Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আবাহনীর মধুর প্রতিশোধ

প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাহেদ খোকন : ক্লাব কাপ হকি টুর্নামেন্টে মধুর প্রতিশোধ নিলো ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। তারা মার্সেল ক্লাব কাপের শিরোপা জিতে ট্রফি দিয়েই মৌসুম শুরু করলো। সঙ্গে ঊষা ক্রীড়া চক্রকে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় করতে না পারার কস্ট দিলো। গতকাল বিকালে মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের ফাইনালে আবাহনী ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ঊষাকে। বিজয়ীদের পক্ষে চার পাকিস্তানী খেলোয়াড়ই পাঁচটি গোল করেন। এর মধ্যে মো: তসিফ আরশাদ দু’টি এবং মো: ইরফান, শাকিল আব্বাস ও শাফকাত রসুল একটি করে গোল করেন। ঊষার পক্ষে সান্তনা সুচক গোলটি করেন মালয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড ফাইজাল বিন শারি।
ঘরোয়া হকিতে আবাহনী অনেক শিরোপাই জিতেছে। তবে গতকালের শিরোপা জয়টা যেন অন্যরকম আনন্দ দিয়েছে তাদের। কারণ ক্লাব কাপ হকি টুর্নামেন্টের আগের দু’আসরে আবাহনী এই ঊষার কাছে হেরেই রানার্স আপ হয়েছে। এবার সেই ঊষাকে হারিয়েই শিরোপা পুনরুদ্ধার করলো আকাশী-হলুদরা। এ যেন মধুর প্রতিশোধ নিল আবাহনী। নিজেদের আট বছরের শিরোপা খরা ঘোচানোর চেয়ে ঊষাকে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় থেকে বঞ্চিত করার আনন্দই যেন ছুঁয়ে গেছে আবাহনী শিবিরকে। যে কারণে উদযাপনটা একটু বেশিই চোখে পড়লো। ২০০৮ সালে ক্লাব কাপে সর্বশেষ শিরোপা জেতা আবাহনীর কোচ ছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তারকা খেলোয়াড় জুম্মন লুসাই। গেল দেড় বছর আগে তিনি ইহলোক ত্যাগ করে পরপারে চলে গেছেন। তাই এ বছরের শিরোপাটি সেই জুম্মন লুসাইকেই উৎসর্গ করলো আবাহনী। ম্যাচ শেষে এমনটাই জানালে আবাহনীর কোচিং ডিরেক্টর মাহবুব হারুণ।
মার্সেল ক্লাব কাপের ফাইনালে মুলত বিদেশী ঝলকেই জ্বলে ওঠে আবাহনী। চার পাকিস্তানীর নৈপূন্যে তছনছ হয়ে যায় ঊষা। টিম ওয়ার্ক, পাকিস্তানীদের ব্যক্তিগত নৈপূণ্য এবং ম্যাচ জোতার তীব্র আক্ক্ষাা- এই তিনটিকে পুঁজি করেই উষার মতো বড় দলকে বিধ্বস্ত করেছে আবাহনী।
ম্যাচে বিধ্বস্ত হলেও শুরুতে ঊষার খেলা দেখে বুঝার উপাই ছিল না শেষ পর্যন্ত তারা অসহায় আতœসমর্পন করবে। ম্যাচের মাত্র আট মিনিটেই এগিয়ে যায় ঊষা। পুরোপুরি মালয়েশিয়ান কম্বিনেশনে গোল পায় তারা। এসময় মাঝমাঠ থেকে ইসমাইল আবুর এরিয়াল হিটে বক্সের ডান প্রান্ত থেকে ফ্লিক করে ঊষাকে এগিয়ে দেন আরেক মালয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড ফাইজাল বিন শারি (১-০)। এরপরেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ম্যাচের ১৫ মিনিটে পিসি থেকে গোল করে ম্যাচে সমতা আনেন আবাহনীর পাকিস্তানী ফরোয়ার্ড তৌফিক আরশাদ (১-১)। সমতায় ফেরার পরই যেন বদলে যায় আকাশী-হলুদরা। তারা পেনাল্টি কর্ণারে (পিসি) বৈচিত্র আনে। আর এতেই বিভ্রান্ত হয় ঊষা। কারণ বিপ্লব ডামি দেন। দেখান যে বল তিনিই স্টপ করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। আর এতেই ঊষা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে ঊষা। ম্যাচের ২৭ মিনিটে ২৫ গজ রেখার একটু সামনে থেকে রুম্মানের নিখুত থ্রু পাকিস্তানী ফরোয়ার্ড মো. ইরফান বক্সের ঠিক মাঝামাঝি থেকে স্টিকের জাদুতে দু’জন মার্কারকে পেছনে ফেলে গোল করেন (২-১)। গোল শোধ তো দূরের কথা, আবাহনীকে আটকেই পারেনি ঊষা। আবাহনীর একের পর এক আক্রমণে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়ে ঊষার রক্ষণভাগ। ফলে গোলের পর গোল হজম করতে হয় তাদের। ম্যাচের ৩৯ মিনিটে একটি কাউন্টার অ্যাটাক থেকে স্কোর লাইন ৩-১ করেন শাকিল আব্বাসি। ঊষার হতাশা তখন চরমে। ৪৮ মিনিটে পাকিস্তানী ডিফেন্ডার কাশিফ আলীর স্কুপ ঊষার ২৫ গজ রেখার সামনে আয়ত্বে নিয়ে রিভার্স হিটে দলের চতুর্থ গোল করেন পাকিস্তানী ফরোয়ার্ড শাফকাত রসূল (৪-১)। ৫৬ মিনিটে দলের পঞ্চম পিসি থেকে শাফকাত রসূলের পুশে রুম্মানের স্টপে পঞ্চম গোলটি আদায় করেন তৌসিফ আরশাদ (৫-১)। ২০০৪ ও ২০০৮ সালের পর এবার তৃতীয়বারের মতো ক্লাব কাপের শিরোপা ঘরে তুললো আবাহনী। ম্যাচ শেষে আবাহনীর কোচিং ডিরেক্টর মাহবুব হারুণ বলেন,‘ম্যাচে আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিপক্ষের লম্বা পাস প্রতিরোধ করে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে গোল আদায় করে নেয়া। ছেলেরা লক্ষ্য পূরনে নিজেদে দায়িত্ব সঠিকভাবেই পালন করেছে। রক্ষণভাগ ঊষার আক্রমণগুলো সুন্দরভাবে প্রতিহত করে আক্রমণভাগকে বল যোগান দিয়েছে। ছেলেরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েই মাঠে লড়েছে। যে কারণে গোলের পর গোল পেয়েছে তারা। দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছ।’ তিনি যোগ করেন,‘আমরা এই ট্রফিটা জুম্মন ভাইকে উৎসর্গ করছি।’ অন্যদিকে ঊষার কোচ মামুন উর রশিদের কথা, ‘আবাহনী যোগ্যতর দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ম্যাচে আমাদের কৌশল কাজে লাগেনি। আক্রমন ভাগে যেমন ভুল ছিল, তেমনি রক্ষণভাগও ভুল করেছে। যে কারণে দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনী প্রায় একচেটিয়া খেলেছে এবং গোলের পর গোল আদায় করে নিয়েছে।’
ক্লাব কাপের শিরোপা জিতে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী পেয়েছে ট্রফির সঙ্গে ৭০ হাজার টাকা। রানার্সআপ ঊষাকে দেয়া হয়েছে ট্রফি ও ৩৫ হাজার টাকা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত আবাহনীর রুম্মান সরকার। সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরষ্কার পান চ্যাম্পিয়ন দলের মাকসুদ আলম হাবুল এবং ফেয়ার প্লেÑট্রফি দেয়া হয় সোনালী ব্যাংককে। ফাইনাল খেলায় প্রধান অতিথি থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন বিমান বাহিনী প্রধান ও হকি ফেডারেশনের সভাপতি এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার, বিবিপি, এনডিসি, এসিএসসি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি ও এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদেক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবাহনীর মধুর প্রতিশোধ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ