Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্ব ইজতেমা ফেব্রুয়ারিতে

দিল্লির সাদ বাদ, দু’পক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

অবশেষে তাবলীগ জামাতের দু’পক্ষের দ্ব›েদ্বর অবসান হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনে মাওলানা জুবায়ের আহমেদ ও দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভীর অনুসারী দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে তাবলীগের বিবদমান দু’গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের এ সব কথা জানান। বৈঠকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন তাবলীগ জামাত দুটি পক্ষ হয়ে গেছে। মাওলানা ওয়াসেফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি, আরেকটি মাওলানা জুবায়েরের নেতৃত্বে। দু’পক্ষের সবাই এসেছিলেন। দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী মাসের (ফেব্রুয়ারি) যেকোনো সময় টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। দু’পক্ষই সেই ইজতেমাটা করবে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর অফিসে আরেকটি সভা হবে। সেখানে কবে, কখন, কিভাবে ইজতেমা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে উভয় পক্ষের দু’জন সবসময় বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা যৌথভাবে বিশ্ব ইজতেমার নেতৃত্ব দেবেন।
যাকে নিয়ে বিরোধ, সেই দিল্লি মারকাজের প্রধান মাওলানা সাদ কান্ধলভী ইজতেমায় আসবেন কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি এই ইজতেমায় আসবেন না, সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইজতেমায় নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবছর আমরা কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকি। সম্পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী করে থাকে, প্রয়োজন বিশেষে সেনাবাহিনীও সহযোগিতা করে থাকে, সেটা থাকবে। বিশ্ব ইজতেমাটা যাতে সুন্দরভাবে হয় প্রতিবারের মতো সে জন্য নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব নেবে।
তাবলীগ জামাতের দিল্লির আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্য নিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের তাবলীগ জামাত। আলেমরা সাদবিরোধী ও সাদপন্থী দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এক পক্ষে রয়েছেন সাদ কান্ধলভীপন্থী বাংলাদেশে তাবলীগের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসেফুল ইসলাম। অপর পক্ষে রয়েছেন মাওলানা সাদবিরোধী কওমিপন্থী শূূরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের আহমেদ। এ বিভক্তি চরম রূপ ধারণ করে গত বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার সময় মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আসার পর। বিরোধীদের বাধার মুখে ইজতেমায় অংশ না নিয়েই মাওলানা সাদকে ওই সময় বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছিল।
গত ১ ডিসেম্বর ইজতেমা মাঠে দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে বিশ্বের মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় সম্মেলন ‘বিশ্ব ইজতেমা’র আয়োজনও করে আসছিল তাবলীগ জামাত। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে অঞ্চলভেদে দুই পর্বে এটি হয়। কিন্তু এবার দু’পক্ষ চলতি মাসে আলাদাভাবে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করে। নির্বাচনের আগে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে সভা করে ইজতেমা স্থগিত করে। সরকারের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, নির্বাচন শেষে দু’পক্ষের সঙ্গে বসে অভিন্ন ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
তাবলীগের দুই পক্ষের দ্ব›েদ্বর বিষয়টি ইঙ্গিত করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি এতটাই বিতর্কিত হয়ে গেছে; আমরা এখন কিছু না বললে এটা পরিষ্কার হচ্ছে না। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি হাইকোর্টে রিট পিটিশন পর্যন্ত গেছে। সেখানে কথাবার্তাগুলো ভালো আসেনি। যেটার জন্য আমাদের দেশ, আমাদের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও টঙ্গীর বিশ্ববিখ্যাত ইজতেমার গায়ে একটু কলঙ্ক লাগতেছে। এটা নিরসনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বসেছি। তিনি আরো বলেন, তবে একটা জিনিস আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, এতদিন এই দু’পক্ষ কিন্তু একসঙ্গে বসেনি। এখানে আসছে, আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে আলাদা আলাদাভাবে। এবার আমরা চিন্তা করছিলাম দু’পক্ষকেই এক জায়গায় বসতে হবে। আজ দু’পক্ষের সবাই একত্রিতভাবে সুন্দরভাবে বসছিলাম।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো, ঐক্যবদ্ধভাবে একটাই ইজতেমা হবে, দুটি হবে না। সারাদেশের গোলমাল যেগুলো হচ্ছে, এটা কাম্য নয়। আজকে সিদ্ধান্ত ফাইনাল হয়ে গেছে- ইজতেমা দুই গ্রুপে হবে না। সবাই মিলে একসঙ্গে হবে। এক গ্রুপের মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলাম ও আরেক গ্রুপের মাওলানা জুবায়েরকে আমরা ওই দায়িত্ব দিয়েছি।
এক হওয়ার জন্য তারা কোনো শর্ত দিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, যে সব শর্ত দিয়েছেন মেনে নিয়েছি। সেভাবেই আগামীকাল বৈঠক হবে।
তারা কী শর্ত দিয়েছেন- এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, শর্ত দরকার নেই। ওনারা একসঙ্গে করবেন, এটা হলো শর্ত। যেকোনো মতাদর্শ যাই থাক, এবার একবারে ইজতেমা হবে; এর মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই।
প্রতিনিধি দলের দেওবন্দে যাওয়ার বিষয়টি এখন আর থাকল কি না- জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেওবন্দে যাওয়া না যাওয়ার শর্ত আর নেই। তবে ভবিষ্যতে যাতে স্থায়ী সমাধান করা যায় এ ব্যাপারে যখন যেখানে গেলে ভালো হয় সেই প্রক্রিয়া চালু থাকবে।
মামলা প্রত্যাহার করা হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কালকে (বৃহস্পতিবার) আমরা আলোচনা করব। বৈঠকে আলাপ করিনি।
দুই পক্ষকে নিয়ে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরব্বি মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মধ্যে তাবলিগের সুরা সদস্য ওয়াসেফুল ইসলাম, দেওবন্দপন্থীদের মধ্যে মাওলানা জুবায়ের আহমেদ, শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। আড়াই ঘণ্টা ধরে ওই বৈঠক চলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্ব ইজতেমা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ