Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীতে যানজট

ওসমান গনি | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ঢাকায় যানজট একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন যত যায় এই শহরের যানজট যেন ততই বৃদ্ধি পায়। যানজট সৃষ্টি হওয়ার পেছনে আমাদের অসচেতনতাটাই সবচেয়ে বেশি দায়ী। যানজটের কারণে বিশ্বে অচল শীর্ষ ১০টি নগরীর মধ্যে রাজধানী ঢাকা অনেক আগেই ঠাঁই করে নিয়েছে। সড়কের তুলনায় রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট নগরবাসীর জীবনকে বিভীষিকাময় করে তুলছে। সড়কে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের যে সংখ্যক গাড়ি চলাচল করে তার মধ্যে ছোট গাড়ির সংখ্যা বেশি। যানজট থেকে রেহাই পেতে রাজধানীতে উড়াল সড়ক, উড়াল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তার পরও রেহাই মেলেনি। বুয়েটের বেশ কয়েকজন অধ্যাপক এবং বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর গাড়ির গড় গতি গত ১২ বছরে ২১ কিলোমিটার থেকে নেমে এসেছে পাঁচ কিলোমিটারে, যেন হেঁটে চলছে রাজধানী। অতিরিক্ত গাড়ির চাপে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকার একমাত্র কারণ হলো গাড়ি বেহিসাবে বাড়ছে। ফলে সব ধরনের পদক্ষেপ ব্যর্থ হচ্ছে। গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ না করলে লালবাতি জ্বলতে থাকলেও গাড়ি চলে। নানা রঙের বাতি জ্বললেও ট্রাফিক পুলিশকে হাতের ইশারায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বয়ংক্রিয় বিভিন্ন পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেও সুফল মিলছে না। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা জানান, আটটি লেনের সড়ক আছে বিভিন্ন স্থানে। বিজয় সরণি, আগারগাঁও, সোনারগাঁওসহ বিভিন্ন মোড়ে মন্ত্রীদেরও আটকে থাকতে হয়। দিন কয়েক আগে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলককে হেঁটে রাস্তা অতিক্রম করতে দেখা গেছে। তার আগে মোটরসাইকেলে চড়ে নতুন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে কর্মস্থলে যান তিনি।
সাধারণ মানুষ থেকে মন্ত্রী, সবাইকে পড়তে হচ্ছে যানজটের এই দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, রাজধানীতে ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাড়ির নিবন্ধন হয়েছে ২০১৮ সালে। দৈনিক গড়ে ৪৬৯টি। গত বছরের হিসাবে রাজধানীতে প্রতিদিন ৩৭১টি নতুন গাড়ি নেমেছে। বর্তমানে তা আরো বেড়েছে। বিআরটিএর পরিসংখ্যান মতে, ২০১২ ও ২০১৩ সাল ছাড়া প্রতিবছরই বেড়েছে গাড়ির নিবন্ধন। রাজধানীতে ২০১০ সাল পর্যন্ত নিবন্ধিত গাড়ি ছিল পাঁচ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭টি। পরে ২০১১ সালে নিবন্ধন হয়েছে ৭২ হাজার ৯৪৭টি গাড়ি। ২০১২ সালে ৫৯ হাজার ৫৭৩, ২০১৩ সালে ৫৪ হাজার ৪৯২, ২০১৪ সালে ৭৩ হাজার ৫১, ২০১৫ সালে ৯৫ হাজার ৭৪৩, ২০১৬ সালে এক লাখ ১০ হাজার ৫২০ এবং ২০১৭ সালে এক লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৮ ও ২০১৮ সালে এক লাখ ৭১ হাজার ৩৪৯টি গাড়ির নিবন্ধন হয়।
বর্তমানে রাজধানীতে নিবন্ধিত গাড়ি রয়েছে ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৫০০টি। গত আট বছরে রাজধানীতে গাড়ি নিবন্ধন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সে তুলনায় বাড়েনি গণপরিবহন বাস ও মিনিবাস। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী রাজধানীতে সর্বোচ্চ দুই লাখ ১৬ হাজার গাড়ি চলাচল করার কথা। অথচ সেখানে নিবন্ধন রয়েছে সাতগুণ বেশি গাড়ি। সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার সুপারিশগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন না হলে রাজধানীতে ২০৩৫ সালে যানজট বেড়ে দ্বিগুণ হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। রাজধানীতে বাস চলাচলের জন্য ১০ থেকে ১২ শতাংশ জায়গা থাকার কথা থাকলেও তা নেই। রয়েছে মাত্র আড়াই শতাংশ। আর পূর্ব ও পশ্চিমে সংযোগ সড়ক বেড়েছে কম। পূর্বাঞ্চলে সড়ক স¤প্রসারণ করা হয়নি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার ও কেরানীগঞ্জ ঢাকা মেগা সিটির অন্তর্ভুক্ত। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আয়তন ১২৯ বর্গকিলোমিটার থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭০ বর্গকিলোমিটার। কুড়িল ফ্লাইওভার, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার, বনানী ওভারপাস, জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্পের অধীন পূর্ব-পশ্চিমে কিছু সড়ক বেড়েছে। সাড়ে আট বছরের ব্যবধানে সরকার আলাদা ছয় প্রকল্পের অধীনে রাজধানীতে ২৯ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে। কুড়িল, মালিবাগ, বনানী, তেজগাঁও, মিরপুরের মাটিকাটাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের ওপর দিয়ে এগুলো করতে হয়েছে। তার পরও গাড়ির চাপ সামাল দিতে পারছে না সড়কগুলো।
রাজধানীর যানজট নিরসনে সরাসরি জড়িত ১০টি সংস্থা। পরোক্ষসহ বিভিন্নভাবে জড়িত ৩২টি সংস্থা। কেইস নামে একটি প্রকল্পের অধীনে ঢাকায় ৮৮টি স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল চালু করা হয়েছিল। এর মধ্যে নষ্ট হয়েছে বেশির ভাগ। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। পিক আওয়ারে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে সোনারগাঁও-বিজয় সরণি অংশে। মেট্রো রেল প্রকল্পের জন্য মিরপুরে ও সোনারগাঁও থেকে মতিঝিলের বিভিন্ন অংশে রাস্তার মাঝামাঝি ১১ মিটার জায়গা সীমাবেষ্টিত করা হয়েছে। এসব কারণেও গাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানীতে যানজট
আরও পড়ুন