হলে আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্যসেবা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ