Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্মঘটে অচল ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাট কদর নেই বাংলাদেশি পণ্যের

মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ছাগলনাইয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ফেনীর ছাগলনাইয়ার রাধানগর ইউনিয়নের মোকামিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হাটে ব্যবসায়ীদের অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচির কারণে অচল হয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার সীমান্ত হাটে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা চোরাচালানি বন্ধ ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের একমূখী নীতি বন্ধকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে হাটের বাইরের গেইটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ফলে সীমান্ত হাটে বাংলাদেশের কোন ক্রেতাও প্রবেশ করতে পারেনি।

ভারতীয় ব্যবসায়ীরা হাটে বিক্রির জন্য নির্ধারিত পণ্যের বাইরেও বহু পণ্য বাজারে নিয়ে আসেন।
বাংলাদেশ অংশে কোন কড়াকড়ি না থাকায় জেলা শহরসহ নানা স্থানের ক্রেতারা বিপুল পরিমান ভারতীয় পণ্য পাইকারী ও খুচরা দরে কিনে বাংলাদেশে নিজেদের দোকানে মজুত করে বিক্রি করে। বিষয়গুলি বেশ কিছুদিন থেকে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে প্রতিকার চেয়েছেন। দীর্ঘদিন পরও এসব সমস্যার কোন ধরনের সন্তোষজনক সমাধান না হওয়ায় গত রোববার সীমান্তহাটের ব্যবসায়ীরা ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

সীমান্ত হাটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহজাহান জানান, শেষ পর্যন্ত কোন প্রতিকার না পেয়ে তারা অনির্দিষ্টসময়ের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন এবং গত মঙ্গলবার সীমান্ত হাটে কোন বেচাকেনা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সীমান্ত বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আক্তার উন নেছা শিউলী সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্তের অপর অংশে গত কিছুদিন থেকে সে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যে ভিজিটর আসতো তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সেখানকার সীমান্তরক্ষীদের ভূমিকাও বাংলাদেশী পণ্য ক্রয় করে নেয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় নিস্পত্তির জন্য সম্প্রতি দুই দেশের সীমান্ত বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সমস্যাগুলো তুলে ধরে প্রতিকারও চাওয়া হয়েছে।

ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ছাগলনাইয়া ও ভারতের ত্রিপুরা শ্রীনগর সীমান্ত হাট অনেকটা দখলে ভারতীয় পণ্যের। দুই দেশের পণ্য বিকিকিনির হিসাবে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। রয়েছে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ। দু’দেশের সীমান্তবাসীদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানো ও বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশের মধুগ্রাম ও ভারতের শ্রীনগর সীমান্তে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চালু হয় দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাট। হাটের শুরুতে দু’দেশের আশপাশের পাঁচ কিলোমিটারে বসবাসরত গ্রামবাসীদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বেচাকেনা মূল লক্ষ্য থাকলেও চার বছরের মাথায় এসে মানা হচ্ছে না সেই নীতিমালা। প্রতি মঙ্গলবার বসা এ হাটে দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা গাড়ি হাঁকিয়ে হুমড়ি খেয়ে হাটে এসে ভারতীয় মাল কিনছেন।

অপরদিকে ভারতীয় অংশে কড়াকড়ি থাকায় অনেকটা ক্রেতা শূন্য হাটের বাংলাদেশি পণ্যের অংশ। দু’দেশের বৈধ পণ্যের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং উভয় দেশের জনগণের মধ্যে ভাববিনিময় ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচনা ছিল এ হাটের উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো।
ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাটে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, ভারতীয় পণ্য সেখানে বেশি। নির্দিষ্ট পণ্য তালিকার বাইরের অনেক পণ্যসামগ্রীও বেচা-কেনা হচ্ছে। ফেনী, ছাগলনাইয়া ও বারইয়ারহাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ বাজার থেকে পণ্য আমদানি করেন। দাম কম হওয়ায় বাংলাদেশিরা অনেকটা হুমড়ি খেয়ে ভারতীয় পণ্য কিনছেন দেদারছে।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারে ভারত-বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা আলাদা শেডে ৩০টি করে মোট ৬০টি দোকান রয়েছে। ভারতীয় প্রতিটি দোকানে গড়ে সপ্তাহে প্রতি হাটবারের দিন প্রায় ২ লাখ টাকার মতো বিক্রি হয়, আর বাংলাদেশিদের দোকানে হয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকার মতো। বাংলাদেশি শেডের ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারের শতকরা ৯০ শতাংশ ক্রেতাই বাংলাদেশি। আর ১০ শতাংশ ভারতীয়। এখানকার স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, এ সীমান্ত হাট দিয়ে বৈধ পথে অবৈধ মালামালের কারবার হয়। সীমান্ত হাটে যাওয়ার জন্য টিকিট (প্রবেশ কার্ড) সংগ্রহে কিছুটা সরকারি বাধ্যবাধকতা থাকায় এখানকার এক শ্রেণীর কালোবাজারি ও দালাল ২০ টাকার প্রবেশ কার্ড ক্ষেত্র বিশেষে বাংলাদেশি লোকদের থেকে ১শ’ থেকে ২শ’ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। অনেকেই সিন্ডিকেটর মাধ্যমে বেশি সংখ্যক প্রবেশ কার্ড সংগ্রহ করেছে।

ক্রেতারা জানান, হাটে ভারতীয় অংশে বিক্রি হচ্ছে না কোনো ধরনের খুচরা পণ্য। হরলিক্স, গুঁড়োদুধ, প্যাম্পাসসহ ভারতীয় সব প্রসাধনী কার্টনে বিক্রি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা পণ্য কিনতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কবির আহম্মদ নামে বাংলাদেশি এক বিক্রেতা জানান, বাংলাদেশি বাজারে মাছ, শুঁটকি, মুদি মাল, বেকারি ও প্লাস্টিক পণ্য বিক্রি হলেও ভারত থেকে আসছেন না তেমন কোনো ক্রেতা। হাটে প্রবেশে সেদেশের কড়াকড়ি থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন বাংলাদেশি বিক্রেতারা। ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান সাংবাদিকদের জানান, তারা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছেন। জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতি হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ