Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামে রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার গুরুত্ব

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখা ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখা মানুষের বুনিয়াদী আখলাকের অন্তর্ভূক্ত। এ পৃথিবীতে আমরা কোনো বিনিময়ের প্রত্যাশা ও ধারণা ছাড়া যে সকল নেক কাজ করি, সেগুলোর প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যায় যে, মানুষের সকলের মাঝেই আত্মীয়তার বাঁধন ও রক্তের সম্পর্কের একটি গভীর যোগসূত্র অটুট রয়েছে। যে বা যার অন্তরে এ অনুপ্রেরণা ও অনুরাগের লেশমাত্র অবশিষ্ট নেই, তার তরফ হতে অন্যান্য লোকেরা সে নির্দয়তা, অত্যাচার, কঠোরতা, দুশমনী ও শত্রুতা যা কিছুই করুক না কেন, তা বড় কথা নয়, বরং সে এর চেয়েও বড় কিছু করতে মোটেও কুণ্ঠা বোধ করবে না। এ জন্য ইসলামী জীবন ও জগতের ক্ষেত্রে রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার একটি বিরাট ভূমিকা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মানব সম্প্রদায়ের মাঝে উত্তম চরিত্রের সবচেয়ে বড় বিকাশ লক্ষ করা যায় পয়গম্বরগণের পবিত্র সত্তার মাঝে। একই সাথে পয়গাম্বরগণের মাঝে সবচেয়ে উন্নত, সুউচ্চ ও সম্মানীত সত্তার অধিকারী হলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)। মহান আল্লাহপাক তাকে ক্ষমা, দয়া ও সহৃদয়তার যাবতীয় গুণাবলি দ্বারা ঐশ্চর্যমন্ডিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে, যিনি খুবই বেদনাহত হন যদি তোমাদের ওপর বিপদ আপদ পতিত হয় এবং তিনি মুমিন মুসলমানদের ওপর বন্ধুত্ব ও দয়ার আবির্ভাব ঘটুক, তা জানতে ভালোবাসেন। তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু। (সূরা তাওবাহ : রুকু ১৬)।
প্রাচীণ পয়গগাম্বরদের পর তাদের উম্মতদের স্থান। তাদের মাঝে আল্লাহপাক হজরত ঈসা (আ.)-এর উম্মতদের একটি বিশেষ গুণের কথা তুলে ধরেছেন। সে গুণটি হলো আত্মীতা ও রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখা, অক্ষুন্ন রাখা। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘এবং সে সকল লোক তাদের অনুগত হয়ে গেল, আমি তাদের অন্তরে দয়া এবং অনুকম্পাকে ঢেলে দিলাম।’ (সূরা হাদিদ : রুকু ৪)। তবে, এ গুণ গুলোর মাঝে উম্মতে মোহাম্মাদিয়া ও তাদের সাথে অংশীদার রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, যে লোক মোহাম্মাদ (সা.)-এর সাথে রয়েছে তারা কাফিরদের ওপর খুবই কঠোর ও শক্তিমান এবং তারা পরস্পর একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্রচিত্ত। (সূরা ফাতহ : রুকু ৪)।
আপস পরস্পর সম্পর্কিত লোকজনদের মাঝে একজনের সাথে অপর জনের যে নেক সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাকে সেলায়ে রেহেম বা রক্তের সম্পর্কের প্রতি যত্মবান বলা হয়। কেননা রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়তার সকল সম্পর্ক ও যোগসূত্র মাতৃ উদরে দয়ার দ্বারাই পয়দা হয়। এমনিভাবে রাহীম, রাহমান নাম দ্বয়ের উৎপত্তি ও ঘটেছে রহম নামক মূল ধাতু হতেই। এর দ্বারা এই পরিণামফল বেরিয়ে আসে যে, রক্তের সম্পর্কের অনুরাগ মূলত: রহমত সম্পন্ন আল্লাহপাকের রহমতেরই প্রতিবিম্ব। এর দ্বারাই দুনিয়া জোড়া সেলায়ে রেহমীর আবির্ভাব পরিলক্ষিত হয় এবং পৃথিবীব্যাপী আত্মীতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রক্ত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহপাকের রাহমান গুণ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। (সহিহ বুখারি : কিতাবুল আদব)। মোট কথা, আত্মীয়দের ও পরিজনদের প্রতি দয়ার্দ্রচিত্ততার অনুরাগ ও অনুপ্রেরণার মূল উৎস স্বয়ং ‘রাহমান’ নামের প্রকৃত সত্তা আল্লাহ। দুনিয়া জোড়া সকল রহমদেলীর অনুপ্রেরণা এরই শাখা প্রশাখা মাত্র। সন্তানদের প্রতি ম্নেহ মায়ার ও ভালোবাসার উদ্রেক এ অনুপ্রেরণার সংস্পর্শ হতেই পয়দা হয়। হজরত উসামা বিন যায়েদ (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা. এক রানের ওপর আমাকে এবং অপর রানের ওপর ইমাম হাম্মাদ (রা.) কে বসাতেন। তারপর উভয় রানকে একত্রিত করে বলতেন, হে আল্লাহ, তুমি এ দু’জনের প্রতি রহম করো, কেননা আমি এ দু’জনের ওপর রহম করি। (সহিহ বুখারি : কিতাবুল আদব)।



 

Show all comments
  • সরল পথ ৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
    আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম এক কারণ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীতার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি আল্লাহতায়ালা অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদের বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন করেন।’ -সূরা মুহাম্মদ : ২২-২৩
    Total Reply(0) Reply
  • Zulfiqar Ahmed ৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    আজ বড়ই পরিতাপের বিষয়, আমাদের সমাজের অনেক মুসলমানই পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য ও আত্মীতা-স্বজনের অধিকার সম্পর্কে একেবারেই অসচেতন। তারা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মিলনের সেতুবন্ধকে ছিন্ন করে চলছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, আমার আত্মীয়রাই তো সুসম্পর্ক বজায় রাখছেন না। আমি একাই এর জন্য দায়ী নই। কিন্তু এ বক্তব্য তাদের কোনো উপকারে আসবে না। কারণ যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখবে, শুধু তার সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে- এই যদি নীতি হয় তাহলে তা আল্লাহর জন্য হলো না, বরং তা হলো বদলা। হজরত যুবাইর বিন মুতইম (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত্মীতার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ -বুখারি ও মুসলিম
    Total Reply(0) Reply
  • কেরামত আলী ৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
    ‘তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও, তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরাই যাদেরকে আল্লাহ লানত করেন, তাদেরকে বধির করেন এবং তাদের দৃষ্টিসমূহকে অন্ধ করেন।’[সূরা মুহাম্মদ : ২২-২৩]
    Total Reply(0) Reply
  • সোহাগ ৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
    আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার দ্বারা মানুষের হায়াত লম্বা হয় এবং ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়। এটি কিন্তু যার তার কথা নয়; মহা সত্যবাদী, চরম শত্রু কাফেরদের পক্ষ থেকে আল-আমীন বা বিশ্বস্ত উপাধী লাভকারী আল্লাহর নবীর ওয়াদা, যার সম্পর্কে কুরআনে সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে এভাবে,‘তিনি আর মনগড়া কথা বলেন না। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়।’[সূরা আন-নাজম : ৩-৪]
    Total Reply(0) Reply
  • তানভীর আহমাদ ৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাও বলে গেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার কৃতিত্ব তারই প্রাপ্য যে অন্য পক্ষ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও নিজের পক্ষ থেকে তা জোড়া লাগায়। পক্ষান্তরে যার সাথে সম্পর্ক বহাল রয়েছে, তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করলে ব্যাস তা হবে সর্বোচ্চ ভালো সম্পর্কের প্রতিদানে ভালো সম্পর্ক। এটি যদিও আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার মধ্যেই পড়ে কিন্তু যে ব্যক্তি সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে এমন আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক জুড়বে তার সওয়াব অনেক বেশি এবং তার প্রতিদান অনেক বড়।
    Total Reply(0) Reply
  • বেলাল আহমেদ ৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম says : 0
    হে আল্লাহর বান্দাগণ, আল্লাহকে ভয় করুন এবং আত্মীয়তা-সম্পর্ক ঠিক রাখুন। আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করুন তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা, তাদেরকে উপহার দেয়া, তাদের পেছনে অর্থ ব্যয় করার মাধ্যমে। তাদের সাথে সম্পর্ক রাখুন ভালোবাসা, আন্তরিকতা, নম্র কথা, হাসিমুখ, সম্মান, শ্রদ্ধা এবং সমাজে প্রচলিত সব ধরনের আত্মীয়তা রক্ষার উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে। কামিয়াব হোন এর দ্বারা দুনিয়াতে ও আখিরাতে। আর অবশ্যই আপনারা এ সম্পর্ক নষ্ট করবেন না। কারণ তা দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগতের ক্ষতি ও বিপদ ডেকে আনে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তাওফিক দিন। আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • Munmun ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১০:২৬ পিএম says : 0
    আমার ভাইয়াও আমার সাথে কথা বলেন না।আমি কতবার তার কাছে ক্ষমা চেয়েছি কোনো কারনে তিনি আমার উপর রাগ কিনা।কিন্তু সে আমাকে বোন বলে ডাকতে ঘৃণা করে।আমি কালো বলে সে কারো কাছে আমাকে তার বোন বলে পরিচয় দেয় না।আজ ২ বছর হলো সে আমার সাথে কথা বলে না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন