Inqilab Logo

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুমিল্লার গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ভোগান্তি

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল কুমিল্লা থেকে : | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

কুমিল্লার আঞ্চলিক সড়কগুলো যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে চলাচলকারীদের প্রতিদিন পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। কুমিল্লা মহানগর ও জেলার ৮টি পৌর এলাকাসহ ১৭টি উপজেলা এলাকার এক হাজার কিলোমিটারের অধিক সড়কে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। কোনো কোনো সড়কে স্বাভাবিক চলাচলও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এসব সড়কের কোনোটি সংস্কারের এক বছরের মধ্যে ফের বেহাল হয়ে পড়েছে, আবার কোনটি এক যুগেরও অধিক সময় ধরে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে না। এতে গর্ত আর খানা-খন্দে ভরা সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কৃষিজীবী-শ্রমজীবী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লাখো মানুষ। সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, জেলার এসব সড়কে যানবাহন উল্টে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তারপরও সড়কগুলো সংস্কারে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কার্পেটিং ও খোয়া উঠে গিয়ে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) অধীন জেলায় ১০ হাজার ২শ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার পাকা সড়কের সাড়ে ৫শ কিলোমিটারের অবস্থা বেহাল। জেলার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ স্থানের সড়কগুলোতে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। কাঁচা-পাকা মিলিয়ে জেলার এক হাজার কিলোমিটারের অধিক সড়ক ভাঙাচোরা। বেহাল এসব সড়কের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কও রয়েছে।
সূত্র জানায়, এসব সড়কে দীর্ঘদিন ধরে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়ে আছে। দিন দিন গর্তের সৃষ্টি হয়ে এর গভীরতা বাড়ছে। জেলা সদর ছাড়াও সদর দক্ষিণ, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, বরুড়া, বুড়িচং, চান্দিনা, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি, হোমনা, মেঘনা, তিতাসসহ বিভিন্ন উপজেলা সদর, পৌর এলাকা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমপক্ষে এক হাজার কিলোমিটারের অধিক সড়ক সংস্কারের অভাবে ইট-সুরকি উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে অনেকটা নাজুক হয়ে পড়েছে। এদিকে কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচের সড়কটির বেহাল দশার মধ্যে পড়ে রয়েছে। এতে শাসনগাছা থেকে ধর্মপুর সড়কটি মূল সড়কে রূপ নিয়েছে এবং এতে এ সড়কটিতে দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। আশপাশের বাসাবাড়ির পানি সড়কের গর্তে জমাট বেধে যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। ওই সড়ক থেকে সাতরা সড়ক এবং কৃষি অফিসের পাশের সড়কটিও বেহাল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর থেকে শহরে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুর্গাপুর এলাকায় রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনেকটা অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ধর্মপুর এলাকার বাসিন্দা আমীর হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শাসনগাছা-ধর্মপুর সড়কটির অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে নাজুক হয়ে আছে, শহরতলীর এ সড়কে স্বাভাবিক চলাচলও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দিনে-রাতে শত শত ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে, জরুরি ভিত্তিতে সড়কের সংস্কার প্রয়োজন। জেলার চান্দিনায় পল্লী সড়কগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় পল্লী সড়কের প্রায় ৭০ ভাগই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের গ্রাম-গঞ্জের সড়কগুলোর বেহাল দশা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সড়ক ও রাস্তা ঘাটের কার্পেটেং উঠে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন ও সাধারণ মানুষ চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে করে এলাকার সড়কগুলো বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। কোন কোন সড়কে যানবাহনের চালকেরা নিজেদের অর্থায়ানে সড়কের গর্তে শুরকি, কংকিট ও বালু ফেলে গর্ত ভরাট করে কিছুটা চলাচলের ব্যবস্থা করছে।
এছাড়া ৮টি ইউনিয়নের এ বিশাল জনপদে গ্রামীণ জনপদের দুই শত বছরের ও পুরনো বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক স্কুল কলেজে পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রী চলাচল করলেও এখনো ওই সমস্ত রাস্তাগুলো কাঁচা রাস্তা হিসেবেই রয়ে গেছে। সড়কগুলো বেশির ভাগ ভাঙ্গা ও মাটি ক্ষয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণ মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, টাকার অভাবে রাস্তাগুলো পুরাপুরি সংস্কার করা যায় না। আংশিক সংস্কার করা হয়ে থাকে। ফলে রাস্তাগুলো প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে ভেঙ্গেচুরে গর্তের সৃষ্টি হয়। কোন কোন রাস্তাতে হাঁটু সমান গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাভাবে মেরামত বা সংস্কার করা যাচ্ছে না। কাঁচা সড়কগুলোর অবস্থা আরো করুণ। বর্ষাকালে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
কুমিল্লা দক্ষিণ পশ্চিমাংশের চাঁদপুরের উত্তর-পূর্বাংশের চান্দিনা, বরুড়া, কচুয়া উপজেলার বিশাল জনগোষ্ঠির চলাচলের গুরুত্বপূর্র্ণ যোগাযোগ সড়ক মাধাইয়া, নবাবপুর, রহিমানগর সড়কটি। প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা ও জেলা শহর কুমিল্লার পথে যাতায়াত করে বাস, ট্রাকসহ অসংখ্য যানবাহন। যদিও রাস্তাটি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ তথাপি থেমে থাকেনি তিনটি উপজেলার ৬ লক্ষাধিক জনসাধারণের জীবন যাত্রার প্রবাহ। নিত্যদিনের প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ ছুটে চলেছে এমনি ঝুঁকিপূর্ণ পিচঢালা পথটি বেয়ে। মহিচাইল শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ মো. আতিকুর রহমান জানান, আমি প্রতিদিন কুমিল্লা থেকে আসা যাওয়া করি, আমার কলেজের স্টাফ, ব্যাংক কর্মকর্তা, হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী এই রাস্তায় প্রতিদিন যাতায়াত করে। দুইটি বাস যখন ক্রস করে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে এমনিভাবে কাত হয়ে মনে হয় যেন খালে উল্টে পড়ছে।
এলজিইডি সূত্র জানায় চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পাওয়ায়, সড়কগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না। আর যে পরিমাণ বরাদ্দ মেলছে তা দিয়ে এ বিশাল ঘাটতি রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয় বলে এলজিইডি মনে করে। যে কারণে সরকার প্রত্যেকটি উন্নয়ন প্রকল্পের দলিলে প্রকল্পের ব্যয়ের কিছু অংশ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ রাখবে এলজিইডির জন্য। তবে যেসব গ্রামে সড়কগুলো এলজিইডি রক্ষণাবেক্ষণ করবে না সেগুলো জেলা পরিষদ বা উপজেলা পরিষদ তাদের উন্নয়নে বাজেটের ২৫ শতাংশ অর্থ নির্দিষ্ট করে রাখবে। এর জন্য অগ্রাধিকার সড়কের তালিকা তৈরি করা হবে এলজিইডি সূত্র জানায়।
এলজিইডি-কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন কান্তি পাল জানান, গত বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে সড়কের এই বেহাল দশা হয়েছে। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। আরো কিছু প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পের অনুমোদন পেলে পর্যায়ক্রমে সংস্কার কাজ করা হবে এবং সড়কগুলো সহসা সংস্কার করা গেলে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ