Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলার বাণিজ্যের স্বর্ণদ্বার

মংলা ইপিজেডে শিগগির চালু হচ্ছে ১৫টি কারখানা

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

সুন্দরবনের কোলে লালিত মংলা বন্দরের কারণে ক্রমেই বাণিজ্যের স্বর্ণদুয়ার উন্মোচিত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশের গতি আবর্তিত হয় এই বন্দরকে কেন্দ্র করে। তাই এ অঞ্চলের বাণিজ্য সম্প্রসারণে মংলা বন্দরের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সামগ্রিক ও সামষ্টিকভাবে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় কেন্দ্র ও রাজস্ব যোগানদাতা মংলা বন্দর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
মংলা ইপিজেডে ১২৮টি কারখানা চালু রয়েছে। এসব কারখানায় কাজ করে কমপক্ষে সাড়ে ৪ হাজার নারী-পুরুষের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। খুব শিগগিরই এখানে আরো ১৫টি কারখানা চালু হচ্ছে। গত ১০ বছরে মংলা ইপিজেডের রফতানি বেড়েছে ১৬ গুণ ও বিনিয়োগ বেড়েছে ১১ গুণ।
এদিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে স্বপ্নের খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের বিনির্মাণ। নদী শাসন ও পাইলিংয়ের পর উঠতে শুরু করেছে পিলার। আর নির্মাণস্থলে স্প্যান বসানোর পর আকৃতি পাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে কেমন হবে, খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের রূপসা রেলসেতুর অবয়ব।
সেতুর পশ্চিমপাড় বটিয়াঘাটা উপজেলার পুটিমারী ও পূর্বপাড় খাড়াবাদ এলাকায় দিন-রাত বিরামহীন চলছে কর্মকান্ড। সেতু এখন স্বপ্নের খোলস থেকে বেরিয়ে রূপ নিয়েছে দৃশ্যমান বাস্তবতায়। কর্মী, শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের যন্ত্রের টুং টাং শব্দে মুখর পুরো এলাকা।
বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়া অঞ্চল (বেপজা) এর মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে ১৯৯৮ সালে ২৮৯ একর জমির ওপর মংলা ইপিজেড গড়ে তোলা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইপিজেড ও বন্দর অচল হয়ে যায়। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ফের ক্ষমতায় আসার পর গত দশ বছরে এই ইপিজেডের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৮ সালে মংলা ইপিজেডে বিনিয়োগ করা হয়েছিল ৪৫ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালে বিনিয়োগ হয়েছে ৫১০ কোটি টাকা। বিগত দশ বছরে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ গুণ। আর ২০০৮ সালে ইপিজেড থেকে রফতানি হয়েছিল ২৯৫ কোটি টাকার পণ্য, সেখানে ২০১৮ সালে পণ্য রফতানি হয়েছে চার হাজার ৭০৫ কোটি টাকার। সেই হিসেবে ১৬ গুণ রফতানি বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, আগে মংলা এলাকার অর্থনীতি ছিল কৃষি (ধান) ও মাছ নির্ভর। কিন্তু বর্তমানে ওয়ার্কাররা টয়োটা গাড়ির হিটিং প্যাড, ভিআইপি লাগেজ ব্যাগ, নর্থ আমেরিকার টাওয়েল, ফ্যাশন উইক, পাটজাত পণ্য, সুপারি পণ্য, মার্বেল পাথর সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত আছেন। এসব পণ্য ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এটা দেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে বলেও মনে করেন তিনি।
মংলা ইপিজেডে কর্মরত এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘আগে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। স্বামীর আয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চালানো যেত না। এখন আমি ইপিজেডে কাজ করি। দশ হাজার টাকা বেতন পাই। আমার এবং স্বামীর দুই জনের আয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া-জামা-কাপড় এবং দৈনন্দিন বাজারের সব খরচ পূরণ করতে পারছি।’
মংলা বন্দর ব্যবহারকারী এইচ এম দুলাল বলেন, ‘ইপিজেডে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ইপিজেডের কারণে মংলা বন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।’
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘মংলা বন্দরের আশেপাশে যাতে শিল্পায়ন হয়, বন্দর যাতে গতিশীল হয়, সেই বিবেচনায় ১৯৯৮ সালে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মংলা ইপিজেড কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু ২০০১ সাল বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইপিজেড ও বন্দর অচল হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আবারও ইপিজেড এবং বন্দর সচল হয়। এখন ৪-৫ হাজার নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে এই ইপিজেডে। এই অঞ্চলের জন্য ইপিজেড অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে এই অঞ্চল আলোকিত হবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইপিজেড

১৫ অক্টোবর, ২০২২
১২ জানুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ