Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আ.লীগে একদিকে ফুলেল শুভেচ্ছা অন্যদিকে স্তব্ধতা

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভের পর চারদিকে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার। নির্বাচনের দিন রাত থেকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন দলের নির্বাচিত এমপিরা। এরপর ৭ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ গঠনের পর থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করতে করতে হিমশিম খাচ্ছেন মন্ত্রিপরিষদের নতুন সদস্যরা। বাড়ি থেকে অফিস, সকাল থেকে রাত শুভেচ্ছা গ্রহণ করেই সময় পার করছেন তারা।
একদিকে যেমন আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা আওয়ামী লীগ ঠিক অপরদিকে এমপি মনোনয়ন বঞ্চিত ও মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া নেতাদের চারদিক নিকষ কালো মেঘে অন্ধাকারাচ্ছন্ন; চারদিকের এতো আনন্দ উল্লাসের মাঝে এক ধরণের বিষন্নতা। নৌকার বিশাল জয়েও আনন্দ নেই মনে।
এবার যারা মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন তাদের বেশির ভাগ ছিলেন জাতীয় রাজনীতিতে অপরিচিত। মন্ত্রী বা নতুন মনোনয়নে যারা এমপি হয়েছেন অনেকের বাসায় ছিল না ভীড়। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ভীড়ে ব্যতিব্যস্ত পরিবারের সদস্যরা, এমনকি পাড়া প্রতিবেশীও হচ্ছেন বেশ বিরক্ত। বিভিন্ন উপহার ও ফুল রাখার জায়গা পাচ্ছেন না তারা। পাশের ময়লার ডাস্টবিন থেকেও ছড়াচ্ছে ফুলের সুবাস।
অপর দিকে মন্ত্রিত্ব হারানো ও মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের বাড়ি বা অফিস যেখানে রাতদিন সারাক্ষণ ভীড় লেগেই থাকতো এমন পুরো ফাকা, শুনসান নিরবতা। সকালে দেড়-দু’শ মানুষ দেখে যেসব নেতাদের ঘুম ভাংতো, অফিসে গেলেই নানা বিচার শালিশ আর তদবিরের কারণে খাবার খাওয়ার সময় থাকতো না এখন যেন দিন কাটে না তাদের। সুবিধাভোগীদের ভীড়ে যাদের কাছে যাওয়া ছিল দুষ্কর; এখন এসব নেতাদের বাড়ি বা অফিস দেখলে দেখে মনে হয় এখানে কোন সময় মানুষের আনাগনাই ছিল না। কাছের মানুষগুলো অপরিচিত হয়ে গেছে এসব নেতাদের কাছে। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় কিংবা দলের মনোনয়ন নিশ্চিতের আগে কোথাও গেলে বিমান বা গাড়ি থেকে নামার পর থেকেই স্লোগানে স্লোগানে হাজার হাজার মানুষ যাদের বরণ করতো, সরকারি কর্মকর্তারা লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকতো, মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তাকে নিয়ে আসা হতো বা পৌঁছে দেয়া হতো, এখন আর নেই সেই ভীড়। কারণ নেই মন্ত্রিত্ব অথবা পাননি দলের মনোনয়ন।
গতকাল শুক্রবার এমনই এক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
কয়েক দিন আগেও তাকে ঘিরে নেতাকর্মীদের জটলা লেগেই থাকতো। ঢাকা থেকে সিলেট ফিরলে ভিড় লেগে থাকতো ওসমানী বিমানবন্দরে। ভিআইপি লাউঞ্জে পড়ে যেত হুড়োহুড়ি-ধাক্কাধাক্কি। গলা ফাটানো স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠতো বিমানবন্দর এলাকা। মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তাকে নিয়ে আসা হতো বাসায়।
সেই সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন সিলেটে ফিরলেন তখন তার হুইল চেয়ার ধরার মতোও ছিল না কেউ। সাবেক এপিএস জনিকে নিয়ে একা একাই ওসমানী বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি।
শুক্রবার বেলা একটা ৫০ মিনিটের সময় নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে সিলেট যান তিনি। বিমান থেকে নেমে হুইল চেয়ারে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভিআইপি লাউঞ্জে। জনশূন্য ভিআইপি লাউঞ্জ তখন অনেকটা অপরিচিতই মনে হচ্ছিল মুহিতের কাছে। চিরচেনা পরিচিতমুখগুলো দেখতে না পেয়ে অনেকটা হতাশই মনে হচ্ছিল সাবেক এই অর্থমন্ত্রীকে। এতদিন যাদেরকে ‘কাছের মানুষ’ হিসেবে জানতেন তাদের মুখোশের অন্তরালের চেহারাটা হয়তো তখন ভাসছিল তার মনোচোখে!
মনোনয়ন না পাওয়া বা মন্ত্রিত্ব থেকে ছিটকে পড়া অনেক প্রভাবশালী নেতাই এক রকমের হতাশ, নিরলস সময় কাটাচ্ছেন। বেশি একটা কাজ না থাকলে বাড়ির বাইরে যান না এবং কারো ফোনও ধরেন না। সময় পেলে আড্ডায় পেতে উঠেন যদি মনোনয়ন বঞ্চিত উপর কাউকে সঙ্গী হিসেবে পান। আবার কেউ কেউ মনোনয়ন না পাবার কারণ খুঁজে বের করে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার সময় গুণছেন।
আবার অনেকেই দলের কাজে বেশি সময় দিচ্ছেন। বছরের শেষে দলের সম্মেলনে ভাল পদে যাওয়ার জন্য বা কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকার জন্য চেষ্টা শুরু করেছেন। ভুল ভ্রান্তি দূর করে নতুন করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন আগামীর পথচলার।



 

Show all comments
  • Omar Farooq ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
    আজ ছিল শুক্রবার, মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাপুর্ন একটা দিন। উনি খেলা দেখার জন্য দুপুর দেডটায় জুমার নামাজ ছেডে দিলেন। আমার আফসোস হয় জীবন সায়াহ্নে এসে এখনো আল্লাহ্‌র ভয় মনের ভিতর জাগিলনা? মন্ত্রীত্ব থাকা না থাকা, প্রটোকল থাকা না থাকা সেটা তো ক্ষীন ইস্যু মাত্র।
    Total Reply(0) Reply
  • Ashfia Ayat ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫০ এএম says : 0
    ক্ষমতা চিরদিন থাকে না, আজকের এই পরিণতির জন্য তিনি নিজেই দায়ী কারণ কথায় কথায় মানুষ কে রাবিশ বলতেন, দুর্ব্যবহার করতেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী কে দেখে বর্তমানের মন্ত্রীদের শিক্ষা নেওয়া উচিত কারন তাদের ভবিষ্যত যেন এমন অবস্থা না হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Taher Ahmad Azim ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫০ এএম says : 0
    Itz the pic of from runway ,all of the people not allow their,so take it easy,in out side of airport lotz of People waited for him .
    Total Reply(0) Reply
  • Sabina Yasmin ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫০ এএম says : 0
    রাবিশের পাশে কে থাকবে? ক্ষমতায় ছিল বলে সিলেটের মানুষ তাকে হালকা হুজুর হুজুর করতো।
    Total Reply(0) Reply
  • Harun Chowdhury ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
    সু সময়ে অনেকে বন্ধু বটে হায়,দুঃসময়ে হায় হায় কেউ কারো নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Islam Badol ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 1
    এই সংস্কৃতি তারাই তৈরি করেছেন...হাজার হাজার মামলা, হামলা, গুম, নির্যাতনের পরেও বি এনপির কোন নেতার জনপ্রিয়তা এক চুল ও কমেনি!! বাট এই সেদিন ও তিনি ছিলেন কত চাটুকারের শ্রদ্ধার পাত্র কিন্তু আজ??? উনি অর্থ মন্ত্রী থাকা অবস্থায় যে অপকর্ম গুলা করেছেন সেটা মানুষ কখনো ভুলবে না!!!! তাকে মানুষ চরম ঘৃণা করে!!!!
    Total Reply(0) Reply
  • C.M. Ahad Juwel ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
    উনিতো জননেতা ছিলেন না,মাননীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন!!সুবিধাভোগীদের মন্ত্রী ছিলেন,এখনও থাকবেন তাদের হয়ে,সেই প্রত্যাশা। আমরা জনগনের মন্ত্রী চাই।যারা সাধারন মানুষের কমপক্ষে কথা শুনে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nayem Nil ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
    এটাই বাংলাদেশের রাজনীতি.... যতদিন পাওয়ার আছে,, আপনি মাল আছেন.... আর পাওয়ার নাই আপনার মালও নাই..... কারো... দাম দিবে না...
    Total Reply(0) Reply
  • Diponkor Saha ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
    সময় অসময় দেশে সম্পদ আত্তসাত করা ও চুরি করার সহযোগিতা করা এখন কোথায়?? প্রয়জন ফুরিয়ে গেছে। এভাবে সভাইর সময় ফুরিয়ে যাবে। থাকবেনা কেহ পাসে।
    Total Reply(0) Reply
  • মুঃ জহিরুল ইসলাম ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
    জবরদস্তি সম্মান হয়তো সাময়িক পাওয়া যায় কিন্তু চিরস্থায়ী নয়। এটাই তার প্রমান। মানুষের ঘৃনা আর ভালোবাসার মধ্যে যে পার্থক্য তা আওয়ামীলীগের কেউ উপলব্ধি করছেন না।
    Total Reply(0) Reply
  • নিতর প্রাণ ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    এখান থেকে আমাদেরকে অনেক কিছু শিখার আছে?এটাকেই বলে সময় আর চেয়ারের দাপট, পাছায় চেয়ার নাই কোন মূল্যও নাই। এইবার সরকার যদি বিএনপি গঠন করতো তাহলে তো তাকে খোঁজেই পাওয়া যেতনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sumon ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    অবাক হওয়াৱ কিছু নেই,সুসময়ে বন্ধু বটে অনেকেই হয় অসময়ে হায় হায় কেহ কারও নয় ৷ সুতরাং শিখতে পারলে শিখ না শিখলে ভাগো,,,,,,,,
    Total Reply(0) Reply
  • Anisul Hoque ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    খুব দুঃখের সাথে বলছি, বর্তমান সরকার এর থেকে শিক্ষা না নিলে ক্ষমতা হারানোর পর, হাসপাতালে নেয়ার লোক ও খুঁজে পাওয়া যাবে না!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Suez Miah ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
    সপ্তাহ দুয়েক আগেও যার হূইলচেয়ারের হাতল ধরার জন্য স্বার্থাণ্বেষীদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলতো, ক্ষমতা হাতে না থাকায় আজ তার সেই হূইলচেয়ার পাপিষ্ঠদের স্পর্শ মুক্ত। কি বিচিত্রই না আমাদের এই বাংলাদেশ।
    Total Reply(0) Reply
  • Ershadul Bari ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
    So it’s a lesson for all MP & ministers.... No need wait as like as one era or 12 years , very near everybody can see the result of ....... Be good, do good for all civilians,not for specific persons only
    Total Reply(0) Reply
  • Nafis Abdullah ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
    টিস্যু তাই ইউজ করে ফেলে দিয়েছে তাতে সমস্যা কি?? এটাই দুনিয়াবী/জাগতিক জিনিসের চিরাচরিত নিয়ম। এটা আপনি ইসলামের আলেম বা স্কলার পাবেন না যে মারা যাওয়ার হাজার বছর পরেও শ্রদ্ধাভরে সম্মান ও স্মরণ করা হবে বরং দুনিয়ার উপার্জকদের এভাবেই আল্লাহ ছুড়ে ফেলে দেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Shofikur Rahman Shamim ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
    সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী সাহেব বাংলা একটা প্রবাদ আছে সময় যখন খারাপ হয় তখন ছেলে ও শালা বলে আর সময় যখন ভালো হয় তখন শালা বাবা বাবা বলে এটাই নিয়ম দুঃখ পাওয়ার কিছুই নেই
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Ahmed ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
    All are seasonal birds. Same thing will happen to hasina too.
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Rahaman ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
    Stupid people! He is no more active in politics! Even Bill clinton i have seen in london is alone one his own with own security! Mr Muhit is retired now he is living his private life!! It was his private trip of personal interest! So party people should come!
    Total Reply(0) Reply
  • Shahnoor Choudhury ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ৮:১৫ এএম says : 0
    কিছু বলবোনা বলার সাহস ও বয়স আমার পার হয়েছে অনেক কিছু দেখে, তাই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি আর মনে মনে ভাবি কি দেখার ছিলো আর কি দেখি । আমি একজন জার্মান প্রবাসী, সিলেটে আমার এক জমি ভুমি দখল বাজের কারনে বিক্রি করতে পারতেছি না তাই সুশ্বাসন আমি কি করে বলি ? Sorry !
    Total Reply(0) Reply
  • রাশেদ খান ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ৯:৫৩ এএম says : 0
    ক্ষমতা হারলে ওদের সবাই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ